ইতিহাসে আলো ফেলা by আরিফ হোসেন
ভারতে ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত আরেকটি বইয়ে ইন্দিরা গান্ধীর সমালোচনা করা হয়েছে। গত বছর প্রকাশিত 'কংগ্রেস ও ভারতের জাতি গঠন' শীর্ষক পুস্তিকায় ইন্দিরা গান্ধী এবং তার পুত্র সঞ্জয়ের সমালোচনা করা হয়েছিল।
বলা হয়েছিল, ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা 'দল ও রাষ্ট্রের মাত্রাছাড়া ক্ষমতা কুক্ষিগত' করেছিলেন। এবার একই উপলক্ষে কংগ্রেসের তরফে প্রকাশিত আর একটি বইয়েও (কংগ্রেসের ইতিহাস-পঞ্চম খণ্ড) ওই সিদ্ধান্তকে 'পাহাড়প্রমাণ ভুল', 'অসাংবিধানিক' এবং 'বিশ্রী সিদ্ধান্ত' বলে বর্ণনা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ভরাডুবি নিয়েও প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করা হয়েছে। সমালোচনা করা হয়েছে সঞ্জয় গান্ধীরও। বইটির সম্পাদকীয় কমিটির প্রধান ছিলেন দলের বর্ষীয়ান নেতা বর্তমান অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, যাকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর পরই ক্ষমতাধর বলে গণ্য করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর শাশুড়ি। ইন্দিরা ১৯৭৫ সালে অভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। নানা মহল থেকে এর সমালোচনা হয়। ওই সময় সরকারবিরোধী বিপুলসংখ্যক রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ভারতের জনগণ বিষয়টি ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী ও সঞ্জয় গান্ধী পরাজিত হয়েছিলেন। কংগ্রেসও হারিয়েছিল ক্ষমতা। কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্ব রয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর পরিবারের সদস্যদের হাতেই। তারপরও তারা ইতিহাসের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চাইছে। কৃতকর্মের সমালোচনা করছে। এতে বিরোধীরা কংগ্রেসকে আক্রমণ করার হাতিয়ার পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আখেরে লাভ দল ও দেশের।
কংগ্রেস হাইকমান্ডের তরফে বলা হচ্ছে_ বইটিতে স্পষ্টতই লেখা রয়েছে, বইয়ের নিবন্ধগুলো কংগ্রেস দলের মতো নয়। নিবন্ধকারের ব্যক্তিগত মতামত। দলের শীর্ষ নেতৃত্বই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কয়েকজন ইতিহাসবিদ এবং নিবন্ধকারকে দিয়ে বইতে কয়েকটি অনুচ্ছেদ লেখানো হোক। নিবন্ধকার ইন্দ্র মালহোত্র বা ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র জরুরি অবস্থা বা ষাট থেকে আশির দশকে কংগ্রেসের রাজনীতি নিয়ে তাদের ব্যক্তিগত মত বইতে রেখেছেন। আগের বইতে কংগ্রেস বলেছিল, খোদ ইন্দিরা গান্ধীই জরুরি অবস্থার পরে ওই পরিস্থিতির জন্য আক্ষেপ করেছিলেন। ফলে পুস্তিকায় ঐতিহাসিক সত্য লেখা হয়েছে। 'ভালো ভালো' কথা বলে ইতিহাস বিকৃত করার অর্থ নেই। আর নতুন বইটি সম্পর্কে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, দলের নেতাদের বাইরে ঐতিহাসিক বা নিরপেক্ষ নিবন্ধকারদের দিয়ে কংগ্রেসের ইতিহাস লিখিয়ে কংগ্রেস গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আস্থারই প্রমাণ দিয়েছে।
আমরা বলতে পারি, কংগ্রেস দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছে। এটা ঠিক যে, দলটি যদি নিজেদের সমালোচনা নিজেরা করত তাহলে সেটা অধিকতর ভালো হতো। কিন্তু বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও পণ্ডিতদের দিয়ে ইতিহাসের সত্যে প্রকৃত আলো ফেলাতেও দোষের কিছু নেই। বরং অনেক ক্ষেত্রে সেটা জনসাধারণের কাছে আরও বেশি গ্রহণীয় হয়। বই দুটিতে যেভাবে ইন্দিরা গান্ধীর সমালোচনা করা হয়েছে, কংগ্রেসের পক্ষে সেটা সম্ভব ছিল না। কংগ্রেস নেতৃত্ব সেই কঠিন সত্য প্রকাশ করেছে নিজেদের প্রকাশনায়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। রাজনৈতিক নেতাদের কাজে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। সেটা স্বীকার করলে জনসাধারণ বরং খুশিই হয়। আমাদের ইতিহাস চর্চাতেও তা মূল্যবান অবদান রাখবে। কেউ এমন ভুল স্বীকার করলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়তো উল্লাস প্রকাশ কিংবা কটাক্ষ করবে। কিন্তু তা গায়ে মাখার দরকার কি? ইতিহাসে সত্যটাই থাকুক না। তাতে অবদান জোগানোও কিন্তু কৃতিত্বের।
কংগ্রেস হাইকমান্ডের তরফে বলা হচ্ছে_ বইটিতে স্পষ্টতই লেখা রয়েছে, বইয়ের নিবন্ধগুলো কংগ্রেস দলের মতো নয়। নিবন্ধকারের ব্যক্তিগত মতামত। দলের শীর্ষ নেতৃত্বই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কয়েকজন ইতিহাসবিদ এবং নিবন্ধকারকে দিয়ে বইতে কয়েকটি অনুচ্ছেদ লেখানো হোক। নিবন্ধকার ইন্দ্র মালহোত্র বা ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র জরুরি অবস্থা বা ষাট থেকে আশির দশকে কংগ্রেসের রাজনীতি নিয়ে তাদের ব্যক্তিগত মত বইতে রেখেছেন। আগের বইতে কংগ্রেস বলেছিল, খোদ ইন্দিরা গান্ধীই জরুরি অবস্থার পরে ওই পরিস্থিতির জন্য আক্ষেপ করেছিলেন। ফলে পুস্তিকায় ঐতিহাসিক সত্য লেখা হয়েছে। 'ভালো ভালো' কথা বলে ইতিহাস বিকৃত করার অর্থ নেই। আর নতুন বইটি সম্পর্কে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, দলের নেতাদের বাইরে ঐতিহাসিক বা নিরপেক্ষ নিবন্ধকারদের দিয়ে কংগ্রেসের ইতিহাস লিখিয়ে কংগ্রেস গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আস্থারই প্রমাণ দিয়েছে।
আমরা বলতে পারি, কংগ্রেস দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছে। এটা ঠিক যে, দলটি যদি নিজেদের সমালোচনা নিজেরা করত তাহলে সেটা অধিকতর ভালো হতো। কিন্তু বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও পণ্ডিতদের দিয়ে ইতিহাসের সত্যে প্রকৃত আলো ফেলাতেও দোষের কিছু নেই। বরং অনেক ক্ষেত্রে সেটা জনসাধারণের কাছে আরও বেশি গ্রহণীয় হয়। বই দুটিতে যেভাবে ইন্দিরা গান্ধীর সমালোচনা করা হয়েছে, কংগ্রেসের পক্ষে সেটা সম্ভব ছিল না। কংগ্রেস নেতৃত্ব সেই কঠিন সত্য প্রকাশ করেছে নিজেদের প্রকাশনায়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। রাজনৈতিক নেতাদের কাজে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। সেটা স্বীকার করলে জনসাধারণ বরং খুশিই হয়। আমাদের ইতিহাস চর্চাতেও তা মূল্যবান অবদান রাখবে। কেউ এমন ভুল স্বীকার করলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়তো উল্লাস প্রকাশ কিংবা কটাক্ষ করবে। কিন্তু তা গায়ে মাখার দরকার কি? ইতিহাসে সত্যটাই থাকুক না। তাতে অবদান জোগানোও কিন্তু কৃতিত্বের।
No comments