পবিত্র কোরআনের আলো-মুসলমানদের রক্ষার জন্য মক্কা বিজয়ের পূর্বাভাস

৭৪. ফালইউক্বা-তিল ফী ছাবীলিল্লা-হি ল্লাযীনা ইয়াশ্রুনাল হাইয়া-তাদ্ দুনইয়া-বিলআ-খিরাতি; ওয়ামায়ুঁ্যক্বা-তিল ফী ছাবীলি ল্লা-হি ফাইউক্বতাল আও ইয়াগ্লিব ফাছাওফা নু'তীহি আজরান আ'যীমা-। ৭৫. ওয়ামা-লাকুম্ লা-তুক্বা-তিলুনা ফী ছাবীলি ল্লা-হি ওয়ালমুছ্তাদ্ব্আ'ফীনা মিনার্ রিজা-লি ওয়ানি্নছা-য়ি ওয়ালওয়িলদা-নি ল্লাযীনা ইয়াক্বুলুনা রাব্বানা-


আখ্রিজনা-মিন হা-যিহিল ক্বারইয়াতিয্ যা-লিমি আহ্লুহা-ওয়াজ্আ'ল্ লানা-মিল্লাদুনকা নাসিরা-। [সুরা : আন্ নিছা, আয়াত : ৭৪-৭৫]

অনুবাদ
৭৪. তবে প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আল্লাহর পথে জিহাদ করা সেসব লোকের বিরুদ্ধে, যারা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বেছে নিয়েছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করবে সে এতে নিহত হোক বা বিজয়ী হোক, আমি তাকে মহাবিনিময় দান করব।
৭৫. আর তোমাদের কাছে কী ওজর আছে যে তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে না। নিজেদের রক্ষা করার জন্য এবং তোমাদের মধ্যে কিছু দুর্বল পুরুষ আছে, এ ছাড়া নারী ও শিশুরা আছে তাদের রক্ষার জন্য। তারা প্রার্থনা করছে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের এই নগর থেকে বের করে নাও, যার অধিবাসীরা ভয়ংকর জালিম। আর আমাদের জন্য তোমার কাছ থেকে কোনো অভিভাবক দাঁড় করাও এবং আমাদের জন্য তোমার কাছ থেকে কোনো সাহায্যকারী পাঠাও।

ব্যাখ্যা
এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে জিহাদের অনিবার্যতা প্রতিপন্ন করে এর প্রতি মুমিনদের আহ্বান জানানো হয়েছে। জিহাদ করতে হয় মূলত সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। অন্যায়-অত্যাচার প্রতিহত করার জন্য এবং নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য। এ তিনটি কারণই এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে যারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বেছে নিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ। কারণ তারা সত্যকে অস্বীকার করে এবং অন্যায়-অবিচারের রাজত্ব কায়েম করে।
এটাই মূলত সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে জিহাদ। পরের আয়াতে দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এর একটি হলো মক্কায় কুরাইশদের অত্যাচার-নিপীড়ন আর দ্বিতীয়টি নারী, শিশু ও দুর্বলসহ সবার আত্মরক্ষা।
মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরতের পর মক্কায়ও বহু মুসলমান থেকে গিয়েছিলেন নানা কারণে। শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণেও অনেকে হিজরত করতে পারছিলেন না। তা ছাড়া নারী ও শিশুদের নিয়ে হিজরত করার সামর্থ্য ও সাহস অনেকের ছিল না। মক্কায় কুরাইশরা তাদের ওপর নিদারুণ অত্যাচার চালাত। এসব দরিদ্র ও অক্ষম মুসলমান মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানাত। এ ছাড়া তাদের আর কিছু করার ছিল না। এ অবস্থার মধ্য দিয়েই মুসলমানদের ভাগ্যে একদিন এসেছিল মক্কা বিজয়। মক্কা বিজয় যেন নিপীড়িতদের দোয়া কবুল হওয়ারই এক ঘটনা। এভাবেই মক্কা বিজয়ের পর নিপীড়িত মুসলমানরা শান্তি ও সম্মান লাভ করল। ৭৫ নম্বর আয়াতে এই ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, মক্কা বিজয় ইসলামের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.