বাক সংযমের পরামর্শ

মন্ত্রিসভার বৈঠকে মূল্যবান নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রীদের সতর্ক হয়ে কথা বলতে বলেছেন তিনি। কথায় প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা অবশ্যই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।


মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন, তাঁদের মুখের কথায় অনেক কিছুই নির্ভর করে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কথার ওপর সরকারের ভাবমূর্তিও অনেকটা নির্ভর করে। তাঁদের মুখের কথার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কথায় দায়িত্বহীনতার পরিচয় মেলে। বিশেষ করে যখন দেশ কোনো সংকটে পড়ে, তখন সংশ্লিষ্ট অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কথায় হতাশ হতে হয়। এটা হয়তো ঠিক, বিশেষ কোনো সময়ে বিশেষ কোনো কারণেই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা অমন উক্তি করে থাকেন। কিন্তু দেখা যায়, বাস্তবে মন্ত্রীর কথার কোনো প্রতিফলন ঘটছে না। আবার এমনটিও দেখা গেছে, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী যা বলছেন, তাতে বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন ঘটছে না। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত একটি বিষয় হচ্ছে দ্রব্যমূল্য। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার মুখে লাগাম দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। চাল, ডাল, তেল_সব জিনিসের দাম চলে গেছে সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে। দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে আমাদের মন্ত্রীরা অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো কথাই কাজে আসেনি। বাজারে জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করা যায়নি। বাণিজ্যমন্ত্রী একসময় ব্যবসায়ীদের ধমক দিয়েছিলেন। কিন্তু বাজারে তাঁর সেই ধমকের প্রতিফলন দেখা যায়নি। একইভাবে খাদ্যমন্ত্রীর অনেক উক্তিই অসার প্রমাণিত হয়েছে। শুধু বাজার নয়, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে লিবিয়ায় ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাও লিবিয়া প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজনের হতাশা কাটাতে পারেনি। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের বিবেচনায় রাখা উচিত, দেশের মানুষ তাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে। এ ক্ষেত্রে কোনো কথা বলার আগে সেই কথার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, সেটা তাঁদের ভাবতে হবে। তাঁদের কোনো কথা থেকে জনমনে হতাশা দেখা দিলে তা সবার জন্যই দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা হরহামেশাই ঢালাও মন্তব্য করছেন।
প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কথায় যেন জনমনে কোনো হতাশা দেখা না দেয়, চলমান ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে যেন তাঁদের কথার মিল থাকে, সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান সরকার যখন থেকে দেশ শাসনের ভার তুলে নেয়, তখন দেশে একটি বড় সংকট ছিল। সেই সংকট থেকে দেশ এখনো মুক্ত নয়। অন্যদিকে খাদ্যশস্য নিয়ে বিশ্বজুড়েই নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। কথায় নয়, কাজের মধ্য দিয়েই সেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে থাকতে হবে কথার সঙ্গে কাজের মিল। কথার সঙ্গে কাজের মিল খুঁজে পাওয়া না গেলে সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক। স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্বশীল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বাক সংযমী হতে হবে। দূরদর্শিতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা অহেতুক কথার ফুলঝুরি না ঝরিয়ে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে সেটাই দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

No comments

Powered by Blogger.