স্মরণ-ড. এম এ সাত্তার by নীলুফার বেগম
ড. এম এ সাত্তার ১৯৩২ সালের ১ জুন চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার (সাবেক হাজীগঞ্জ থানা) নাওড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আজিজুর রহমান পাটোয়ারী ছিলেন গ্রামোন্নয়নের পথিকৃৎ, শ্রেষ্ঠ সমবায়ী, সার্থক সমাজসেবী এবং শিক্ষানুরাগী। মা করফুলেন্নেছা ছিলেন একজন সুগৃহিণী ও আদর্শ মাতা।
দাদা ফরিদউদ্দিন ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি শৈশবে দাদা-দাদির স্নেহে বেড়ে ওঠেন। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে সাত্তার ছিলেন মা-বাবার জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর জীবিত ভাইয়ের নাম মোশারফ হোসেন পাটোয়ারী। বাল্যকাল থেকেই ড. সাত্তার ছিলেন সুতীক্ষ্ন মেধার অধিকারী এবং লেখাপড়ার প্রতি বিশেষ অনুরাগী। তিনি তাঁর নিজ গ্রাম নাওড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে অর্থনীতিতে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে করাচিতে ইনস্টিটিউট অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে এমএ ভর্তি হন। আর ওই ভর্তির জন্য ঢাকায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পরীক্ষায় তিনি প্রথম হন এবং মাসিক ২৭৫ টাকা করে বৃত্তি লাভ করেন। এরই মধ্যে তিনি সিএসএস পরীক্ষায় অংশ নেন ও লিখিত পরীক্ষায় সমগ্র পাকিস্তানে প্রথম হন এবং মৌখিক পরীক্ষার ফলসহ সপ্তম স্থান অধিকার করেন। একই বছর তিনি লাহোর সিভিল সার্ভিস ট্রেনিং একাডেমীতে যোগ দেন। ট্রেনিং শেষে তিনি যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান এবং সেখানে লোকপ্রশাসনে ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়াম কলেজ থেকে ডেভেলপমেন্ট ইকোনোমিঙ্ েএমএ ডিগ্রি পান। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাজ্যের টাফ্ট্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি লাভ করেন।
ড. এম এ সাত্তার তাঁর প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬০ সালের জুলাই মাসে। তিনি সিএসপি অফিসার হিসেবে মৌলভীবাজারে এসডিও পদে যোগদান করেন। এখানে দুই বছর কর্মরত থেকে ১৯৬২ সালে ড. সাত্তার নারায়ণগঞ্জ মহকুমার এসডিও পদে বদলি হয়ে আসেন। এ সময় মিস এলেন মেরি হ্যারিংটন নারায়ণগঞ্জে আসেন এবং ড. সাত্তারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এসডিওর বাংলোর পাশের হেমায়েত উদ্দীন চৌধুরীর বাসায় বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। বিয়ে পড়ান জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। বিয়ে হয়েছিল ইসলামমতে। ড. সাত্তারের চার ছেলে। তাঁরা সুশিক্ষিত ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দেশ ও বাঙালি জাতির জন্য গোপনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। দেশমাতৃকার পক্ষে 'দি পিপল' পত্রিকায় ছদ্মনামে ফিচারও লিখেছেন। এ সময় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাঁকে গ্রেপ্তার করে ও রাওয়ালপিণ্ডির কারাগারে আটক রাখে।
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। তাঁর বিদেশি স্ত্রীর চেষ্টায় পাকিস্তান থেকে পালিয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৩ সালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে 'বেইস' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁর স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু হয়। ফিডার স্কুল, নারী শিক্ষা বৃত্তি প্রকল্পের যে সূচনা তিনি দীর্ঘদিন আগে করেছিলেন সেটিই আজ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত। তাঁর চিন্তা-চেতনা এবং ধ্যানধারণার আলোকেই আজ সরকার নারী শিক্ষার প্রসারে কাজ করে চলেছে। তাঁরই পথ সরকার কর্তৃক অনুসৃত এবং গৃহীত হওয়ায় এটাই প্রমাণিত হয়, ড. এম এ সাত্তার প্রকৃত অর্থেই শিক্ষাক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ইসলামাবাদে অবস্থানকালে ২৬ মে ১৯৯২ সালে 'হোটেল হলিডে ইন'-এর নির্জন কক্ষে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ড. সাত্তারের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনে সশ্রদ্ধচিত্তে তাঁকে স্মরণ করছি এবং পরম করুণাময়ের কাছে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
নীলুফার বেগম
ড. এম এ সাত্তার তাঁর প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬০ সালের জুলাই মাসে। তিনি সিএসপি অফিসার হিসেবে মৌলভীবাজারে এসডিও পদে যোগদান করেন। এখানে দুই বছর কর্মরত থেকে ১৯৬২ সালে ড. সাত্তার নারায়ণগঞ্জ মহকুমার এসডিও পদে বদলি হয়ে আসেন। এ সময় মিস এলেন মেরি হ্যারিংটন নারায়ণগঞ্জে আসেন এবং ড. সাত্তারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এসডিওর বাংলোর পাশের হেমায়েত উদ্দীন চৌধুরীর বাসায় বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। বিয়ে পড়ান জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। বিয়ে হয়েছিল ইসলামমতে। ড. সাত্তারের চার ছেলে। তাঁরা সুশিক্ষিত ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দেশ ও বাঙালি জাতির জন্য গোপনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। দেশমাতৃকার পক্ষে 'দি পিপল' পত্রিকায় ছদ্মনামে ফিচারও লিখেছেন। এ সময় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাঁকে গ্রেপ্তার করে ও রাওয়ালপিণ্ডির কারাগারে আটক রাখে।
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। তাঁর বিদেশি স্ত্রীর চেষ্টায় পাকিস্তান থেকে পালিয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৩ সালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে 'বেইস' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁর স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু হয়। ফিডার স্কুল, নারী শিক্ষা বৃত্তি প্রকল্পের যে সূচনা তিনি দীর্ঘদিন আগে করেছিলেন সেটিই আজ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত। তাঁর চিন্তা-চেতনা এবং ধ্যানধারণার আলোকেই আজ সরকার নারী শিক্ষার প্রসারে কাজ করে চলেছে। তাঁরই পথ সরকার কর্তৃক অনুসৃত এবং গৃহীত হওয়ায় এটাই প্রমাণিত হয়, ড. এম এ সাত্তার প্রকৃত অর্থেই শিক্ষাক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ইসলামাবাদে অবস্থানকালে ২৬ মে ১৯৯২ সালে 'হোটেল হলিডে ইন'-এর নির্জন কক্ষে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ড. সাত্তারের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনে সশ্রদ্ধচিত্তে তাঁকে স্মরণ করছি এবং পরম করুণাময়ের কাছে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
নীলুফার বেগম
No comments