শান্তিকামী মানুষের স্বস্তি by জাহিদুল ইসলাম সরকার

অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত বারাক ওবামাই হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ওবামাকে স্বাগতম। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে নজর রাখছিলেন বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের কোটি কোটি মানুষ। পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল সারাবিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ দেশটির রাষ্ট্র পরিচালনা তথা পররাষ্ট্র বিষয়ক যে কোনো নীতি বা সিদ্ধান্ত বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকায় প্রভাব রাখে।


২০০৮ সালের পরিবর্তনের ঝড় তোলা ওবামার পুনর্নির্বাচিত হওয়া এ বছর বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ সর্বশেষ জরিপেও ওবামার প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রমনি জনসমর্থনে খুব কম ব্যবধানে পাশাপাশি ছিল। কিন্তু শেষ হাসি হাসলেন ওবামাই। ওবামা প্রথম মেয়াদে করা অঙ্গীকার অনুযায়ী অনেক পরিবর্তন আনলেও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছে পর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু ভোটাররা দেখেছেন, ওবামার চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প নেই। হয়তো ওবামা মার্কিন অর্থনীতিকে খুব শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেননি; কিন্তু তার দূরদর্শী নীতি মহামন্দার মহাবিপর্যয় থেকে আমেরিকাকে রক্ষা করেছে। গত অক্টোবরে মাত্র এক মাসে এক লাখ একাত্তর হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে শ্রমিকদের মধ্যে আশা জাগিয়েছেন ওবামা।
ওবামার বিজয়ে সবচেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে সারাবিশ্বের শান্তিকামী মানুষ। তার পূর্বের প্রেসিডেন্ট বুশ ও তার সহযোগী রামসফেল্ড-রাইস চক্র বিশ্বটাকে একটা যুদ্ধ আর অশান্তির উনুনে পরিণত করেছিল। ওবামার ক্ষমতাকালে মার্কিন নীতির খুব বেশি পরিবর্তন না হলেও বুশের শুরু করা ইরাক যুদ্ধের সমাপ্তি করেছেন ওবামা। যুদ্ধবাজ বুশের কাউবয় ডিপ্লোমেসির বদলে আলোচনা ও কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে ওবামা প্রশাসন। বুশ যেমন তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ক্রসেডের ঘোষণা দিয়ে দুটি দেশ দখল করে নিয়েছিল, সেখানে ওবামা তার বহুল আলোচিত কায়রো ঘোষণার মাধ্যমে সভ্যতার সংলাপের সূচনা করে শান্তির দূত হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন। শান্তিতে নোবেলের মুকুটও অর্জন করেছেন সংলাপ ও কূটনৈতিক সমাধানকে অগ্রাধিকার দানকারী ওবামা।
ওবামা ইরানকে পারমাণবিক শক্তি অর্জনে বাধা দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেও সে ইরানে সামরিক আগ্রাসনের চেয়ে কূটনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন। যেখানে ইসরায়েলের পছন্দের প্রার্থী মিট রমনি পরোক্ষভাবে ইরান আক্রমণ করে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের ফ্রন্ট খুলতে আগ্রহী ছিলেন। সত্যিকার অর্থে ভোটাররা রিপাবলিকান দলের রক্ষণশীল প্রার্থী রমনির মাঝে যুদ্ধবাজ বুশের ছায়া দেখেছেন। তাই শান্তিকামী মার্কিনিরা ওবামাকেই তাদের রায় দিয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি কমিউনিটিতেও ওবামাকে নিয়েই বেশি উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। কারণ ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের অজুহাতে রমনি যেখানে অবৈধ অভিবাসীদের আপদ মনে করতেন, ওবামা সেখানে তরুণ অভিবাসীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। তাই বারাক ওবামার বিজয়ে আনন্দের ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যেও। হার্ভার্ড পড়ুয়া শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও সম্মোহন সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদ বারাক ওবামা তার ভারসাম্যপূর্ণ নীতির মাধ্যমে বিশ্বকে আরও নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ করবে এটাই বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের কামনা।
জাহিদুল ইসলাম সরকার : শিক্ষার্থী
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.