সংঘাত পরিহারের বিকল্প নেই-সংলাপে বসুন

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে না হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা করার দায় সরকার অগ্রাহ্য করতে পারে না। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করলেও প্রয়োজনে দুই মেয়াদে এই ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন করার নির্দেশনা ছিল।


এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী। সে ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা ঘোষণার দায়িত্ব ক্ষমতাসীনদের ওপরই বর্তায়। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে।
পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে সংলাপে সরকার আগ্রহী নয়। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে আলোচনায় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নাকি স্পষ্ট করেছেন যে অনির্বাচিত কারও কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে না। তিনি শুধু নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার বিষয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলে মত দিয়েছেন। কিন্তু সরকারের এ অবস্থান রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে সহায়ক হবে কি?
আমরা মনে করি, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে সরকারকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত এবং আগামী ১০ জুন বিরোধী দলের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে স্পষ্ট করেছেন যে আলোচনা করতে তিনি যেকোনো আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে রাজি আছেন। সুতরাং, বিরোধী দলের নির্দলীয় সরকার না হলেও সরকারি দলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে। এর আগে ক্ষমতাসীন দল থেকেই এ ধারণা পাওয়া গেছে, নির্বাচনকালীন সরকারের মেয়াদে তারা অর্থ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনারের কাছে ন্যস্ত করতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু সে কথা কোনো কোনো দায়িত্বশীল নেতা উল্লেখ করলেও সরকারের প্রস্তাব হিসেবে যায়নি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন আমাদের অবাক না করে দিয়ে প্রথামাফিক আলাপ-আলোচনা করে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের তাগিদ দিয়েছেন। বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ হিলারির সফরের পর সংলাপ নিয়ে আশাবাদী হয়েছেন। আমাদের কথা হলো, এর সঙ্গে হিলারি বা বহির্বিশ্বের কোনো প্রতিনিধির সম্পৃক্ততা উহ্য রেখেই নিজেদের প্রয়োজনে ও স্বার্থে রাজনৈতিক সংলাপে মনোনিবেশ করা উচিত। দেশে বর্তমানে ইলিয়াস আলী গুমজনিত যে উত্তেজনা বিরাজমান এবং হরতালের হুমকি আপাতত স্থগিত থাকলেও রাজনীতিতে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে অবিলম্বে দুই পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু করতে হবে। নির্বাচন কমিশন এর আগে নির্বাচনী সংস্কার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব করেছিল, আইন মন্ত্রণালয় তা ফেরত পাঠিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে অনেকগুলো রয়েছে, যা তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকারই হোক না কেন, তার বাস্তবায়ন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে সেসব বিষয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করা।

No comments

Powered by Blogger.