মুক্তচিন্তার প্রতীক by আনোয়ার হোসেন
গত বছরটি ছিল বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোরশেদের জন্মশতবার্ষিকী। তার জীবনাবসান হয়েছে ৩৩ বছর আগে, ১৯৭৯ সালের ৩ এপ্রিল। তিনি কলিকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি গ্রহণ করেন। তিনি মেধাবী ছিলেন।
যৌবনেই লেখক হিসেবে উপমহাদেশের ভেতরে ও বাইরে সুখ্যাতি অর্জন করেন। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নিকটাত্মীয় ছিলেন তিনি। স্ত্রী লায়লা আর্জুমান্দ বানুও রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন। এ কারণে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেই ছিলেন। কিন্তু সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনে আসেননি কখনও। ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিসেবে একের পর এক যুগান্তকারী রায় প্রদান করে রাজরোষে পড়েন তিনি। তিনি ন্যায় ও সত্যের পথে ছিলেন, গণবিরোধী শাসকদের যা পছন্দ হয়নি। এক সময় এ পদ ছেড়ে দিতেও বাধ্য হন। ১৯৬৮ সালে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানকে ঐক্যবদ্ধভাবে চ্যালেঞ্জ করার জন্য বিরোধী সব দল-মতের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে তাকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী করার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় ছিল। এ সুযোগ আসেনি, তবে ১৯৬৯ সালের প্রবল গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে আইয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ স্বৈরশাসকের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং তার বক্তব্য দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য ছিল পথনির্দেশনা স্বরূপ। জীবনের চলার পথে ধীরে ধীরেই তিনি এ ধরনের ন্যায়নিষ্ঠ অবস্থানের ভিত তৈরি করে নিয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা হাইকোর্টে বিচারক হিসেবে যোগদানের পরও গণমানুষের স্বাধীন আশা ও মুক্ত চিন্তার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী পালনের বিপুল আয়োজনে তিনি ছিলেন কর্ণধার। আইয়ুব খান এবং তার প্রাদেশিক গভর্নর মোনায়েম খান এটা আদৌ পছন্দ করেননি। কিন্তু বিচারপতি মোরশেদ ছিলেন অদম্য। বাঙালির কণ্ঠ রোধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আরও অনেকের বিরুদ্ধে আনা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকেও তিনি ন্যায়সঙ্গত মনে করেননি এবং এ কারণে বিচার বিভাগ থেকে সরে দাঁড়ান।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে সাবেক প্রধান বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা রাখার বিধান হয়েছিল। এ ধরনের পদক্ষেপ বিচার বিভাগকে রাজনীতিকরণের কারণ হয়ে ওঠে বলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। কিন্তু বিচারপতি মোরশেদের মতো নির্ভরশীল উদার ও উচ্চমানের বিচারকের কাঁধে এ দায়িত্ব অর্পিত হলে নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হতো না বলেই ধারণা করা যায়।
তার মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে সাবেক প্রধান বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা রাখার বিধান হয়েছিল। এ ধরনের পদক্ষেপ বিচার বিভাগকে রাজনীতিকরণের কারণ হয়ে ওঠে বলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। কিন্তু বিচারপতি মোরশেদের মতো নির্ভরশীল উদার ও উচ্চমানের বিচারকের কাঁধে এ দায়িত্ব অর্পিত হলে নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হতো না বলেই ধারণা করা যায়।
তার মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
No comments