ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ প্রসঙ্গে by মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
নীরব ঘাতক স্বভাবের যে অসংক্রামক রোগটি দেহে বহু ব্যাধির আহ্বায়ক, সেই ডায়াবেটিসের অব্যাহত অভিযাত্রায় শঙ্কিত সবাইকে এটা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে যথাসচেতন করে তুলতেই তথা এ দেশে এ রোগ যে সমস্যা সৃষ্টি করবে, তার গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতীয় অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহিমসহ কয়েকজন বিশিষ্ট সমাজসেবক, প্রবীণ চিকিৎসক,
সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯৫৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। 'ডায়াবেটিস সত্ত্বেও পরিপূর্ণ জীবনের' নিশ্চয়তা প্রদানের লক্ষ্যে একটি ডায়াবেটিক চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করে ডায়াবেটিক রোগীকে 'অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় এবং বেকার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে দেওয়া হবে না'-এই প্রতিজ্ঞা, প্রত্যয় ও আদর্শে প্রাথমিকভাবে ১৯৫৭ সালে সেগুনবাগিচায় প্রায় ৩৮০ বর্গফুট জায়গায় অস্থায়ী একটি টিনের ঘরে ডায়াবেটিক চিকিৎসা কেন্দ্র শুরু হয়। ডায়াবেটিক রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে খোলা এই ডায়াবেটিক বহির্বিভাগটিই (আউটডোর) পরবর্তীকালে শাহবাগ এলাকায় বারডেম (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ইন ডায়াবেটিস, এন্ডোক্রাইন অ্যান্ড মেটাবলিক ডিজঅর্ডারস) নামে দেশের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা-গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বারডেম এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ডায়াবেটিস চিকিৎসার মডেল বা সেবাকেন্দ্র এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৮২ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠানকে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণার ক্ষেত্রে তাদের একান্ত সেবা সহযোগী সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি, সম্মান ও সমীহ করে আসছে।
কালপরিক্রমায় ডায়াবেটিসের চিকিৎসা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা তথা এটাকে একটা আন্দোলনে রূপান্তরের প্রয়াসে সমিতি বারডেম ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। সমিতির রয়েছে ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্স। স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও উচ্চতর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মিরপুরের দারুস সালাম রোডে 'বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেস' (বিআইএইচএস) নামে পৃথক একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও রয়েছে। দেশের ৫৯টি জেলা সদরে রয়েছে সমিতির অধিভুক্ত ডায়াবেটিক সমিতি ও হাসপাতাল।
সমিতির প্রথম বছরে, ১৯৫৬ সালে, ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৯। অথচ ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় অবস্থিত সমিতির শুধু কেন্দ্রীয় গবেষণা ইনস্টিটিউট 'বারডেম'-এ কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে চার লাখের ওপর। সমিতির অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পরিচালিত বিভিন্ন কেন্দ্র এবং জেলা শহরে প্রতিষ্ঠিত ডায়াবেটিক হাসপাতালগুলোতে আরো প্রায় দুই লাখ রোগী নিবন্ধিত হয়ে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছে। বারডেমে রেজিস্টার্ড ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসা এবং নির্ধারিত কয়েকটি পরীক্ষা বিনা মূল্যে করা হয়।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি পরিচালনার জন্য ব্যয়কৃত অর্থ সরকার এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অনুদান থেকে আসে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি এ দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যেখানে ডায়াবেটিস এবং তৎসংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এর তহবিল জনসাধারণের এবং ব্যক্তিবিশেষের অর্থে গড়ে উঠেছে। সুতরাং প্রদত্ত সেবার ফলাফল যাতে লাভজনক হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি থাকে। সমিতির কর্মকাণ্ড দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক পরিচালিত হয়। উচ্চকক্ষ হলো ৩২ সদস্যবিশিষ্ট ন্যাশনাল কাউন্সিল বা জাতীয় পরিষদ। সমিতির আজীবন সদস্যদের মধ্য থেকে ১৮ জন এবং অধিভুক্ত সমিতির প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে ৬ জন সদস্য সরাসরি নির্বাচিত হন তিন বছর মেয়াদের জন্য। কার্যধারার মধ্যে ধারাবাহিকতা ও যোগসূত্র বজায় রাখার জন্য প্রতিবছর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচনের নিয়ম রয়েছে। এ ছাড়া দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক সংস্থার বরেণ্য ব্যক্তিত্ব পেশাজীবী ও সমাজসেবকদের মধ্য থেকে সমিতির সভাপতি কর্তৃক পাঁচজন মনোনীত সদস্য এবং সরকারের অর্থ, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (যুগ্ম সচিব পর্যায়ের নিচে নয়) তিনজন কর্মকর্তা সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য হিসেবে ন্যাশনাল কাউন্সিলে থাকেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল সমিতির প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য নিম্নকক্ষরূপী নিজ নিজ ব্যবস্থাপনা পর্ষদ বা বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট মনোনয়ন করে থাকে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) অন্যতম সদস্য।
এই রোগ সবারই হতে পারে। ডায়াবেটিস একবার হলে আর সারে না। এটা সব সময়ের এবং আজীবনের রোগ। তবে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করে এ রোগ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রতিরোধ করা এবং প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব হয়। অতিরিক্ত প্রস্রাব, অত্যধিক পিপাসা, বেশি ক্ষুধা, দুর্বল বোধ করা এবং কেটে-ছিঁড়ে গেলে ক্ষত তাড়াতাড়ি না শুকানো এ রোগের সাধারণ লক্ষণ। যাদের বংশে রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস আছে, যাদের ওজন খুব বেশি, যাদের বয়স ৪০-এর বেশি এবং যারা শরীরচর্চা করে না, যারা গাড়িতে চড়ে এবং বসে থেকে অফিসের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অত্যধিক চিন্তাভাবনা, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, আঘাত, সংক্রামক রোগ, অস্ত্রোপচার, অসম খাবার গ্রহণ, গর্ভাবস্থা এবং ওজন বেশি বৃদ্ধি এ রোগ বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখে প্রথম থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করা যায়। ডায়াবেটিস প্রধানত দুই প্রকারের-(ক) ইনসুলিন নির্ভরশীল, (খ) ইনসুলিন নিরপেক্ষ। ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগীদের ইনসুলিনের অভাবের কারণে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। ইনসুলিন নিরপেক্ষ রোগীদের দেহে কিছুটা ইনসুলিন থাকে। তবে চাহিদার প্রয়োজনে তা যথেষ্ট নয় বা শরীর ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না। এসব রোগীকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে শর্করা কমানোর বড়ি সেবন করতে হয়। ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়। বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয়-এ ধারণা ঠিক নয়। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা এবং ওষুধ এ রোগ নিয়ন্ত্রণের উপায়। খাদ্যের গুণগত মানের দিকে নজর রেখে পরিমাণমতো খাদ্য নিয়মিত গ্রহণ, জীবনের সর্বক্ষেত্রে নিয়মকানুন বা শৃঙ্খলা মেনে অর্থাৎ কাজকর্মে, আহার-বিহারে, চলাফেরায়, এমনকি বিশ্রাম ও নিদ্রায় শৃঙ্খলা মেনে চলা দরকার। নিয়ম-শৃঙ্খলাই ডায়াবেটিক রোগীর জীবনকাঠি। রোগী যদি চিকিৎসকের সঙ্গে সহযোগিতা করে তার উপদেশ-নির্দেশ ভালোভাবে মেনে চলে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা যথাযথভাবে গ্রহণ করে, তাহলে সুখী, কর্মঠ এবং দীর্ঘজীবন লাভ করতে পারে।
লেখক : সাবেক সচিব এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির চিফ কো-অর্ডিনেটর
কালপরিক্রমায় ডায়াবেটিসের চিকিৎসা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা তথা এটাকে একটা আন্দোলনে রূপান্তরের প্রয়াসে সমিতি বারডেম ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। সমিতির রয়েছে ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্স। স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও উচ্চতর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মিরপুরের দারুস সালাম রোডে 'বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেস' (বিআইএইচএস) নামে পৃথক একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও রয়েছে। দেশের ৫৯টি জেলা সদরে রয়েছে সমিতির অধিভুক্ত ডায়াবেটিক সমিতি ও হাসপাতাল।
সমিতির প্রথম বছরে, ১৯৫৬ সালে, ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৯। অথচ ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় অবস্থিত সমিতির শুধু কেন্দ্রীয় গবেষণা ইনস্টিটিউট 'বারডেম'-এ কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে চার লাখের ওপর। সমিতির অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পরিচালিত বিভিন্ন কেন্দ্র এবং জেলা শহরে প্রতিষ্ঠিত ডায়াবেটিক হাসপাতালগুলোতে আরো প্রায় দুই লাখ রোগী নিবন্ধিত হয়ে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছে। বারডেমে রেজিস্টার্ড ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসা এবং নির্ধারিত কয়েকটি পরীক্ষা বিনা মূল্যে করা হয়।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি পরিচালনার জন্য ব্যয়কৃত অর্থ সরকার এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অনুদান থেকে আসে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি এ দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যেখানে ডায়াবেটিস এবং তৎসংক্রান্ত রোগের চিকিৎসা সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এর তহবিল জনসাধারণের এবং ব্যক্তিবিশেষের অর্থে গড়ে উঠেছে। সুতরাং প্রদত্ত সেবার ফলাফল যাতে লাভজনক হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি থাকে। সমিতির কর্মকাণ্ড দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক পরিচালিত হয়। উচ্চকক্ষ হলো ৩২ সদস্যবিশিষ্ট ন্যাশনাল কাউন্সিল বা জাতীয় পরিষদ। সমিতির আজীবন সদস্যদের মধ্য থেকে ১৮ জন এবং অধিভুক্ত সমিতির প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে ৬ জন সদস্য সরাসরি নির্বাচিত হন তিন বছর মেয়াদের জন্য। কার্যধারার মধ্যে ধারাবাহিকতা ও যোগসূত্র বজায় রাখার জন্য প্রতিবছর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচনের নিয়ম রয়েছে। এ ছাড়া দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক সংস্থার বরেণ্য ব্যক্তিত্ব পেশাজীবী ও সমাজসেবকদের মধ্য থেকে সমিতির সভাপতি কর্তৃক পাঁচজন মনোনীত সদস্য এবং সরকারের অর্থ, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (যুগ্ম সচিব পর্যায়ের নিচে নয়) তিনজন কর্মকর্তা সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য হিসেবে ন্যাশনাল কাউন্সিলে থাকেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল সমিতির প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য নিম্নকক্ষরূপী নিজ নিজ ব্যবস্থাপনা পর্ষদ বা বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট মনোনয়ন করে থাকে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) অন্যতম সদস্য।
এই রোগ সবারই হতে পারে। ডায়াবেটিস একবার হলে আর সারে না। এটা সব সময়ের এবং আজীবনের রোগ। তবে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করে এ রোগ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রতিরোধ করা এবং প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব হয়। অতিরিক্ত প্রস্রাব, অত্যধিক পিপাসা, বেশি ক্ষুধা, দুর্বল বোধ করা এবং কেটে-ছিঁড়ে গেলে ক্ষত তাড়াতাড়ি না শুকানো এ রোগের সাধারণ লক্ষণ। যাদের বংশে রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস আছে, যাদের ওজন খুব বেশি, যাদের বয়স ৪০-এর বেশি এবং যারা শরীরচর্চা করে না, যারা গাড়িতে চড়ে এবং বসে থেকে অফিসের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অত্যধিক চিন্তাভাবনা, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, আঘাত, সংক্রামক রোগ, অস্ত্রোপচার, অসম খাবার গ্রহণ, গর্ভাবস্থা এবং ওজন বেশি বৃদ্ধি এ রোগ বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখে প্রথম থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করা যায়। ডায়াবেটিস প্রধানত দুই প্রকারের-(ক) ইনসুলিন নির্ভরশীল, (খ) ইনসুলিন নিরপেক্ষ। ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগীদের ইনসুলিনের অভাবের কারণে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। ইনসুলিন নিরপেক্ষ রোগীদের দেহে কিছুটা ইনসুলিন থাকে। তবে চাহিদার প্রয়োজনে তা যথেষ্ট নয় বা শরীর ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না। এসব রোগীকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে শর্করা কমানোর বড়ি সেবন করতে হয়। ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়। বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয়-এ ধারণা ঠিক নয়। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা এবং ওষুধ এ রোগ নিয়ন্ত্রণের উপায়। খাদ্যের গুণগত মানের দিকে নজর রেখে পরিমাণমতো খাদ্য নিয়মিত গ্রহণ, জীবনের সর্বক্ষেত্রে নিয়মকানুন বা শৃঙ্খলা মেনে অর্থাৎ কাজকর্মে, আহার-বিহারে, চলাফেরায়, এমনকি বিশ্রাম ও নিদ্রায় শৃঙ্খলা মেনে চলা দরকার। নিয়ম-শৃঙ্খলাই ডায়াবেটিক রোগীর জীবনকাঠি। রোগী যদি চিকিৎসকের সঙ্গে সহযোগিতা করে তার উপদেশ-নির্দেশ ভালোভাবে মেনে চলে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা যথাযথভাবে গ্রহণ করে, তাহলে সুখী, কর্মঠ এবং দীর্ঘজীবন লাভ করতে পারে।
লেখক : সাবেক সচিব এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির চিফ কো-অর্ডিনেটর
No comments