স্রষ্টার কৃপার দান বৃষ্টি by জহির উদ্দিন বাবর

সরাসরি স্রষ্টার নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ার অন্যতম বৃষ্টি। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলায় সুশোভিত এই বসুন্ধরা বৃষ্টির কারণেই হয়ে উঠেছে মানুষের বাসযোগ্য। বৃষ্টি দ্বারা ভূমিকে করেছেন উর্বর ও উৎপাদনশীল। প্রকৃতিতে লাগিয়েছেন সজীবতার ছোঁয়া। ফুলে-ফলে ভরপুর করে দিয়েছেন জগৎ।


তীব্র খরায়, গ্রীষ্মের তাপদাহে জমিন যখন ফেটে চৌচির হয়ে যায়, চারদিকে প্রকৃতি খাঁ-খাঁ করতে থাকে, তখন মহান প্রভুর ঐশী প্রেরণায় একপশলা বৃষ্টি জগতে সঞ্চার করে নতুন প্রাণের। প্রকৃতি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। মৃতপ্রায় বসুন্ধরা ফিরে পায় তার সজীবতা ও সৌরভ। বিস্তীর্ণ মাঠ, শ্যামল প্রান্তর, সবুজ গাছ-গাছালি, অসহায় প্রাণিকুল_ সবই বৃষ্টির জন্য হাহাকার করতে থাকে। বৃষ্টির সি্নগ্ধ কোমল ফোঁটায় গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে বিরান হয়ে যাওয়া ভূমিতে নতুন প্রাণের ছোঁয়া লাগে। সঠিক সময়ে বৃষ্টির দেখা না পেলে সৃষ্টিকুলের জীবনধারা ব্যাহত হয়। জমিনের পলে পলে বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এসব বিবেচনায় বৃষ্টিকে স্রষ্টার অপূর্ব দান ও শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, 'আমি জলধর মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি, যাতে তদ্বারা উৎপন্ন করি শস্য উদ্ভিদ।'(সূরা আন-নূর_১৪-১৫)
আল্লাহর বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিরাজি এই পৃথিবী তার কুদরতি ইশারায় চলছে নিরবধি। তিনি পৃথিবীর গতিধারা যেভাবে, যে গতিতে প্রবাহিত করতে চান সেভাবেই প্রবাহিত হচ্ছে। আল্লাহর নির্দেশনায় জগতের সবকিছুই সংঘটিত হয়। বৃষ্টিও এর ব্যতিক্রম নয়। হজরত মিকাঈল (আ.) আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক বৃষ্টি বর্ষণের কাজে নিয়োজিত আছেন। যখন যেখানে বৃষ্টির প্রয়োজন আল্লাহর নির্দেশ পেলে সেখানেই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চোখ ধাঁধানো আবিষ্কারে বৃষ্টি বর্ষণের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলেও তার মূলে রয়েছে অদৃশ্য কুদরতি হাত। তার সম্মতি না থাকলে কোনো প্রক্রিয়াই কার্যকর হবে না। আল্লাহতায়ালা আকাশে ভাসমান মেঘমালা থেকে বৃষ্টি বর্ষণের ধাপগুলো চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন_ 'তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন, অতঃপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি আকাশাচ্ছিত শিলাস্তূপ থেকে শিলাবর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎ ঝলক দৃষ্টিশক্তিকে যেন বিলীন করে দিতে চায়।' (সূরা আন-নূর_৪৩)
বৃষ্টি আল্লাহর বিশেষ কৃপার দান। তিনি দয়া করে বৃষ্টি দ্বারা এ জমিনকে সিক্ত না করলে পৃথিবীর রূপ-লাবণ্য বিলীন হয়ে যেত। জীব-জন্তুর জন্য পৃথিবী তার বাসযোগ্যতা হারাত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষ সত্ত্বেও বৃষ্টির কোনো বিকল্প আবিষ্কৃত হয়নি। কৃষকের ফসল, ভূমির উর্বরতা, গাছ-গাছালির সজীবতা, ফল-ফলাদির উৎপাদন_ সবকিছুই নির্ভর করে বৃষ্টিবর্ষণের ওপর। বৃষ্টিবর্ষণের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থার কোনো ব্যতিক্রম হলেই সহজাত প্রাকৃতিক ধারা ব্যাহত হয়। এই ভূপৃষ্ঠে আল্লাহর রহমতের বারিধারা প্রবাহিত না হলে মানুষের আবাসন উপযোগী স্বচ্ছ, নির্মল প্রকৃতির সন্ধান মানুষ পেত না। পৃথিবীর মিষ্ট পানির প্রধান উৎস বৃষ্টি। পর্যাপ্ত মিষ্ট পানি না হলে পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন বাকি থাকবে না। প্রত্যেকটি প্রাণীর অস্তিত্বের সঙ্গে বৃষ্টির সম্পর্ক ওতপ্রোত। বৃষ্টি যেমন মানুষের জীবনের জন্য আশীর্বাদ, তেমনি কখনও কখনও তা অভিসম্পাত হিসেবেও আবির্ভূত হয়। অনাবৃষ্টি যেমন অসহ্য দানবের রূপলাভ করে তেমনি অতিবৃষ্টিও সৃষ্টিকুলের জন্য দুঃসহের কারণ। রাসূল (সা.) উম্মতকে অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি উভয় ধরনের দুর্যোগ থেকে পানাহ চাওয়ার কথা বলেছেন। মানুষের জন্য আল্লাহর দানকৃত নেয়ামতগুলোর সঠিক ব্যবহার এবং তা ভোগ করার যথাযথ শোকরিয়া না করলে নেয়ামতই অভিশাপের হিংস্র রূপ লাভ করে।
এ জন্য ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে আল্লাহর নেয়ামতরাজি উপভোগ করার পাশাপাশি তার প্রতি যথাযথ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। বৃষ্টির মতো মহান নেয়ামত মানুষকে আল্লাহর কুদরতের প্রতি বিশ্বাসীই করে না বরং তার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধে বাধ্য করে। স্রষ্টার এই একটি মাত্র নেয়ামতের ওপর চিন্তা-গবেষণা করলে এর কোনো কূল-কিনারা পাবে না সৃষ্টিকুল।
zahirbabor@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.