স্বাচিপ থেকে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত-অসহায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী!

সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার করুণ চিত্র পত্রপত্রিকায় প্রায়ই প্রকাশ পায়। গত সোমবার স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসচিব চিকিৎসাক্ষেত্রে সমস্যার করুণ চিত্রটি আরও স্পষ্ট করে প্রকাশ করলেন। জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা ঢাকার বাইরে যেতে চান না।


তাঁদের কোনো জেলায় বদলি করা হলে সেখানে থাকেন না। কখনো অন্য কোনো মন্ত্রীর তদবিরের জোরে বদলির আদেশ বদল করে ফেলেন। ফলে ঢাকার বাইরে ভালো চিকিৎসার সুযোগ সীমিত।
স্বাস্থ্য প্রশাসন পরিচালনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী যদি এত অসহায় হন, জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা যদি তাঁর বদলির আদেশ নিয়মিত উপেক্ষা করতে থাকেন, তাহলে তো দেশের চিকিৎসাসেবাব্যবস্থা ভেঙে পড়ারই কথা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, নিয়োগ ও বদলির ব্যাপারে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে এবং এ সিদ্ধান্ত জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের মানা উচিত। কিন্তু উচিত কাজটি হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, তা ভালোভাবে তদন্ত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সর্বাগ্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজের দিকে তাকানো উচিত। তিনি কেন স্বাচিপের সভাপতির পদটি ধরে রেখেছেন? মন্ত্রী হওয়ার পর তো তাঁর এই দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ স্বাচিপ হলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক চিকিৎসকদের দল। সবাই জানেন নিয়োগ-বদলির ব্যাপারে এখন স্বাচিপই সব কলকাঠি নাড়ে। নিজে সভাপতি থেকে তিনি কীভাবে স্বাচিপের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করবেন? বিগত বিএনপি সরকারের সময় এই ভূমিকায় ছিল ড্যাব। জামায়াতে ইসলামী দলেরও আছে একটি অনুগত চিকিৎসক ফোরাম। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে চিকিৎসকদের রাজনৈতিক সংগঠন থাকে না, থাকতে পারে না, কারণ তাঁরা তো চিকিৎসাসেবার মহান আদর্শে দীক্ষিত। তাঁরা কেন দলীয় রাজনীতিতে বিভক্ত হবেন? প্রথমে মন্ত্রী নিজেকে এই ক্ষতিকর প্রবণতা থেকে বিযুক্ত করুন।
চিকিৎসকদের রাজনৈতিক বিভাজন দূর করে সেখানে তাঁদের পেশাগত সংগঠন বিএমএ শক্তিশালী করা দরকার। বিএমএ চিকিৎসকদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের পাশাপাশি দেশের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম উন্নত করার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।
এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো চিকিৎসকদের বেলায়ও বদলি-বাণিজ্যের যে অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার বাইরে বদলির আদেশ পরিবর্তনের জন্য লেনদেনের অভিযোগ কম নয়।
ভালো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা যেন ঢাকার বাইরেও যান, সে জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া দরকার। যাঁরা বাইরের জেলায় যাবেন, তাঁদের বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য বিশেষ সুযোগ রাখা যেতে পারে। তবে শুধু ভালো চিকিৎসক হলেই চলবে না, জেলা শহরগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎকদের কাজের উপযোগী পরিবেশও দরকার। বিশেষভাবে বাইরের হাসপাতালগুলোতে উন্নত চিকিৎসার প্রযুক্তিগত সুবিধা না থাকলে ভালো চিকিৎসকেরাও ভালো চিকিৎসা দিতে পারবেন না।
সাধারণ মানুষের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করাই হলো সরকারি হাসপাতালগুলোর মূল লক্ষ্য। সে জন্য ঢাকার বাইরেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসত্সক ও ভালো হাসপাতালের সুব্যবস্থা করতে হবে। কোনো অজুহাতেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের ঢাকায় কেন্দ্রীভূত হতে দেওয়া যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.