সরল গরল-বিচারপতিদের আপিল বিভাগ অবমাননা by মিজানুর রহমান খান
পলাতকদের উচ্চ আদালতে আসার বিষয়ে আপিল বিভাগের সর্বশেষ রায় পড়ার আমেজ মিলিয়ে গেল দ্রুত। আপিল বিভাগের রায় মানতে হাইকোর্ট বাধ্য। অথচ বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩৭ দিনের ব্যবধানে আপিল বিভাগের রায় অগ্রাহ্য করে রায় দিলেন। দুই দণ্ডিত পলাতক খালাস পেলেন।
আপিল বিভাগ শেষবার এ বিষয়ে বাধ্যতামূলক নির্দেশনা দেন গত ১৮ জানুয়ারি। এই নির্দেশনা অনন্য তাত্পর্যমণ্ডিত। কারণ, এই রায়ে প্রথমবারের মতো পলাতক অভিযুক্তদের জন্য প্রতিকার প্রদানকারী বিচারপতি ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা প্রত্যক্ষভাবে তিরস্কৃত হন। সেসব আইনজীবীর অন্যতম এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী।
প্রকাশ্য রাজপথে উদ্যত পিস্তলধারীদের নিয়ে ধাবমান একটি মুখ অনেকেরই চেনা। সেই মুখটি ডা. এইচ বি এম ইকবালের। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ। তাঁর আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার শামসুদ্দীন চৌধুরী। এখন তিনি বিচারপতি। আওয়ামী লীগের সমর্থক—এই বিবেচনায় চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাদ পড়া বিচারকদের অন্যতম তিনি। ১০ বিচারকের মামলার রায়ে তিনি নিয়োগ পান।
গত ১৮ জানুয়ারির রায়ে আপিল বিভাগ বলেন, ‘রিট আবেদনকারী (এইচ বি এম ইকবাল) যেদিন রিট দায়ের করেন, সেদিন তিনি বিচার থেকে পলাতক এক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি দেশের বাইরে ছিলেন এবং তাঁর পক্ষে একজন এইচ বি এম শুভ রহমান হলফনামা দাখিল করেন। বিজ্ঞ বিচারপতিরা রুল জারি করেন। অথচ এটা এখন মীমাংসিত যে আদালতের প্রক্রিয়াকে অবজ্ঞা করে বিচার থেকে পলাতক ব্যক্তি কোনো বিচারিক আদেশ পাওয়ার অধিকারী নন।’
১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০—এই ১৭ মাস ১৩ দিন হাইকোর্টের আদেশবলেই ডা. ইকবাল বাইরে ছিলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ তাঁকে ১০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। তিনি শেষ দিনে ধরা দেন।
ডা. ইকবালের মামলায় হাইকোর্টের মোট সাত বিচারক সম্পর্কে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আপিল বিভাগ উষ্মা প্রকাশ করেন। কারণ, তাঁরা আপিল বিভাগের চোখে নিষিদ্ধ বা এখতিয়ারবহির্ভূত বিচারিক আদেশ জারি করেছেন। ১৮ ডিসেম্বর ২০০৮ বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মামনুন রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ প্রথম রুল জারি করেন। এবং রুল জারি করার দিনই তাঁরা রায়ের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন।
বিচারপতি মীর হাশমত আলী ও বিচারপতি শামীম হাসনাইনের ভূমিকা বিশেষভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁদের স্ববিরোধী ভূমিকার কথা আপিল বিভাগের রায়ে ফুটে উঠেছে। পলাতক ইকবালের পক্ষে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি নিষিদ্ধ বিচারিক আদেশ দেন। সংখ্যায় আধা ডজন। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ১৮ ডিসেম্বরের আদেশটি দারুণ কৌতূহলোদ্দীপক। তাঁরা লেখেন, ‘মনে হচ্ছে, আবেদনকারী বিচার থেকে পলাতক ব্যক্তি।’
তবে এ মামলায় একক সর্বোচ্চ আদেশ দেওয়ার রেকর্ড বিচারপতি মীর হাশমত আলীর। তিনি জ্যেষ্ঠ বিচারক হিসেবে পলাতক ইকবালের সুরক্ষায় আটটি আদেশে সই করেন। এ সময় তাঁর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক হিসেবে বিচারপতি শামীম হাসনাইন ছয়টিতে ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান দুটি আদেশে সই করেন।
‘বিচারিক-প্রক্রিয়া অবজ্ঞার’ এ ঘটনায় বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চও একটি আদেশ দেন। ২০০৯ সালের ১৬ এপ্রিল কোনো কারণ না দেখিয়ে তাঁরা মাত্র একটি বাক্যে আদেশ লেখেন। এতে পলাতক ডা. ইকবালের জামিন ছয় মাস বাড়ে। একই মেয়াদে বাড়ে নিম্ন আদালতের রায়ের কার্যকারিতা-সংক্রান্ত স্থগিতাদেশ।
আপিল বিভাগ ডা. ইকবালের রিট মামলায় রীতিবহির্ভূত আদেশের মিছিল দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাঁরা ওই সাত বিচারককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ যে দীর্ঘকালীন নিয়ম-রীতি অগ্রাহ্য করে হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ বিচারপতিরা কীভাবে বিচার থেকে পলাতক ব্যক্তির দায়ের করা রিট আবেদন বিবেচনার জন্য গ্রহণ করতে পারলেন।’
ঠিক এ কথা বলতে গিয়েই আমরা বারবার আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছি। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক জরুরি অবস্থায় মন্তব্য করেছিলেন, ‘হাইকোর্ট জনগণের, আপিল বিভাগ সরকারের।’ সেই সময়ে আপিল বিভাগ পলাতকদের জন্য উচ্চ আদালতের দরজায় খিল এঁটে সাহসী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দেন। তাঁরা সাফ বলেন, দণ্ডিত পলাতককে যাঁরা উচ্চ আদালত থেকে সরাসরি প্রতিকার দিতে সহায়তা দেবেন, তাঁরা আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হবেন।
ভিআইপি দণ্ডিত পলাতকেরা একটা পণ করেছিলেন, তাঁরা নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন না। তারকা আইনজীবীদের একটি অংশ ছিল মরিয়া। তাঁরা তাঁদের উঁচুতলার মক্কেলদের স্বার্থ দেখেছিলেন। এ জন্য তাঁরা শতাব্দী-প্রাচীন সুপ্রথা উল্টাতে চেয়েছিলেন। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিভক্ত রায় দেন। রায় ঘোষণার দিন নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হক বিচারকের বিরুদ্ধে অভাবনীয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি রায় প্রদানে বাধা দেন। ভিন্নমত প্রদানকারী কনিষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী আদালত অবমাননার রুল জারি করেন রফিক-উল হকের বিরুদ্ধে। এরপর বিষয়টি যায় তৃতীয় বিচারকের কাছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের জামিন বাতিল করেন আপিল বিভাগ। তাঁকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এই মাইলফলক সিদ্ধান্তের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ওই তারকা আইনজীবীরা আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তকে দৃশ্যত স্বাগত জানান। ভিআইপিরা ধরা দেন। কিন্তু ছোটগল্প বলে কথা। শেষ হয়েও হয় না শেষ।
তখন আমরা স্মরণ করিয়ে দিই, ঢাকা ল রিপোর্টের ৬১ ভলিউমে বর্ণিত ২০০৮ সালের ৩০ এপ্রিল প্রদত্ত আপিল বিভাগের রায়টি (১০৮৪৪ ও ১০৮৪৫/২০০৭ নম্বর রিট আবেদন থেকে উদ্ভূত)। আমরা বলার চেষ্টা করি যে এই রায় থাকতে হাইকোর্টে কী করে পলাতকদের জন্য শুনানি চলে।
আপিল বিভাগের চার সদস্য ১৮ জানুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে বলেছেন, ‘যদি এই প্রক্রিয়া (পলাতকের জন্য উচ্চ আদালতের আদেশ লাভ) চলতে দেওয়া হয়, তাহলে দণ্ডিত বা অন্যবিধ পলাতক আসামিদের উত্সাহ জোগানো হবে। পলাতকেরা আদালতের প্রক্রিয়া নস্যাতের স্পর্ধা দেখাবেন। তখন ফৌজদারি বিচার প্রশাসন কুঞ্চিত হবে। আমরা এর চেয়ে উত্কট কোনো লঙ্ঘন কল্পনাই করতে পারি না।’
আমরাও পারি না। তবে আজ আমরা কাঁদতে আসিনি। বিচারের দাবি নিয়ে এসেছি। চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কিন্তু ‘জনগণের’ হাইকোর্ট থেকে আসা। অপর দুজন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম ও বিচারপতি মো. আবদুল মতিন ‘সরকারের’ আপিল বিভাগের যুগে পলাতকদের জন্য উচ্চ আদালতের দরজা বন্ধ করেছিলেন।
এখন আপিল বিভাগ যদি সব দেখেশুনে বিস্ময়ে বিমূঢ় হন, বেদনার্ত হন, তাহলে আমরা বলব—এবার আমাদের বিস্ময় আকাশ ছুঁইছে। কারণ আমরা দেখছি, ১৮ জানুয়ারির আপিল বিভাগের রায় ১৫ ফেব্রুয়ারিতেই উল্টে গেল। কে উল্টাল? হাইকোর্ট বিভাগ উল্টালেন। এই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক কে? ব্যারিস্টার এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী, যিনি পলাতক ডা. ইকবালের আইনজীবী ছিলেন। আপিল বিভাগ ওই মামলার আইনজীবীদের তিরস্কার করেন এই বলে, ‘বিজ্ঞ আইনজীবীদের মধ্যে যাঁরা পলাতকদের জন্য আবেদন পেশ করেছেন তাঁদের অবশ্যই আদালত অবমাননার পরিণাম মোকাবিলা করতে হবে।’ সেই মোকাবিলাটা কখন কীভাবে কী প্রক্রিয়ায় শুরু হবে, সেটা আমরা জানতে চাই। পলাতকের জন্য যাঁরা রায় লিখছেন, তাঁদের কী হবে।
এবার শুনুন এই গল্পের করুণতম অংশটি এবং আপনারাই বলুন, হাসবেন না কাঁদবেন? একবার ভাবুন তো আমরা কোন মুল্লুকে বাস করছি? আর দেশে কোন ধরনের আইনের শাসন চলছে? সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ বলছে, আপিল বিভাগের আদেশ-নির্দেশ মানতে হাইকোর্ট বাধ্য। কিন্তু বাস্তবে হাইকোর্ট আপিল বিভাগকে উল্টে দিচ্ছে।
জনতার মঞ্চখ্যাত ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর তাঁর পলাতক দুই পুত্রের পক্ষে রিট আবেদন করেন। এটা এক নজিরবিহীন ঘটনা। জয় আলমগীর ও জালাল আলমগীর উভয়ে দণ্ডিত। পরবাসে পলাতক। সেই রিট আবেদন হাতে নিলেই আপনার চোখ ছানাবড়া হবে। একটি আশ্চর্য শব্দ: আবেদনকারী ‘কনভিকটেড’ (ইন অ্যাবরোড)। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই দুই দণ্ডিত ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস দেন। দুর্নীতির দায়ে তাঁদের প্রত্যেকের তিন বছর জেল ছিল। পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের জেল। পলাতকদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।
আমাদের জানা মতে, বাংলাদেশ তো বটেই, উপমহাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম দণ্ডিত ব্যক্তি প্রচলিত আইনের কাছে নিজেকে সোপর্দ না করেই হাইকোর্ট থেকে সরাসরি খালাস করে নিতে পারলেন। পলাতকের জন্য জামিন নয়, রিট আবেদনে শুরু হলো বেকসুর খালাসের নতুন প্রশ্নবিদ্ধ পর্ব।
জয় ও জালালের মামলার শুনানি চলাকালে একদিন ওই মামলায় দুদকের আইনজীবী আজিজ খানকে ফোন করি। আপনি কি আপিল বিভাগের ১৮ জানুয়ারির রায় হাইকোর্টের নজরে এনেছেন? তিনি বললেন, ‘শুধু এনেছি নয়, হলফনামার সঙ্গে দাখিল করেছি।’ রোববার তাঁকে ফোন করি। জানতে চেয়েছিলাম, আপনি কি মৌখিক শুনানিতে কথাটি তুলেছিলেন? শুনে আদালত কী বললেন? অ্যাডভোকেট আজিজ খান জানালেন, আদালত বললেন, এখানে তো আইনের ভিন্ন প্রশ্ন। যা পৃথক করা চলে। ওই রায় এখানে প্রযোজ্য নয়। দণ্ডিত পলাতকের পক্ষে বাবা এসেছেন।
আপিল বিভাগ পলাতক ব্যক্তির সংজ্ঞা দিয়েছেন। নির্দিষ্টভাবে স্পষ্ট করেছেন, পলাতক ব্যক্তির কোনো জাতপাত নেই। পলাতকের জন্য কোনোক্রমেই কোনো বিচারিক আদেশ জারি করা যাবে না। যদিও বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ভাষায়, ‘প্রশ্নটি এখতিয়ারের নয়, এটা সুসঙ্গতি, নীতি ও প্রতিষ্ঠিত অনুশীলনের বিষয়।’ পলাতক ডা. ইকবালের ভাইয়ের রিট আবেদন অবৈধ হলে পলাতক জয়-জালালের বাবার রিট আবেদন বলেই তা বৈধ হবে?
আপিল বিভাগের রায়ের আলোকেই বলি, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের দায়ের করা দুটি রিট ও তার যাবতীয় কার্যক্রম অর্থাত্ রিট দায়ের থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারিতে রায় দান পর্যন্ত পুরো কার্যধারা আইনের চোখে অবৈধ। আপিল বিভাগের কথায়, ‘বিজ্ঞ বিচারকদের উচিত নয় বিচারিক আদালতের ক্ষমতা অনুশীলন করা। যাঁরা রিট করতে আসবেন, তাঁদের বলতে হবে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করুন। বিচারিক আদালতের এখতিয়ার জবরদখল করাটা বেআইনি এবং প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতি-বিরুদ্ধ। দেশের উচ্চ আদালতে বসে হাইকোর্টের বিচারকদের এ ধরনের আদেশ জারি করা তাই অননুমোদিত। যদি উচ্চ আদালতের বিচারপতিরা প্রতিষ্ঠিত আইন অগ্রাহ্য করেন, তাহলে সে ধরনের পরিস্থিতিতে ক্ষমতার অনুশীলন হবে বিচারিক শৃঙ্খলার জন্য অনিষ্টকর। সে ক্ষেত্রে ফৌজদারি বিচার-প্রশাসন হয়ে পড়বে সংকটগ্রস্ত।’
আদালতের স্বাধীনতা ও সম্মান বজায় রাখার কথা বলে যদি আমরা বারবার আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হই, আমাদের সঙ্গে যদি শুধুই রুলের ভাষায় কথা বলা হয়, তাহলে আপিল বিভাগ যাঁদের আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করলেন, তাঁদের শুধু রায়ের মাধ্যমে ভর্ত্সনা করলে চলবে না। বিচারিক ও অবিচারিক আদেশের মধ্যে পার্থক্য নিশ্চিত করতে হবে। অন্ধ থাকলে প্রলয় বন্ধ হবে না।
সব শেষে আপিল বিভাগের সঙ্গে সবিনয়ে একটু ভিন্নমত পোষণ করি। ১৮ জানুয়ারির রায়ে আমরা দেখি, আপিল বিভাগ বলেন, ‘হাইকোর্ট যেহেতু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তাই আমরা এ পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করব না।’ তাই তাঁরা রিটের শুনানি অনুষ্ঠানে হাইকোর্টকে অনুমতি দেন। কিন্তু এটা তো একটা কৌশল বলেই প্রতীয়মান হয়। রুলের পূর্ণাঙ্গ শুনানি কে চায়? আশাই থাকে, অন্তর্বর্তীকালীন জামিন ও স্থগিতাদেশ পাওয়া এবং পরে দফায় দফায় তা বাড়ানো। সেখানে পুরো অনুশীলনই বাস্তব বিচার থেকে অনেক দূরে। এ ধরনের ক্ষেত্রে জামিন বাতিল হলে কে কবে রুলের শুনানি করেছে। তা ছাড়া যদি পলাতকের আবেদন আমলে নেওয়াই অবৈধ হয়, তাহলে আপিল বিভাগ কী করে সেই আবেদন শুনানি করে নিষ্পত্তির আশা করতে পারেন? এটা তো স্ববিরোধী। বর্তমান প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ৩০ এপ্রিল ২০০৮ (৬১ ডিএলআরে মুদ্রিত) লিখেছেন, ‘পলাতকের রিট আবেদন বিবেচনা করাই এখতিয়ারবহির্ভূত। এ-সংক্রান্ত কোনো আদেশ যদি জারিও হয়ে থাকে তাহলে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে।’ পলাতকদের পক্ষে দায়ের করা ১০৮৪৪ ও ১০৮৪৫/২০০৭ নম্বর রিট সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ সরাসরি প্রত্যাখ্যানে আপিল বিভাগের সেই সিদ্ধান্তই যথার্থ।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
No comments