ধন-সম্পদ সম্পর্কে ইসলাম by মুফতি এনায়েতুল্লাহ

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার আগে বনি আদমের পা এক কদমও নড়তে পারবে না। সেগুলো হলো_ ১. সে নিজের জীবনটা কোন পথে কাটিয়েছে? ২. যৌবনের শক্তি কোন কাজে লাগিয়েছে? ৩. ধন-সম্পদ কোন পথে উপার্জন করেছে? ৪. কোন পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করেছে? ৫. দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে যতটুকু জানত, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে। (তিরমিজি)


উলি্লখিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন, আমাদের জীবনের একটি মুহূর্তও অকারণে নষ্ট করা যাবে না। অন্যায় পথে ও আল্লাহর মর্জির খেলাপ কাজে একটি পয়সাও খরচ করা যাবে না। আর দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে ও সে অনুযায়ী চলতে হবে। কারণ, আল্লাহর কাছে একদিন এসবের হিসাব দিতে হবে। আমাদের প্রত্যেককেই মরতে হবে এবং আল্লাহর কাছে হাজির হতে হবে। তাই সেদিনকার মুক্তির ব্যবস্থা পৃথিবী থেকেই করে যেতে হবে।
উলি্লখিত হাদিসে পাঁচটি প্রশ্নের মধ্যে ধন-সম্পদবিষয়ক প্রশ্ন রয়েছে দুটি। এর দ্বারা বোঝা যায়, ধন-সম্পদ হচ্ছে মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আল্লাহতায়ালা মানুষকে ধন-সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন, আবার কারও ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে পরীক্ষা করেন। ক্ষেত্রবিশেষে এই ধন-সম্পদই কারও জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়; কারণ তারা ধন-সম্পদের পেছনে ব্যস্ত থেকে আল্লাহকে ভুলে যায়। আবার কারও জন্য এই ধন-সম্পদ রহমত হয়ে দাঁড়ায়_ যারা মোহমুক্ত হয়ে অকাতরে আল্লাহর পথে ব্যয় করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, 'তোমাদের যা কিছু দেওয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা বৈ নয়। আর আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উত্তম ও স্থায়ী। তোমরা কি বোঝ না?' (সূরা কাসাস : ৬০)
ইসলামের দৃষ্টিতে ধন-সম্পদ হচ্ছে মানুষের কাছে আল্লাহর আমানত। হজরত আলী (রা.) এ সম্পর্কে বলেছেন, 'সম্পদ হচ্ছে আমানত।' কাজেই কোনোভাবেই এই আমানতের খিয়ানত করা যাবে না এবং তা সঠিক কাজে সর্বোত্তম পন্থায় ব্যবহার করতে হবে। আমাদের সমাজের অনেকেই সম্পদ বাড়ানোর কৌশল হিসেবে সুদের কাজ-কারবারে জড়িয়ে পড়ে। সুদের ভয়াবহতা সমাজকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে। ব্যাংক ও মাইক্রোক্রেডিট এনজিও ছাড়াও ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন মাল্টিপারপাস কোম্পানি, সমিতি সুদকে মানুষের দুয়ারে পেঁৗছে দিচ্ছে। অন্যদিকে সুদখোররা নানা কৌশলে দরিদ্র মানুষকে প্রলুব্ধ করছে এবং তাদের ভাগ্যোন্নয়ন ও কল্যাণের নামে সর্বস্বহারা করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান অত্যন্ত কঠোর। সুদখোরদের আল্লাহপাক হাসরের দিন কুকুর ও শূকর বানিয়ে ওঠাবেন।
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। এক মুসলমানকে সহায়তা করা অপর মুসলমানের কর্তব্য। কেউ বিপদে পড়লে অথবা কারও অর্থের প্রয়োজনে তাকে ধার দিয়ে সহায়তা করা যায়, কিন্তু তার বদলে সুদ গ্রহণ চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'সুদের গুনাহ সত্তরটি। এর মধ্যে অপরাধের দিক দিয়ে সর্বনিম্ন গুনাহটি হলো_ আপন মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারের গুনাহর সমান। আর সবচেয়ে জঘন্য প্রকারের সুদ হলো সুদের পাওনা আদায়ের জন্য কোনো মুসলমান ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি করা বা তার সম্পদ দখল করা।' (ইবনে মাজা)
এ থেকে উপলব্ধি করা যায়, সুদ কত বড় জঘন্যতম অপরাধ। সুদ কতটা জঘন্য ও পাপের কাজ তা বোঝানোর জন্য এর সঙ্গে ব্যভিচারের তুলনা করা হয়েছে। ইসলামী বিধানে ব্যভিচার মৃত্যুদণ্ডতুল্য অপরাধ। কিন্তু যারা সুদ গ্রহণ করে তাদের পাপ ব্যভিচারীদের চেয়ে যে বেশি তা বোঝানোর জন্যই এ তুলনা করা হয়েছে।
হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের উদ্দেশে এক ভাষণে সুদের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, 'সুদ থেকে অর্জিত এক দিরহাম পরিমাণ অর্থ ইসলামের দৃষ্টিতে ৩৬ বার ব্যভিচার করা অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ।' (বায়হাকি)
সুদ শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সমাজবদ্ধ মানুষের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এ ব্যবস্থা। সুদ এমনই এক প্রথা যা সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টিতে অবদান রাখে। যে কারণে ইসলাম শুধু সুদ গ্রহণকেই অবৈধ ঘোষণা করেনি, সুদ দেওয়াকেও নিষিদ্ধ করেছে।
হজরত আবু বকর (রা.) বলেন, মূলধনের বেশি গ্রহণকারী এবং বেশি প্রদানকারী উভয়েই দোজখি। অর্থাৎ যে সুদ নেবে এবং যে দেবে, উভয়েই সমান গুনাহগার।
উপরোলি্লখিত হাদিসগুলোর আলোকে এটা স্পষ্ট, সুদ ইসলামের দৃষ্টিতে এক জঘন্য পাপের কাজ। এটা থেকে প্রত্যেক মুসলমানের বেঁচে থাকতে হবে। কারণ আল্লাহতায়ালা আমাদের জন্য কোনটা কল্যাণের পথ আর কোনটা অকল্যাণের তা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন। মানবজীবনে সম্পদের প্রয়োজন আছে; তবে সেটা হালাল হতে হবে। হালাল রুজি অন্বেষণে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা দোয়ায় বলতেন, 'হে আল্লাহ! আপনি যা হালাল করেছেন তা আমার জন্য যথেষ্ট করুন, হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখুন এবং আপনার অনুগ্রহ্নমে আমাকে সমৃদ্ধ করে অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে রক্ষা করুন।'
muftianaet@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.