নির্মাণকাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে-সংরক্ষিত বনে পাকা সড়ক

গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের জাহাজপুরা এলাকায় সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে পাকা সড়ক নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন এ এলাকায় পাকা সড়ক নির্মাণের জন্য দেড় শ বছরের পুরোনো ৩৬টি গর্জনগাছ কাটার


জন্য ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের তোড়জোড়ও চোখে পড়ার মতো। আমরা এলজিইডির পরিবেশের প্রতি সংবেদনহীন এই প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই।
সংরক্ষিত বনের ভেতর কোনো স্থাপনা ও অবকাঠামো তৈরির অনুমতি নেই। সেখানে কেমন করে একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পাকা সড়কের মতো দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো নির্মাণ করে। পাকা সড়ক তৈরির সময়ই অনেক গাছ কাটতে হবে আর পরে যখন একে বিস্তৃত করার প্রয়োজন পড়বে এবং মানুষের চলাচল বাড়বে, তখন নিশ্চিতভাবেই আরও অনেক গাছ কাটতে হবে। বিলুপ্ত হবে প্রায় পাঁচ হাজার গর্জনগাছ। ধ্বংস হবে জীববৈচিত্র্য। বনের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এই বাগান থেকে সংগ্রহ করা বীজ দিয়েই সারা দেশে গর্জন বাগান তৈরি করা হচ্ছে। এর অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলে, এমন সব তত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
বর্তমান সরকার পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করার অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় আসা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এই অবৈধ সড়ক নির্মাণের জন্য প্রাচীন গর্জনগাছ কেটে ফেলার জন্য বেশ তত্পর। তাঁরা সড়কের নির্মাণকাজে বাধা দেওয়ার কারণে বন বিভাগের কর্মকর্তাকে হুমকি দিচ্ছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
আমাদের দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং আর্থসামাজিক প্রয়োজন ও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ জন্য বনভূমি ও বনজ সম্পদের সংকোচন ও ক্ষয়রোধ বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। বাহারছড়া উপজেলার সঙ্গে টেকনাফ উপজেলা সদরের সংযোগ স্থাপন যেমন দরকার, তেমনি দরকার বনভূমি, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ব্যবস্থায় যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, তা নিশ্চিত করা। আমাদের জানামতে, সড়কটি পশ্চিম পাশে কিছুটা ঘুরিয়ে দিলে বনও বাঁচবে আর সড়কটিও নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
সংরক্ষিত বনের ভেতর পাকা সড়ক নির্মাণের কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের এভাবে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করার প্রবণতা ঠেকাতে সরকারের তদারকি আরও জোরদার করা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.