শিক্ষা বিভাগ- এসিআর ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন জরুরি by পুলক চাকমা
অ্যানুয়াল কনফিডেনশিয়াল রিপোর্ট (এসিআর), যাকে বাংলায় বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন বলা হয় থাকে। প্রজাতন্ত্রে নিযুক্ত প্রথম শ্রেণীর ক্যাডার ও নন-ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের প্রতিবছর তাঁদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারভুক্ত প্রথম শ্রেণীর সব কর্মকর্তার বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন প্রতিবছর ৩১ মার্চের মধ্যে নিজ নিজ অধিদপ্তরে দাখিল করতে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ (অনুবেদনকারী বা প্রতিস্বাক্ষরকারী) বিগত বছরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সার্বিক কাজের মূল্যায়ন করে থাকে। বর্তমানে এসিআরে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯৫-এর অধিক পেলে অসাধারণ, ৮৫ থেকে ৯৪ পর্যন্ত অতি উত্তম, ৬১ থেকে ৮৪ উত্তম, ৪১ থেকে ৬০ চলতিমান এবং ৪০-এর নিচে নিম্নমান হিসেবে ধরা হয়। এ মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসহ চাকরিকালীন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি নির্ভর করে। তাই প্রজাতন্ত্রের সব কর্মকর্তার জন্য এ বার্ষিক মূল্যায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ২৭টি ক্যাডারসহ নন-ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারটি সর্ববৃহৎ। শিক্ষা ক্যাডারে বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। তবে এসব কর্মকর্তার এসিআর সংরক্ষণের জন্য এখনো কোনো আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার এসিআর সংরক্ষণের জন্য মাত্র দুজন প্রভাষক-সমপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়, সাড়ে চার হাজার কর্মকর্তার এসিআর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একজন উপসচিব, তিনজন সিনিয়র সহকারী সচিব ও তিনজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাই দেখা যায়, একদিকে সীমিতসংখ্যক জনবল, অপর দিকে সংখ্যার বিশালতার কারণে শিক্ষা বিভাগে সব কর্মকর্তার এসিআর ৩১ মার্চের মধ্যে দাখিল হওয়ার পর প্রতিটি যাচাই-বাছাই করতে হয় সংশ্লিষ্ট এ দুজন কর্মকর্তাকে। আবার সব অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষকে এসিআরে শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ও মহাপরিচালকের প্রতিস্বাক্ষর নিতে হয়। তাই ১৩ হাজার শিক্ষা ক্যাডারের এসিআর যাচাই-বাছাই ও সংরক্ষণের জন্য দুজন কর্মকর্তা যথেষ্ট নয় বলে অনেকেই মনে করেন। বাস্তবিক অর্থে দেখা যায়, এসিআর যাচাই-বাছাই ছাড়াও আত্তীকৃত শিক্ষকদের নিয়মিতকরণসহ টাইমস্কেল-সংক্রান্ত কার্যাদি, বছরে দুবার শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ, সিলেকশন গ্রেড, পদোন্নতি ও উপসচিব পদে পদোন্নতি-সংক্রান্ত সব ধরনের কাজের দায়িত্বও এ দুই শিক্ষা কর্মকর্তার ওপর অনেকখানি বর্তায়। ফলে মাত্র দুজন কর্মকর্তা দিয়ে ১৩ হাজার কর্মকর্তার রেকর্ড নথিভুক্ত ও সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এ ছাড়া দেখা যায়, অনেক সময় অনুবেদনাধীন কর্মকর্তা, প্রেষণে থাকা কর্মকর্তা তাঁদের ব্যাচ, মেধাক্রমসহ নির্দেশিত কলামগুলো সঠিকভাবে পূরণ না করা এবং বিলম্বে এসিআর দাখিলের কারণে এসিআর সংরক্ষণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, অনুবেদনকারী কিংবা প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মকর্তারা অনুবেদনাধীন কর্মকর্তা সম্পর্কে ‘সাধারণ মন্তব্য’ কলামটি পূরণের সময় ওই কর্মকর্তাকে উপদেশ দিতে গিয়ে এমন সব মন্তব্য লেখেন, যা নেতিবাচক বা বিরূপ মন্তব্যের পর্যায়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে একজন কর্মকর্তার সামগ্রিক কাজের মান সম্পর্কে মোটামুটিভাবে ধারণা দেওয়াই হলো এই মূল্যায়নের উদ্দেশ্য। নিয়ম আছে, অনুবেদনাধীন কর্মকর্তা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য প্রদানের আগে তাঁকে অবশ্যই মৌখিক বা লিখিতভাবে সতর্ক করে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। আর যখন কোনো অনুবেদনাধীন কর্মকর্তা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা হয়, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই এর সপক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরে মন্তব্য করতে হয় এবং অবশ্যই বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন ফরম পূরণসংক্রান্ত নির্দেশিকার অনুশাসনমালা অনুসরণ করে মন্তব্য প্রদান করতে হয়। কারণ, বিরূপ মন্তব্যের সময় এস্টাবলিশমেন্ট ম্যানুয়াল ১৯৯৫-এর Vol-1-এর অনুশাসনমালা ১.১২, ১.১৩, ১.১৪ ও ৪.৭-এর ধারা যথাযথভাবে অনুসরণ করা না হলে বিরূপ মন্তব্যের কার্যকারিতা অক্ষুণ্ন থাকে না। তাই বিরূপ মন্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে ওই অনুশাসনমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়। এস্টাবলিশমেন্ট ম্যানুয়াল অনুযায়ী বিরূপ মন্তব্য প্রতিষ্ঠিত হলে সুনাম ও সততার জন্য পাঁচ বছর এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তিন বছরের জন্য কার্যকর থাকবে বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রের জন্য কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নেই।
বর্তমান এসিআর ব্যবস্থাটি জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। বিশেযজ্ঞদের মতে, এ পুরোনো ব্যবস্থা পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। তবে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে এসিআরের পরিবর্তে কর্মকৃতীভিত্তিক পিবিইএস (পারফরম্যান্স বেজ ইভেল্যুশন সিস্টেম) পদ্ধতির আওতায় এপিআর অর্থাৎ অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স রিপোর্ট কৃতীভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থায় বার্ষিক কর্মদক্ষতার প্রতিবেদন চালু হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা দেন। এ পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে জুলাই মাস থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়সহ সব দপ্তরে শুরু হবে উল্লেখ করা হয়েছে। এপিআর পদ্ধতিতে কর্মকর্তারা সারা বছর কী কাজ করবেন, তা নিজেরাই নির্ধারণ করবেন। সে অনুযায়ী যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত কাজের বাইরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সারা বছরের কাজের মূল্যায়ন করে তাঁদের বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এক বছরের কাজের মূল্যায়ন হবে ১০০ নম্বরে। বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে ৪০, মৌলিক যোগ্যতার জন্য ৩০ ও ব্যক্তিগত গুণাবলির জন্য ৩০ নম্বর। এ ছাড়া শিক্ষানীতি-২০১০-এ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের এসিআর ব্যবস্থার পরিবর্তনের কথাও বলা হয়েছে। এখানে শিক্ষকদের কাজের বার্ষিক মূল্যায়নের জন্য প্রচলিত এসিআর ব্যবস্থা পরিবর্তন সাধন করে পারফরম্যান্স-ভিত্তিক মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। পারফরম্যান্স-ভিত্তিক মূল্যায়নের উপযুক্ত রিপোর্টিং ফরম্যাটও উদ্ভাবন করা হবে বলে শিক্ষানীতিতে বলা হয়।
তাই এসিআর বা এপিআর যা-ই হোক না কেন, এ ক্ষেত্রে চাই আধুনিক ব্যবস্থাপনা। ১৩ হাজার শিক্ষা ক্যাডারের এসিআর সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিভাগীয় প্রধান, উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষদের যেমন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সঠিক মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করা দরকার, তেমনি এসিআর শাখার কাজের গতি বাড়ানোর জন্য আধুনিক ডেটাবেইস তৈরিসহ নতুন পদ সৃষ্টি করে শিক্ষা প্রশাসনকে গতিশীল করা অতীব জরুরি।
পুলক চাকমা: শিক্ষা কর্মকর্তা (এসিআর), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ২৭টি ক্যাডারসহ নন-ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারটি সর্ববৃহৎ। শিক্ষা ক্যাডারে বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। তবে এসব কর্মকর্তার এসিআর সংরক্ষণের জন্য এখনো কোনো আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার এসিআর সংরক্ষণের জন্য মাত্র দুজন প্রভাষক-সমপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়, সাড়ে চার হাজার কর্মকর্তার এসিআর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একজন উপসচিব, তিনজন সিনিয়র সহকারী সচিব ও তিনজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাই দেখা যায়, একদিকে সীমিতসংখ্যক জনবল, অপর দিকে সংখ্যার বিশালতার কারণে শিক্ষা বিভাগে সব কর্মকর্তার এসিআর ৩১ মার্চের মধ্যে দাখিল হওয়ার পর প্রতিটি যাচাই-বাছাই করতে হয় সংশ্লিষ্ট এ দুজন কর্মকর্তাকে। আবার সব অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষকে এসিআরে শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ও মহাপরিচালকের প্রতিস্বাক্ষর নিতে হয়। তাই ১৩ হাজার শিক্ষা ক্যাডারের এসিআর যাচাই-বাছাই ও সংরক্ষণের জন্য দুজন কর্মকর্তা যথেষ্ট নয় বলে অনেকেই মনে করেন। বাস্তবিক অর্থে দেখা যায়, এসিআর যাচাই-বাছাই ছাড়াও আত্তীকৃত শিক্ষকদের নিয়মিতকরণসহ টাইমস্কেল-সংক্রান্ত কার্যাদি, বছরে দুবার শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ, সিলেকশন গ্রেড, পদোন্নতি ও উপসচিব পদে পদোন্নতি-সংক্রান্ত সব ধরনের কাজের দায়িত্বও এ দুই শিক্ষা কর্মকর্তার ওপর অনেকখানি বর্তায়। ফলে মাত্র দুজন কর্মকর্তা দিয়ে ১৩ হাজার কর্মকর্তার রেকর্ড নথিভুক্ত ও সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এ ছাড়া দেখা যায়, অনেক সময় অনুবেদনাধীন কর্মকর্তা, প্রেষণে থাকা কর্মকর্তা তাঁদের ব্যাচ, মেধাক্রমসহ নির্দেশিত কলামগুলো সঠিকভাবে পূরণ না করা এবং বিলম্বে এসিআর দাখিলের কারণে এসিআর সংরক্ষণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, অনুবেদনকারী কিংবা প্রতিস্বাক্ষরকারী কর্মকর্তারা অনুবেদনাধীন কর্মকর্তা সম্পর্কে ‘সাধারণ মন্তব্য’ কলামটি পূরণের সময় ওই কর্মকর্তাকে উপদেশ দিতে গিয়ে এমন সব মন্তব্য লেখেন, যা নেতিবাচক বা বিরূপ মন্তব্যের পর্যায়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে একজন কর্মকর্তার সামগ্রিক কাজের মান সম্পর্কে মোটামুটিভাবে ধারণা দেওয়াই হলো এই মূল্যায়নের উদ্দেশ্য। নিয়ম আছে, অনুবেদনাধীন কর্মকর্তা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য প্রদানের আগে তাঁকে অবশ্যই মৌখিক বা লিখিতভাবে সতর্ক করে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। আর যখন কোনো অনুবেদনাধীন কর্মকর্তা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা হয়, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই এর সপক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরে মন্তব্য করতে হয় এবং অবশ্যই বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন ফরম পূরণসংক্রান্ত নির্দেশিকার অনুশাসনমালা অনুসরণ করে মন্তব্য প্রদান করতে হয়। কারণ, বিরূপ মন্তব্যের সময় এস্টাবলিশমেন্ট ম্যানুয়াল ১৯৯৫-এর Vol-1-এর অনুশাসনমালা ১.১২, ১.১৩, ১.১৪ ও ৪.৭-এর ধারা যথাযথভাবে অনুসরণ করা না হলে বিরূপ মন্তব্যের কার্যকারিতা অক্ষুণ্ন থাকে না। তাই বিরূপ মন্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে ওই অনুশাসনমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়। এস্টাবলিশমেন্ট ম্যানুয়াল অনুযায়ী বিরূপ মন্তব্য প্রতিষ্ঠিত হলে সুনাম ও সততার জন্য পাঁচ বছর এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তিন বছরের জন্য কার্যকর থাকবে বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রের জন্য কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নেই।
বর্তমান এসিআর ব্যবস্থাটি জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। বিশেযজ্ঞদের মতে, এ পুরোনো ব্যবস্থা পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। তবে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে এসিআরের পরিবর্তে কর্মকৃতীভিত্তিক পিবিইএস (পারফরম্যান্স বেজ ইভেল্যুশন সিস্টেম) পদ্ধতির আওতায় এপিআর অর্থাৎ অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স রিপোর্ট কৃতীভিত্তিক মূল্যায়ন ব্যবস্থায় বার্ষিক কর্মদক্ষতার প্রতিবেদন চালু হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা দেন। এ পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে জুলাই মাস থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়সহ সব দপ্তরে শুরু হবে উল্লেখ করা হয়েছে। এপিআর পদ্ধতিতে কর্মকর্তারা সারা বছর কী কাজ করবেন, তা নিজেরাই নির্ধারণ করবেন। সে অনুযায়ী যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত কাজের বাইরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সারা বছরের কাজের মূল্যায়ন করে তাঁদের বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এক বছরের কাজের মূল্যায়ন হবে ১০০ নম্বরে। বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে ৪০, মৌলিক যোগ্যতার জন্য ৩০ ও ব্যক্তিগত গুণাবলির জন্য ৩০ নম্বর। এ ছাড়া শিক্ষানীতি-২০১০-এ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের এসিআর ব্যবস্থার পরিবর্তনের কথাও বলা হয়েছে। এখানে শিক্ষকদের কাজের বার্ষিক মূল্যায়নের জন্য প্রচলিত এসিআর ব্যবস্থা পরিবর্তন সাধন করে পারফরম্যান্স-ভিত্তিক মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। পারফরম্যান্স-ভিত্তিক মূল্যায়নের উপযুক্ত রিপোর্টিং ফরম্যাটও উদ্ভাবন করা হবে বলে শিক্ষানীতিতে বলা হয়।
তাই এসিআর বা এপিআর যা-ই হোক না কেন, এ ক্ষেত্রে চাই আধুনিক ব্যবস্থাপনা। ১৩ হাজার শিক্ষা ক্যাডারের এসিআর সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিভাগীয় প্রধান, উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষদের যেমন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সঠিক মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করা দরকার, তেমনি এসিআর শাখার কাজের গতি বাড়ানোর জন্য আধুনিক ডেটাবেইস তৈরিসহ নতুন পদ সৃষ্টি করে শিক্ষা প্রশাসনকে গতিশীল করা অতীব জরুরি।
পুলক চাকমা: শিক্ষা কর্মকর্তা (এসিআর), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
No comments