রেখো মা দাসেরে মনে! by অজয় দাশগুপ্ত
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছেন_ 'রেখো মা দাসেরে মনে...।' এটা কি আক্ষেপ? আমরা তো তাকে মনে রেখেছি। স্কুলে তার কবিতা পাঠ্য। কলেজে তিনি সমাদৃত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে 'মেঘনাদ বধ' অবশ্যই থাকতে হবে। ঢাকা কিংবা রাজশাহী এবং কলকাতা বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্বলজ্বল করেন তিনি।
তার নাটক অভিনীত হয়। তাকে নিয়েও নাটক রচিত হয়েছে। যাত্রাপালাতেও তিনি রয়েছেন। বিশ্ব সাহিত্যের সেরাদের সারিতে তিনি স্থান করে নিতে পারেন অনায়াসে। এই কবি আরও লিখেছেন, 'দাঁড়াও পথিক বর, তিষ্ঠ ক্ষণকাল...'_ এটাতেও তেমনই আক্ষেপ বা মিনতি ঝরে পড়ছে বলে ধরে নেওয়া যায়। তাকে যে একটি স্থানে ক্ষণকাল থেমে স্মরণ করতে হবে, সেটাও তাকেই মিনতি করে বলতে হবে?
তিনি বহুকাল প্রবাসে ছিলেন। কিন্তু মন পড়েছিল স্বদেশে। আর স্বদেশ বলতে তো আমরা এই বাংলাদেশ ভূখণ্ডকেই বুঝি। যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামেই তার শিকড়। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি কপোতাক্ষ নদের তীরের এ গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। এই কবির স্মরণ উৎসব আয়োজন হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের মধুসূদন মঞ্চে। ২৮ মার্চ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যে ব্যানার সাঁটানো হয়েছিল মঞ্চে তাতে লেখা_ 'স্মরণে বরণ করি মধুসূদনে'। সঙ্গে আছে একটি ছবি। এটাই রেওয়াজ_ যাকে স্মরণ করা, তাকে দৃশ্যমানও করে তোলা। এখন ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করা যায় অনেক সহজে। চিত্রশিল্পীর দিনের পর দিন তুলির আঁচড়ের দরকার নেই। একটি ছবি হাতে পেলেই কয়েক মিনিটের মধ্যে সাইজমতো বসে যাবে ব্যানারের এক কোণে। খরচও পড়ে কম।
পশ্চিমবঙ্গের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ একটি গোল বাঁধিয়ে বসেছে এ ব্যানার তৈরি করতে গিয়েই। তারা ২৮ মার্চ যে অনুষ্ঠান করেছে তাতে ব্যানারের এক পাশের ছবিটি মাইকেল মধুসূদনের নয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। দুই কবিই শ্মশ্রুমণ্ডিত। রবীন্দ্রনাথের শেষ জীবনের যত ছবি দেখি, তাতে বেশ লম্বা দাড়ি। কিন্তু যৌবনের ছবিতে দাড়ির আকার ছোট। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মধুসূদনের জীবনাবসান ঘটেছে। সেটা তো যৌবনকালই। এখন বয়স ১৮৮ বছর। তার যেসব ছবি দেখি তাতে দাড়ির আকার ছোট। ব্যানারের জন্য যারা ছবি নির্বাচন করেছেন তাতে মধুসূদনের পরিবর্তে রবীন্দ্রনাথের ছবি ব্যবহারের এটা একটা কারণ হতে পারে_ দাড়ির আকারটাই বিবেচনায় এসেছে। তাদের মনে হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের দাড়ি তো লম্বা এবং মধুসূদনের ছোট, তাই ছোট দাড়ির মানুষটি মধুসূদন না হয়ে যায় না। আরেকটি কারণ হতে পারে_ সার্ধশত রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর কারণে তারা রবীন্দ্রনাথে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকরা এক পলকেই ভুলটি ধরতে পেরেছেন। যারা ব্যানার তৈরি করেছেন, তাদের দৃষ্টিতে সেটা আসেনি। এখন জনরোষে পড়েছেন। সংবাদপত্রে লেখালেখি হচ্ছে। বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি আসছে। তবে মধুসূদন দত্ত নামের মানুষটি এসবের ঊধর্ে্ব। বলার যদি সুযোগ থাকত, তাহলে হয়তো অভিমানভরা কণ্ঠে বলতেন, 'রেখো মা দাসেরে মনে...'_ এমনি তো এ মিনতি করিনি! আমার জনমটাই যে উপেক্ষায় ভরা!!
তিনি বহুকাল প্রবাসে ছিলেন। কিন্তু মন পড়েছিল স্বদেশে। আর স্বদেশ বলতে তো আমরা এই বাংলাদেশ ভূখণ্ডকেই বুঝি। যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামেই তার শিকড়। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি কপোতাক্ষ নদের তীরের এ গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। এই কবির স্মরণ উৎসব আয়োজন হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের মধুসূদন মঞ্চে। ২৮ মার্চ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যে ব্যানার সাঁটানো হয়েছিল মঞ্চে তাতে লেখা_ 'স্মরণে বরণ করি মধুসূদনে'। সঙ্গে আছে একটি ছবি। এটাই রেওয়াজ_ যাকে স্মরণ করা, তাকে দৃশ্যমানও করে তোলা। এখন ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করা যায় অনেক সহজে। চিত্রশিল্পীর দিনের পর দিন তুলির আঁচড়ের দরকার নেই। একটি ছবি হাতে পেলেই কয়েক মিনিটের মধ্যে সাইজমতো বসে যাবে ব্যানারের এক কোণে। খরচও পড়ে কম।
পশ্চিমবঙ্গের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ একটি গোল বাঁধিয়ে বসেছে এ ব্যানার তৈরি করতে গিয়েই। তারা ২৮ মার্চ যে অনুষ্ঠান করেছে তাতে ব্যানারের এক পাশের ছবিটি মাইকেল মধুসূদনের নয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। দুই কবিই শ্মশ্রুমণ্ডিত। রবীন্দ্রনাথের শেষ জীবনের যত ছবি দেখি, তাতে বেশ লম্বা দাড়ি। কিন্তু যৌবনের ছবিতে দাড়ির আকার ছোট। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মধুসূদনের জীবনাবসান ঘটেছে। সেটা তো যৌবনকালই। এখন বয়স ১৮৮ বছর। তার যেসব ছবি দেখি তাতে দাড়ির আকার ছোট। ব্যানারের জন্য যারা ছবি নির্বাচন করেছেন তাতে মধুসূদনের পরিবর্তে রবীন্দ্রনাথের ছবি ব্যবহারের এটা একটা কারণ হতে পারে_ দাড়ির আকারটাই বিবেচনায় এসেছে। তাদের মনে হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের দাড়ি তো লম্বা এবং মধুসূদনের ছোট, তাই ছোট দাড়ির মানুষটি মধুসূদন না হয়ে যায় না। আরেকটি কারণ হতে পারে_ সার্ধশত রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর কারণে তারা রবীন্দ্রনাথে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকরা এক পলকেই ভুলটি ধরতে পেরেছেন। যারা ব্যানার তৈরি করেছেন, তাদের দৃষ্টিতে সেটা আসেনি। এখন জনরোষে পড়েছেন। সংবাদপত্রে লেখালেখি হচ্ছে। বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি আসছে। তবে মধুসূদন দত্ত নামের মানুষটি এসবের ঊধর্ে্ব। বলার যদি সুযোগ থাকত, তাহলে হয়তো অভিমানভরা কণ্ঠে বলতেন, 'রেখো মা দাসেরে মনে...'_ এমনি তো এ মিনতি করিনি! আমার জনমটাই যে উপেক্ষায় ভরা!!
No comments