এ নির্বাচন একটি মডেল by বেলাল হোসাইন রাহাত

বহুল আলোচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সারাবিশ্ব তাকিয়ে ছিল এ নির্বাচনের দিকে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করেছিলেন বিশ্বের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। শেষ পর্যন্ত অনেক ব্যবধানেই দ্বিতীয় বারের মতো জয়ী হলেন বারাক হোসেন ওবামা।


নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তারা। জনগণের কাছ তুলে ধরেন_ কে ক্ষমতায় এলে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবেন। দর্শক-শ্রোতারাও সেই যুক্তিতর্ক দেখে কাকে নির্বাচিত করবেন, সে ব্যাপারে মনস্থির করার সুযোগ পান। তারা দুই প্রার্থীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে শেষ পর্যন্ত আবারও চার বছরের জন্য ওবামাকেই বেছে নিলেন। আমরা জানি, বিশ্বের অন্যান্য নির্বাচন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ভিন্ন প্রকৃতির। এ নির্বাচন সারাবিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ মানুষের কাছে মডেলস্বরূপ। আমরা দেখেছি, নির্বাচনের আগে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যুক্তি উপস্থাপন করলেও নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর নিজের হারকে মেনে জয়ী প্রার্থীকে বিজিত প্রার্থী কীভাবে অভিনন্দন জানান! আমাদের এখানে বিজিত প্রার্থী বা দলের সূক্ষ্ম কারচুপিসহ অভিযোগের অন্ত থাকে না। তাদের মধ্যে কথাবার্তাই নেই যেখানে; সেখানে বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানানোর কথা কী করে চিন্তা করবেন! যে কোনো দেশের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বা সরকারি দলের প্রার্থীকে ঘায়েল করার জন্য কয়েকটি ইস্যু থাকে। তেমনি এ নির্বাচনেও তেমন ঘটেছিল। নির্বাচনকে ঘিরে ওই দেশের প্রধান যে ইস্যুগুলো ছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অচলাবস্থা, বিশাল বেকারত্ব, রেকর্ড অতিক্রম করা ঋণ ও সরকারের অনধিকার চর্চায় অচলপ্রায় ব্যক্তিমালিকানাধীন বাণিজ্যিক খাত। এসব ইস্যুতে দুই প্রার্থীর অবস্থান কিন্তু এক নয়। ওবামার বিরুদ্ধে রিপাবলিকান শিবিরের বড় অভিযোগ ছিল, তিনি গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতা দিতে পারেননি। বেকারত্ব কমাতে পারেননি। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে। এটা সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি গত চার বছরে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন গরিব। সেখানকার এক জরিপে দেখা যায়, একটি কাজের জন্য নূ্যনতম চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আরও খারাপ খবর হচ্ছে, ৪৭ দশমিক ৮ ভাগ পরিবার সরকারি খাদ্য সাহায্য বা ফুড স্টাম্পের ওপর নির্ভরশীল। এসব পরিবার কর্মজীবী। কিন্তু এদের আয় যথেষ্ট নয়। তবে এসব কার্য সমাধা করার জন্য আরেকবার ক্ষমতায় আসার পক্ষে যুুক্তি দেখান ওবামা। তার প্রত্যাশা অনুযায়ী তার পক্ষে দেশের মানুষ সাড়া দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়_ কীভাবে তিনি এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেন। তিনি অবশ্য অভিমত ব্যক্ত করেছেন, দেশের জনগণ যা চায়, তা-ই হবে। স্যান্ডি আঘাত হানার পর তিনি তার প্রচার চালানো বন্ধ করে স্যান্ডিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন, যা সবার নজর কেড়েছে। আমাদের সামনে তার কিছু বাস্তব উদাহরণও আছে। ২০০৯ সালে কায়রো ভাষণে তিনি মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে নতুন এক সম্পর্ক গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, যা অনেকটা সম্ভব হয়েছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। কিন্তু জঙ্গিবাদ উৎখাত করতে গিয়ে কোথাও কোথাও জঙ্গিবাদের জন্ম হয়েছে। তার এই বিজয়ে আমেরিকার জনগণের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নেও গতি আসুক।
বেলাল হোসাইন রাহাত :শিক্ষার্থী
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.