স্মৃতিতে অম্লান বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ by আদিত্য আরাফাত
আজ বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬৯ সালের এই দিনে তিনি চলে গেছেন জীবনের ওপারে। ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে সংগ্রামী ভূমিকা তিনি পালন করে গেছেন, তা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেশের মানুষকে যুগে যুগে অনুপ্রাণিত করবে বলে মত দিয়েছেন তার সহকর্মীরা।
শুধু বিচারক হিসেবেই নন, দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে তার ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলেও মনে করেন তারা।
এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন বিচারপতি মোর্শেদ। ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান ও ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে তাঁর অপরিসীম ভূমিকা ছিল। এছাড়া তিনি ছিলেন শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের ভাগ্নে।
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের বাবা সৈয়দ আবদুস সালেক ছাত্রজীবনে মেধার পরিচয় দিয়ে পরে বঙ্গীয় সিভিল সার্ভিসের সদস্যপদ পেয়েছিলেন।
বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ১৯২৬ সালের ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি রাজশাহী বিভাগে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে তিনি অনার্সসহ বিএ পাস করেন ১৯৩০ সালে। এমএ পাস করেন ১৯৩২ সালে। সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে আইন পাস করেন ১৯৩৩ সালে ।
১৯৩৯ সালে তিনি লিনকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন।
১৯৫০ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন অংশ নেন। উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছিলেন।
১৯৫৪ সালের যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচনে ও ২১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ণে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য । প্রধান বিচারপতি থাকাকালে নিম্ন আদালতের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে যোগ দেন। একই বছর ঢাকা হাইকোর্টের বিচারক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬২-৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৬৮ সালে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের কৌসুলি স্যার টম উইলিয়ামস ঢাকায় এলে তখন বিচারপতি মোর্শেদ টম উইলিয়ামসের সবচেয়ে নিকটতম সহচর ও উপদেষ্টা হন। বিচারপতি মোর্শেদের জ্ঞান ও আইনের শাসনের প্রতি অনুরাগ দেখে টম উইলিয়ামস বহুবার তাঁর প্রশংসা করেছেন।
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও তিনি রাজনীতিবিদদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।পরবর্তী সময়ে অবশ্য ভগ্ন স্বাস্থ্যজনিত কারণে এবং সে সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দরুণ তিনি নিজেকে খানিকটা গুটিয়ে নিয়েছিলেন।
জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কঠিন পর্যায়ে বিচারপতি মোর্শেদ এগিয়ে এসেছিলেন একজন নির্ভীক সৈনিকের মতো। আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৯৬৯) পুরো পাকিস্তানের যে ৩৫ নেতা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিচারপতি মোর্শেদ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। এই বৈঠকের সময় বিচারপতি মোর্শেদ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তা আমাদের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারাসনে বসে তিনি স্বৈরাচারী সরকার এবং সামরিক আমলে যে সিদ্ধান্ত ও রায় দিয়েছেন। শুধু যুক্তিতর্কই নয়, বলিষ্ঠ ভাষা ও তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমাদের আইনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিচারপতি মোর্শেদ আইনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করতেন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি যেমন সাহসী, নীতিবান ছিলেন বিচারক হিসেবেও তিনি একই রকম। সকল প্রকার লোভ-লালসা ও ভয়-ভীতির উর্ধে থেকে তিনি বিচার কাজ করতেন।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি প্রিন্সিপাল শাহ মুহাম্মদ খোরশেদ লিখিত Justice Syed Mahbub Mursed-A Profile এবং উইকিপিডিয়া।
এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন বিচারপতি মোর্শেদ। ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান ও ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে তাঁর অপরিসীম ভূমিকা ছিল। এছাড়া তিনি ছিলেন শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের ভাগ্নে।
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের বাবা সৈয়দ আবদুস সালেক ছাত্রজীবনে মেধার পরিচয় দিয়ে পরে বঙ্গীয় সিভিল সার্ভিসের সদস্যপদ পেয়েছিলেন।
বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ১৯২৬ সালের ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি রাজশাহী বিভাগে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে তিনি অনার্সসহ বিএ পাস করেন ১৯৩০ সালে। এমএ পাস করেন ১৯৩২ সালে। সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে আইন পাস করেন ১৯৩৩ সালে ।
১৯৩৯ সালে তিনি লিনকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন।
১৯৫০ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন অংশ নেন। উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছিলেন।
১৯৫৪ সালের যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচনে ও ২১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ণে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য । প্রধান বিচারপতি থাকাকালে নিম্ন আদালতের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে যোগ দেন। একই বছর ঢাকা হাইকোর্টের বিচারক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬২-৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৬৮ সালে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের কৌসুলি স্যার টম উইলিয়ামস ঢাকায় এলে তখন বিচারপতি মোর্শেদ টম উইলিয়ামসের সবচেয়ে নিকটতম সহচর ও উপদেষ্টা হন। বিচারপতি মোর্শেদের জ্ঞান ও আইনের শাসনের প্রতি অনুরাগ দেখে টম উইলিয়ামস বহুবার তাঁর প্রশংসা করেছেন।
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও তিনি রাজনীতিবিদদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।পরবর্তী সময়ে অবশ্য ভগ্ন স্বাস্থ্যজনিত কারণে এবং সে সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দরুণ তিনি নিজেকে খানিকটা গুটিয়ে নিয়েছিলেন।
জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কঠিন পর্যায়ে বিচারপতি মোর্শেদ এগিয়ে এসেছিলেন একজন নির্ভীক সৈনিকের মতো। আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৯৬৯) পুরো পাকিস্তানের যে ৩৫ নেতা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিচারপতি মোর্শেদ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। এই বৈঠকের সময় বিচারপতি মোর্শেদ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তা আমাদের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারাসনে বসে তিনি স্বৈরাচারী সরকার এবং সামরিক আমলে যে সিদ্ধান্ত ও রায় দিয়েছেন। শুধু যুক্তিতর্কই নয়, বলিষ্ঠ ভাষা ও তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমাদের আইনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিচারপতি মোর্শেদ আইনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করতেন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি যেমন সাহসী, নীতিবান ছিলেন বিচারক হিসেবেও তিনি একই রকম। সকল প্রকার লোভ-লালসা ও ভয়-ভীতির উর্ধে থেকে তিনি বিচার কাজ করতেন।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি প্রিন্সিপাল শাহ মুহাম্মদ খোরশেদ লিখিত Justice Syed Mahbub Mursed-A Profile এবং উইকিপিডিয়া।
No comments