স্মরণ-বিপ্লবী রবি নিয়োগী by হাকিম বাবুল
বিপ্লবী রবি নিয়োগী সর্বদাই একটি শোষণহীন, বৈষম্যহীন সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি গণমানুষ থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হননি। তিনি বলতেন, দেশ গঠনে 'সোনার মানুষ' দরকার। আজীবন তিনি নিষ্ঠ ছিলেন মানুষের কল্যাণ চিন্তায়। ১০ মে বিপ্লবী রবি নিয়োগীর দশম মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি তাঁকে।
তিনি আমাদের মধ্যে না থাকলেও বেঁচে আছেন তাঁর কর্ম ও আদর্শে। বাংলা পঞ্জিকার বর্ষ গণনার হিসাবমতে গত ২৯ মে ছিল তাঁর ১০২তম জন্মবার্ষিকী (১৬ বৈশাখ মোতাবেক ২৯ এপ্রিল)।
জমিদার পরিবারে জন্ম হলেও তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের কাতারে। তিনি বিপ্লববাদী ছিলেন। ১৯২৭ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বহিষ্কার হয়ে কলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন। কলকাতায় অবস্থানকালে তৎকালীন রাজনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত হন এবং যুগান্তর দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে কলকাতায় পড়াশোনার পাট চুকিয়ে নিজ ভূমি শেরপুর এসে ১৯২৯ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৩০ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সত্যাগ্রহ আন্দোলনে ভূমিকা রাখায় প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন। ১৯৩২ সালে আন্দামান জেলে অবস্থানরত ৩২ বিপ্লবী কারাবন্দি মিলে 'কমিউনিস্ট কনসালডেশন কমিটি' গঠন করেন। ওই সময় রবি নিয়োগীর নামের পাশে অতিগুরুত্বপূর্ণ ও বিপজ্জনক কয়েদি হিসেবে 'ডাবল স্টার মার্ক' দেওয়া হয়, যা তাঁকে জীবনের শেষ পর্যন্ত তাড়িত করেছে। জেলখানার ভেতর কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম শাখা খোলায় ১৯৩৬ মালে তাঁকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে আনা হয়। সেখানে থেকে ময়মনসিংহ জেলে স্থানান্তর করে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার পরদিনই ফের গ্রেপ্তার করায় দেড় বছরের সাজা খাটার জন্য দিনাজপুর ঘোড়াঘাট জেলে বন্দি থাকতে হয়। ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলনে শেরপুরের নালিতাবাড়ী অঞ্চলে নেতৃত্ব দেন বিপ্লবী রবি নিয়োগী। ১৯৪৮ সালে ঐতিহাসিক টঙ্ক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বে শেরপুর, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, কলমাকান্দা এবং সুসং অঞ্চলে টঙ্ক আন্দোলন ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেছিল। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত মিথ্যা মামলায় ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দি জীবন কাটান। এ সময় তাঁর সহধর্মিণী জ্যোৎস্না নিয়োগীও ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলে কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বিপ্লবী রবি নিয়োগী বন্দি ছিলেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ বাধলে নিরাপত্তা আইনে কারারুদ্ধ হন। ১৯৬৯ সালে মুক্তি লাভ করার পর ১৯৭০ সালে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের আমলে তিনি ছয় মাস বন্দি থাকেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ডালু, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী, হালুয়াঘাট, মহেন্দ্রগঞ্জ সীমান্তে বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধা মোটিভেশন ক্যাম্পে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। ব্রিটিশদের জুড়ে দেওয়া ডাবল স্টারের কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতেও ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেন তিনি। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ১৯৮৮ সালে জনসভায় প্রচারাভিযান চালানোর সময়।'
বিপ্লবী রবি নিয়োগী কলমসৈনিক হিসেবেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিষ্ঠ ছিলেন। তিনি সাপ্তাহিক একতা ও দৈনিক সংবাদের শেরপুর জেলা বার্তা পরিবেশক হিসেবে আমৃত্যু কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন শেরপুরে প্রগতিশীল সাংবাদিকদের একটি প্রতিষ্ঠান। বিপ্লবী রবি নিয়োগীর ২০০২ সালের ১০ মে সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনের সমাপ্তি ঘটলেও কোনো বিপ্লবীরই মৃত্যু হয় না।
হাকিম বাবুল
জমিদার পরিবারে জন্ম হলেও তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের কাতারে। তিনি বিপ্লববাদী ছিলেন। ১৯২৭ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বহিষ্কার হয়ে কলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন। কলকাতায় অবস্থানকালে তৎকালীন রাজনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত হন এবং যুগান্তর দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে কলকাতায় পড়াশোনার পাট চুকিয়ে নিজ ভূমি শেরপুর এসে ১৯২৯ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৩০ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সত্যাগ্রহ আন্দোলনে ভূমিকা রাখায় প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন। ১৯৩২ সালে আন্দামান জেলে অবস্থানরত ৩২ বিপ্লবী কারাবন্দি মিলে 'কমিউনিস্ট কনসালডেশন কমিটি' গঠন করেন। ওই সময় রবি নিয়োগীর নামের পাশে অতিগুরুত্বপূর্ণ ও বিপজ্জনক কয়েদি হিসেবে 'ডাবল স্টার মার্ক' দেওয়া হয়, যা তাঁকে জীবনের শেষ পর্যন্ত তাড়িত করেছে। জেলখানার ভেতর কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম শাখা খোলায় ১৯৩৬ মালে তাঁকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে আনা হয়। সেখানে থেকে ময়মনসিংহ জেলে স্থানান্তর করে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার পরদিনই ফের গ্রেপ্তার করায় দেড় বছরের সাজা খাটার জন্য দিনাজপুর ঘোড়াঘাট জেলে বন্দি থাকতে হয়। ১৯৪৬ সালে তেভাগা আন্দোলনে শেরপুরের নালিতাবাড়ী অঞ্চলে নেতৃত্ব দেন বিপ্লবী রবি নিয়োগী। ১৯৪৮ সালে ঐতিহাসিক টঙ্ক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বে শেরপুর, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, কলমাকান্দা এবং সুসং অঞ্চলে টঙ্ক আন্দোলন ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেছিল। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত মিথ্যা মামলায় ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দি জীবন কাটান। এ সময় তাঁর সহধর্মিণী জ্যোৎস্না নিয়োগীও ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলে কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় বিপ্লবী রবি নিয়োগী বন্দি ছিলেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ বাধলে নিরাপত্তা আইনে কারারুদ্ধ হন। ১৯৬৯ সালে মুক্তি লাভ করার পর ১৯৭০ সালে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের আমলে তিনি ছয় মাস বন্দি থাকেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ডালু, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী, হালুয়াঘাট, মহেন্দ্রগঞ্জ সীমান্তে বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধা মোটিভেশন ক্যাম্পে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। ব্রিটিশদের জুড়ে দেওয়া ডাবল স্টারের কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতেও ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেন তিনি। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ১৯৮৮ সালে জনসভায় প্রচারাভিযান চালানোর সময়।'
বিপ্লবী রবি নিয়োগী কলমসৈনিক হিসেবেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিষ্ঠ ছিলেন। তিনি সাপ্তাহিক একতা ও দৈনিক সংবাদের শেরপুর জেলা বার্তা পরিবেশক হিসেবে আমৃত্যু কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন শেরপুরে প্রগতিশীল সাংবাদিকদের একটি প্রতিষ্ঠান। বিপ্লবী রবি নিয়োগীর ২০০২ সালের ১০ মে সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনের সমাপ্তি ঘটলেও কোনো বিপ্লবীরই মৃত্যু হয় না।
হাকিম বাবুল
No comments