অভিনন্দন ওবামা-ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক নিবিড় হোক
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে_ এমন ধারণা সত্ত্বেও অবশেষে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনিকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন বারাক ওবামা। তার এই বিজয়ে আমেরিকার বাংলাদেশি অভিবাসীদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও আনন্দিত।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামার পুনর্নির্বাচন বিশ্ববাসীর কাছেও ছিল কাঙ্ক্ষিত। বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই টুইটে মার্কিন জনগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি। এরপর জাতির উদ্দেশে দেওয়া বিজয় ভাষণেও দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে বিশ্বশান্তির সপক্ষেও কথা বলেন তিনি। গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রমনিও ওবামাকে স্বাগত জানান। আমরাও তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। দ্বিতীয় দফায় তার এই বিজয় প্রমাণ করে, সেদেশের মানুষ এখন কট্টর দক্ষিণপন্থা থেকে মধ্যপন্থাকেই শ্রেয় মনে করছেন। ভোটাররা ওবামার অর্থনৈতিক দর্শনকেও জোরালোভাবে সমর্থন দিয়েছেন। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার, বিত্তবানদের ওপর কর বৃদ্ধি, ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট ঘাটতি হ্রাস_ এসবই ওবামার অর্থনৈতিক কর্মসূচি। এ ছাড়া রমনির কঠোর অভিবাসন নীতি প্রস্তাবের বিপরীতে উদার অভিবাসন নীতি, গর্ভপাত ও একই লিঙ্গে বিয়ের বিষয়ে ওবামার গৃহীত ও প্রস্তাবিত নীতি-অবস্থানকে মার্কিন জনগণ অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে রিগান আমল থেকে চলে আসা বিত্তবানদের কর হ্রাস ও তথাকথিত টিকল-ডাউন অর্থনীতি এবং অসহিষ্ণুতা ও ভুল তথ্য দিয়ে জনমত প্রভাবিত করার রাজনৈতিক যুগের অবসান হবে। রমনি অবৈধ অভিবাসী ও নতুন অভিবাসন প্রত্যাশীদের ব্যাপারে যে কঠোর নীতি প্রস্তাব করেন, সেটা বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়া তথা গোটা এশীয় ও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকান এবং লাতিনোসহ অধিকাংশ অভিবাসীই প্রত্যাখ্যান করেছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের নিষ্ঠুর অভিবাসন নীতিকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। স্ব-স্ব খরচে নিজ নিজ দেশে অবৈধ অভিবাসীদের জোর করে ফেরত পাঠানোর নীতিও রমনি সমর্থর্ন দিয়েছিলেন। অথচ দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার অভিমত দিয়েছেন যে, অবৈধ অভিবাসীদের কোনো না কোনোভাবে থাকতে দেওয়া এবং তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত। রমনি বিজয়ী হলে অভিবাসীদের ওপর খড়্গ নেমে আসবে_ এই ভীতিই অভিবাসীদের গণহারে তার বিরুদ্ধে ভোটাধিকার প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ করেছে। ওবামার বিজয়ে বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ তারই সাক্ষ্য দেয়। অন্যদিকে নারী, সমকামী ও সিঙ্গেল মায়েদের ব্যাপারে ওবামার উদারনীতি প্রত্যাখ্যান করে রমনি যে ধরনের কঠোর নীতির প্রস্তাব করেন, সেটাও তার বিপক্ষে গেছে। আসলে আমেরিকা যে এখন আর আগের রক্ষণশীল অবস্থানে নেই, আধুনিক উদারনীতিকেই মার্কিন জনগণ তাদের ভবিতব্য হিসেবে গ্রহণ করেছে, সেটা অনুধাবন করতে রমনি এবং তার দল রিপাবলিকান পার্টি ব্যর্থ হয়েছে। তাই ওবামা মুসলমান পিতার ঔরসজাত সন্তান এবং কৃষ্ণাঙ্গ-আমেরিকান_ এমন বর্ণবাদী প্রচারে মানুষ ভোলেনি। এভাবে আমেরিকার এবারের নির্বাচন সেখানকার সমাজের বিভক্তি আরও স্পষ্ট করল। মার্কিন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে রিপাবলিকান পার্টিকে তাদের চরম দক্ষিণপন্থি অবস্থান ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে কট্টর নীতি থেকে সরে এসে শান্তির নীতি নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। পুরনো সামরিকায়ন নীতি এবং বৃহৎ পুঁজি ও সামরিক শিল্প কমপ্লেক্সের পক্ষে কোনো বাচবিছার ছাড়া অবস্থান নেওয়ার নীতিও তাদের ছাড়তে হবে। পুনর্বার ওবামার বিজয়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো, মার্কিন জনগণ বুশের অনুসৃত ও রমনি সমর্থিত যুদ্ধবাজ নীতি আর সমর্থন করছে না। জনগণের এই মনোভাব বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অপরাপর দেশের মানুষও মার্কিন জনগণের সঙ্গে সঙ্গে স্বস্তি পাবে। সে কারণেও ওবামার এই নির্বাচনী বিজয় গোটা বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আশা করি, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি হবে আরও উদার এবং সহযোগিতাপূর্ণ। ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদকালে দু'দেশের সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে_ এই আমাদের প্রত্যাশা।
No comments