আবারও চিনির দাম বৃদ্ধি-চিনি শিল্পের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হোক

চাল ও আটার পর খাদ্যপণ্যের মধ্যে চিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যসামগ্রী। এটি আবালবৃদ্ধ সবারই একান্ত প্রয়োজন। শিশুখাদ্যের বেশির ভাগই চিনিনির্ভর। আর এ কারণে চিনির চাহিদা সারা বছর থাকলেও উৎসবের সময় কিছুটা বেড়ে যায়। তখন সংকট হলে চিনি সংবাদ শিরোনাম হয়।


তাই এর বাণিজ্যিক কদরও অন্য পণ্যের চেয়ে বেশি। চিনি নিয়ে তাই বাজারে ছিনিমিনি খেলার খবর প্রায়ই পত্রিকার পাতায় দেখা যায়। সরকার চিনির দাম বাড়ায়-কমায়। গত এক বছরে চিনির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ-পাঁচবার। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) কী কারণে সারা বছর চিনির দাম বাড়ানো-কমানোর কাজ করে থাকে তা বোধগম্য নয়। পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, একটি সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যেই এবারের মূল্যবৃদ্ধি। ব্যবসায়ীরা সরাসরি মুনাফা লোটার মাঠে দৃশ্যমান না থাকলেও সরকারি সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়ে থাকেন না।
গত মঙ্গলবার বিএসএফআইসি আমদানীকৃত চিনির মূল্য ৪১ টাকা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে উৎপাদিত চিনির মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা গতকাল বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। রোজার পর থেকে চিনির বাজার স্থিতিশীল রয়েছে বলে কিছুটা স্বস্তিতে আছে ক্রেতা সাধারণ। মূল্যবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্তে সে স্বস্তি আর থাকছে না। মুনাফাখোর সিন্ডিকেটকে সুযোগ করে দিতে গিয়ে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর প্রতিবাদ করতে পারে, অস্বীকার করতে পারে। কিন্তু কী ব্যাখ্যা আছে তাদের কাছে এক বছরের মধ্যে বারবার দাম পরিবর্তনের? মিল গেটে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজি চিনি ৬০ টাকা, ৩ নভেম্বর ৫৫ টাকা, চলতি বছরের শবেবরাতের আগে করেছে ৫০ টাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর আবার দাম ধার্য করা হয় ৪৫ টাকা। প্রতিবার বাজারমূল্যের চেয়ে মিল গেটের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি ধরা হয়েছে।
দেশের চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত চিনিতে মোট চাহিদার ৮ শতাংশ পূরণ হয়। বাকি ৯২ শতাংশ চিনিই আমদানীকৃত। তাহলে ওই ৮ শতাংশের দাম বারবার বাড়ানো-কমানোর মূল লক্ষ্যই থাকে বাকি ৯২ শতাংশ চিনির মূল্য বৃদ্ধি করে লাখ লাখ টন চিনির মজুদদারদের মুনাফার হার বাড়িয়ে দেওয়া। দেশে বার্ষিক চিনির চাহিদা ১৪ লাখ টনের কাছাকাছি। দেশজ চিনি উৎপাদিত হয় মাত্র দুই লাখ টন, তাতেও ১৫টি চিনিকলের লোকসানের বোঝা এখন বহন সহনীয় নয়। গত আগস্টে গুদামে ২০ হাজার টন চিনি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিএসএফআইসির ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। গুদামজাত আরো ৩২ হাজার টন চিনি গলে গেছে। আমদানীকৃত চিনির গুদাম ভাড়া মাসে ৮৫ লাখ টাকা। চিনি আমদানি ও উৎপাদনে ব্যাংক থেকে নেওয়া হয় ৬০০ কোটি টাকা। এতে প্রতি মাসে সুদ গুনতে হয় ২৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এই যে লোকসান তারও ভার বহন করছে এ দেশের জনগণ। আর মূল্যবৃদ্ধির সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা জনগণের পকেট কাটছেন।
আমরা আশা করব, শিল্প মন্ত্রণালয় বিএসএফআইসির সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করে লোকসান ও অপচয় বন্ধের মাধ্যমে চিনি শিল্পের উন্নয়নে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে। জনগণের ন্যায্য মূল্যে চিনি প্রাপ্তি নিশ্চিত করবে।

No comments

Powered by Blogger.