ভারতে মাওবাদ-সমঝোতার জন্য by রামচন্দ্র গুহ
১৯৪৮-এর জানুয়ারি মাসে মহাত্মা গান্ধী আততায়ীর হাতে নিহত হলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) নিষিদ্ধ হয়। গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিলেন আরএসএসের সদস্য এবং হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ককে তাতিয়ে তোলার প্রধান কারিগর। এ দুটি কারণে আরএসএসকে নিষিদ্ধ করা হয়।
এক বছরেরও বেশি সময় সংগঠনটির প্রধান এম এস গোলওয়ালকার জেলবন্দী থাকেন। অবশেষে, ১৯৪৯-এর জুলাই মাসে আরএসএসের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় এবং গোলওয়ালকার মুক্তি পান। অবশ্য এর আগেই সংগঠনটি সন্ত্রাস ছেড়ে ভারতীয় সংবিধান মেনে চলতে রাজি হয়।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মাওবাদী) ব্যাপারে ভারত সরকারের করণীয় বিষয়ে এই ইতিহাস প্রাসঙ্গিক। সংবিধান অস্বীকার করে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেওয়ায় দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ। পরিণামে পূর্ব ও মধ্যভারতের বনাঞ্চলে মাওবাদীদের সঙ্গে ভারত রাষ্ট্রের তীব্র সংঘাত ঘটতে দেখা যাচ্ছে। উভয় তরফই আঁতকে ওঠার মতো অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে। আর সংঘাতের মাঝখানে পড়ে যাওয়া দরিদ্র কৃষক ও আদিবাসীরাই হচ্ছে এর মূল শিকার।
এখন, মাওবাদীরা ৭২ দিনের জন্য অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়ে সাময়িক শান্তির আশা জাগিয়েছে। তাদের দাবি, তাদের দলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে এবং বন্দী নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু সংবিধান না মানলে এবং অস্ত্র ছেড়ে না দিলে এই দাবি পূরণ করা কঠিন। তবে নাগা বিদ্রোহীদের বেলায় যেমনটা করা হয়েছিল, তেমন পন্থার আশ্রয় নিতে পারে সরকার; যদিও তার সম্ভাবনা কম। সংবিধানের প্রশ্নটি মুলতবি রেখে নাগা নেতাদের নিরাপদে নির্বাসন থেকে ভারতে এসে সংলাপে বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
আশু পদক্ষেপ হিসেবে সরকার নাগা মডেলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করে মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারে। মধ্যম মেয়াদে আরএসএস মডেল গ্রহণ করা উচিত, যেখানে সংবিধান অস্বীকারকারী একটি গোষ্ঠী সংবিধান মেনে রাজনীতি করতে রাজি হয়। ব্যক্তিগত স্তরে আরএসএস নেতাদের অনেকেই হিন্দু রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখলেও প্রকাশ্যে তাদের ভারতীয় রাষ্ট্রকে স্বীকার করে নিতে হয়েছিল। একই পথে মাওবাদীদেরও টানা দরকার। তারাও যেন সাম্যবাদ কায়েমের পথ ছেড়ে সংবিধান নির্দেশিত বহুত্ববাদী, বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে।
গত কয়েক দশকে আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে দানা বাঁধা গভীর অসন্তোষ মাওবাদীদের উত্থানের জন্য দায়ী। ঔপনিবেশিক যুগে তারা ছিল অবহেলিত আর স্বাধীনতার পর থেকে হতে থাকে নিষ্পেষিত। গান্ধীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন দলিত, মুসলিম ও নারীদের মূলধারার অংশ করার জন্য কাজ করেছিল। সেসব চেষ্টা সম্পূর্ণ সফল হয়নি। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের আওতার মধ্যে কখনোই আদিবাসীদের টানার চেষ্টা করা হয়নি। ইতিমধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ও সম্মানজনক চাকরির মানদণ্ডে তারা মুসলিম ও দলিতদের থেকেও দুর্দশার মধ্যে পতিত হয়। এসব ছাড়াও অনেক জায়গাতেই তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হতে হয়, নিজেদের এলাকাতেই তারা সংখ্যালঘু হয়ে যায়। তাদের জমি চলে যায় এমন সব উন্নয়ন প্রকল্পে, যার দ্বারা তারা নয় উপকৃত হয় অ-আদিবাসী ভারতীয়।
শোষণ ও কোণঠাসা করার এই দীর্ঘ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা মাওবাদীদের পক্ষে গেছে। তবে, হাল আমলে রাজ্য সরকারের কিছু কিছু নীতি-পদক্ষেপের সুফলও তারা পেয়েছে। ১০ বছর আগে উড়িষ্যায় কার্যত কোনো মাওবাদী ছিল না। কিন্তু রাজ্য সরকার পাইকারি হারে আদিবাসীদের জমি খনি কোম্পানির হাতে তুলে দিতে থাকে। এর প্রতিবাদের তারা যেই প্রতিবাদী হয়ে উঠল, অমনি তাদের দাগিয়ে দেওয়া হলো ‘নকশাল’ বলে। তখন থেকেই তাদের এই উচ্ছেদের ঘটনা মাওবাদীদের তাদের মধ্যে কাজ করার সুযোগ করে দিল। এখন উড়িষ্যার পাহাড়ি এলাকার বেশ কয়েকটি জেলায় মাওবাদীদের ভালো রকম উপস্থিতি রয়েছে।
পশ্চিম বাংলায় জেলা প্রশাসনের দলীয়করণ নকশালী তত্পরতার জন্য জায়গা করে দিয়েছে। শাসক সিপিএম দলীয় আধিপত্য বজায় রাখায় পুলিশ ও প্রশাসনকে যতটা কাজে লাগিয়েছে, গ্রামীণ উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ততটা সচেষ্ট হয়নি। বিশেষ করে আদিবাসীদের লক্ষ্য করে তেমন কোনো কল্যাণমূলক কর্মসূচিও হাতে নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে ছত্তিশগড় রাজ্য প্রশাসনের ভুল ও অপরাধ অন্যদের ম্লান করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাত্কারে এক মাওবাদী মুখপাত্র আজাদ তাই বলেন, ‘যুদ্ধের যে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের দুই দশক লাগত, সরকারি গুণ্ডাবাহিনী ‘সালবা জুদুম’-এর কারণে তা আমরা চার বছরেই অর্জন করে ফেলেছি।’
সব প্রদেশেই আদিবাসী জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘুত্বের জন্যই দুর্ভোগের মধ্যে আছে। ছত্তিশগড় ও ঝাড়খন্ড রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য। অথচ এখন তারা প্রদেশ দুটির জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ। উড়িষ্যায় তারা ২০ শতাংশ, গুজরাট ও রাজস্থানে ১৫ শতাংশের নিচে, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিম বাংলায় ১০ শতাংশেরও কম। রাজনৈতিক এই প্রতিকূলতা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার সঙ্গে যোগ হয়ে তাদের আরও নাজুক দশায় ফেলেছে। সব জায়গায়ই অ-আদিবাসীরা অধিক জমি, সম্পদ, সম্মান ও প্রভাব-প্রতিপত্তির মালিক। রাজনৈতিক ক্ষমতা, অর্থনৈতিক শক্তি, আইন-আদালত ও মিডিয়ায় সুযোগ—সবকিছুই তাদের আওতার বাইরে। যে রাজ্যই হোক আর যে দলই কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসুক, সব সরকারি নীতি জোরালোভাবেই আদিবাসীদের বিরুদ্ধে।
মাওবাদী উত্থান এখন ভারতের সামনে হাজির হওয়া পাঁচটি চ্যালেঞ্জের অন্যতম। বাকিগুলো হলো: কাশ্মীর, মণিপুরসহ সীমান্ত প্রদেশগুলোতে অব্যাহত সহিংসতা, রাজনৈতিক শ্রেণী ও রাষ্ট্রের দুর্নীতি, ধনী ও গরিবের মধ্যে বাড়তে থাকা বৈষম্য এবং দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা পরিবেশ বিপর্যয়। এগুলো প্রশমিত ও ধারণ করার জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ চিন্তা ও কঠোর পরিশ্রম। এ জন্য গোড়াতেই সন্ত্রাস ও পাল্টা-সন্ত্রাসের চক্রটি থামাতে হবে, বিদ্রোহীদের সঙ্গে রাষ্ট্রকে আলোচনায় বসতে হবে। প্রথমেই মাওবাদীদের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে আনার জন্য ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করে যাওয়া প্রয়োজন। চূড়ান্তভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি নীতিগুলোকে আরও গণতান্ত্রিক ও উন্নত করতে হবে, যাতে করে আদিবাসীরা অন্যদের সঙ্গে সমনাগরিকত্বের সুফল ভোগ করতে পারে।
খালিজ টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ
রামচন্দ্র গুহ: ভারতীয় ইতিহাসবিদ।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মাওবাদী) ব্যাপারে ভারত সরকারের করণীয় বিষয়ে এই ইতিহাস প্রাসঙ্গিক। সংবিধান অস্বীকার করে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেওয়ায় দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ। পরিণামে পূর্ব ও মধ্যভারতের বনাঞ্চলে মাওবাদীদের সঙ্গে ভারত রাষ্ট্রের তীব্র সংঘাত ঘটতে দেখা যাচ্ছে। উভয় তরফই আঁতকে ওঠার মতো অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে। আর সংঘাতের মাঝখানে পড়ে যাওয়া দরিদ্র কৃষক ও আদিবাসীরাই হচ্ছে এর মূল শিকার।
এখন, মাওবাদীরা ৭২ দিনের জন্য অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়ে সাময়িক শান্তির আশা জাগিয়েছে। তাদের দাবি, তাদের দলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে এবং বন্দী নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু সংবিধান না মানলে এবং অস্ত্র ছেড়ে না দিলে এই দাবি পূরণ করা কঠিন। তবে নাগা বিদ্রোহীদের বেলায় যেমনটা করা হয়েছিল, তেমন পন্থার আশ্রয় নিতে পারে সরকার; যদিও তার সম্ভাবনা কম। সংবিধানের প্রশ্নটি মুলতবি রেখে নাগা নেতাদের নিরাপদে নির্বাসন থেকে ভারতে এসে সংলাপে বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
আশু পদক্ষেপ হিসেবে সরকার নাগা মডেলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করে মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারে। মধ্যম মেয়াদে আরএসএস মডেল গ্রহণ করা উচিত, যেখানে সংবিধান অস্বীকারকারী একটি গোষ্ঠী সংবিধান মেনে রাজনীতি করতে রাজি হয়। ব্যক্তিগত স্তরে আরএসএস নেতাদের অনেকেই হিন্দু রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখলেও প্রকাশ্যে তাদের ভারতীয় রাষ্ট্রকে স্বীকার করে নিতে হয়েছিল। একই পথে মাওবাদীদেরও টানা দরকার। তারাও যেন সাম্যবাদ কায়েমের পথ ছেড়ে সংবিধান নির্দেশিত বহুত্ববাদী, বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে।
গত কয়েক দশকে আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে দানা বাঁধা গভীর অসন্তোষ মাওবাদীদের উত্থানের জন্য দায়ী। ঔপনিবেশিক যুগে তারা ছিল অবহেলিত আর স্বাধীনতার পর থেকে হতে থাকে নিষ্পেষিত। গান্ধীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন দলিত, মুসলিম ও নারীদের মূলধারার অংশ করার জন্য কাজ করেছিল। সেসব চেষ্টা সম্পূর্ণ সফল হয়নি। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের আওতার মধ্যে কখনোই আদিবাসীদের টানার চেষ্টা করা হয়নি। ইতিমধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ও সম্মানজনক চাকরির মানদণ্ডে তারা মুসলিম ও দলিতদের থেকেও দুর্দশার মধ্যে পতিত হয়। এসব ছাড়াও অনেক জায়গাতেই তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হতে হয়, নিজেদের এলাকাতেই তারা সংখ্যালঘু হয়ে যায়। তাদের জমি চলে যায় এমন সব উন্নয়ন প্রকল্পে, যার দ্বারা তারা নয় উপকৃত হয় অ-আদিবাসী ভারতীয়।
শোষণ ও কোণঠাসা করার এই দীর্ঘ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা মাওবাদীদের পক্ষে গেছে। তবে, হাল আমলে রাজ্য সরকারের কিছু কিছু নীতি-পদক্ষেপের সুফলও তারা পেয়েছে। ১০ বছর আগে উড়িষ্যায় কার্যত কোনো মাওবাদী ছিল না। কিন্তু রাজ্য সরকার পাইকারি হারে আদিবাসীদের জমি খনি কোম্পানির হাতে তুলে দিতে থাকে। এর প্রতিবাদের তারা যেই প্রতিবাদী হয়ে উঠল, অমনি তাদের দাগিয়ে দেওয়া হলো ‘নকশাল’ বলে। তখন থেকেই তাদের এই উচ্ছেদের ঘটনা মাওবাদীদের তাদের মধ্যে কাজ করার সুযোগ করে দিল। এখন উড়িষ্যার পাহাড়ি এলাকার বেশ কয়েকটি জেলায় মাওবাদীদের ভালো রকম উপস্থিতি রয়েছে।
পশ্চিম বাংলায় জেলা প্রশাসনের দলীয়করণ নকশালী তত্পরতার জন্য জায়গা করে দিয়েছে। শাসক সিপিএম দলীয় আধিপত্য বজায় রাখায় পুলিশ ও প্রশাসনকে যতটা কাজে লাগিয়েছে, গ্রামীণ উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ততটা সচেষ্ট হয়নি। বিশেষ করে আদিবাসীদের লক্ষ্য করে তেমন কোনো কল্যাণমূলক কর্মসূচিও হাতে নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে ছত্তিশগড় রাজ্য প্রশাসনের ভুল ও অপরাধ অন্যদের ম্লান করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাত্কারে এক মাওবাদী মুখপাত্র আজাদ তাই বলেন, ‘যুদ্ধের যে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের দুই দশক লাগত, সরকারি গুণ্ডাবাহিনী ‘সালবা জুদুম’-এর কারণে তা আমরা চার বছরেই অর্জন করে ফেলেছি।’
সব প্রদেশেই আদিবাসী জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘুত্বের জন্যই দুর্ভোগের মধ্যে আছে। ছত্তিশগড় ও ঝাড়খন্ড রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য। অথচ এখন তারা প্রদেশ দুটির জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ। উড়িষ্যায় তারা ২০ শতাংশ, গুজরাট ও রাজস্থানে ১৫ শতাংশের নিচে, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিম বাংলায় ১০ শতাংশেরও কম। রাজনৈতিক এই প্রতিকূলতা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার সঙ্গে যোগ হয়ে তাদের আরও নাজুক দশায় ফেলেছে। সব জায়গায়ই অ-আদিবাসীরা অধিক জমি, সম্পদ, সম্মান ও প্রভাব-প্রতিপত্তির মালিক। রাজনৈতিক ক্ষমতা, অর্থনৈতিক শক্তি, আইন-আদালত ও মিডিয়ায় সুযোগ—সবকিছুই তাদের আওতার বাইরে। যে রাজ্যই হোক আর যে দলই কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসুক, সব সরকারি নীতি জোরালোভাবেই আদিবাসীদের বিরুদ্ধে।
মাওবাদী উত্থান এখন ভারতের সামনে হাজির হওয়া পাঁচটি চ্যালেঞ্জের অন্যতম। বাকিগুলো হলো: কাশ্মীর, মণিপুরসহ সীমান্ত প্রদেশগুলোতে অব্যাহত সহিংসতা, রাজনৈতিক শ্রেণী ও রাষ্ট্রের দুর্নীতি, ধনী ও গরিবের মধ্যে বাড়তে থাকা বৈষম্য এবং দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা পরিবেশ বিপর্যয়। এগুলো প্রশমিত ও ধারণ করার জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ চিন্তা ও কঠোর পরিশ্রম। এ জন্য গোড়াতেই সন্ত্রাস ও পাল্টা-সন্ত্রাসের চক্রটি থামাতে হবে, বিদ্রোহীদের সঙ্গে রাষ্ট্রকে আলোচনায় বসতে হবে। প্রথমেই মাওবাদীদের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে আনার জন্য ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করে যাওয়া প্রয়োজন। চূড়ান্তভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি নীতিগুলোকে আরও গণতান্ত্রিক ও উন্নত করতে হবে, যাতে করে আদিবাসীরা অন্যদের সঙ্গে সমনাগরিকত্বের সুফল ভোগ করতে পারে।
খালিজ টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ
রামচন্দ্র গুহ: ভারতীয় ইতিহাসবিদ।
No comments