সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করায় অনুমতি নিষ্প্রয়োজন-দুদক আইনের সংস্কার

প্রতিষ্ঠার পর বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার শিকার হয়েছে দুদক। ফল—দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির অকার্যকারিতা। এ ব্যাপারে নতুন হলো সংসদে উত্থাপিত সরকারের একটি বিল। এই বিলে প্রস্তাব করা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদক কোনো মামলা করতে গেলে সরকারের পূর্বানুমতি নিতে হবে।


এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব নিয়োগের স্বাধীনতাও এই বিলে রদ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আশার কথা, আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বিলের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন। তাঁদের আপত্তি আমলে নেওয়া হোক এবং দুর্নীতি দমনে দুদকের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হোক।
দুর্বল দুদক দুর্নীতি দমন করতে পারে না। জনগণের বিভিন্ন অংশ, সুশীল সমাজ, নাগরিক অধিকারবাদী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগীরা পর্যন্ত নিরন্তর দুদককে শক্তিশালী করার দাবি তুলেছেন, একে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার প্রয়োজনের কথা জানিয়েছেন। সেসব চাওয়া যাতে ‘সকলই গরল ভেল’ না হয়, সেদিকেই সরকারকে নজর দিতে হবে। সরকারের তরফে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ সুরক্ষার প্রয়োজন নেই। পরিষ্কারভাবে, একজন আমলা-কর্মকর্তা যখন জানবেন, ‘কৃতকর্মের’ জন্য তাঁকে আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে না, তখন কি তাঁর দুর্নীতিপ্রবণতা বাড়বে না?
আমরা জানি, কেবল রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ীদের একাংশই নয়, সরকারি কর্মকর্তাদের বড় একটি অংশও কম-বেশি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। দ্বিতীয়ত, কেউ দুর্নীতি করুন বা না করুন, আইনের চোখে তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া আইনি সাম্যের পরিপন্থী। সুতরাং প্রস্তাবিত বিল প্রসঙ্গে সংসদীয় কমিটি এবং অর্থমন্ত্রীর আপত্তি সুবিবেচনাপ্রসূত।
এ ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মন্তব্যটিও প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্পিত দায়িত্ব পালনের অভিযোগে মামলা করতে গেলে সরকারের পূর্বানুমতি লাগবে। এটা বোধগম্য, কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান আর প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তাকে একাকার করে দেখা ঠিক হবে না। কর্মকর্তাদের মধ্যে কর্মনিষ্ঠা ও দুর্নীতির প্রতি ভীতি জাগাতে গেলে দুদকের হাতে স্বাধীনভাবে মামলা দায়েরের ক্ষমতা রাখতেই হবে।
আশা করি, সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল, সংসদীয় কমিটি ও অর্থমন্ত্রীসহ নাগরিক সমাজের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি কমানোর প্রত্যয় থেকে প্রস্তাবিত বিলটি সংশোধনসহ সংসদে পাস করা হবে। দুর্নীতিবিরোধী সমাজ গড়তে যেমন দুদককে শক্তিশালী ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার বিকল্প নেই, তেমনি দুর্নীতিবাজদের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত আইন থাকাই যথেষ্ট নয়, এর সুষ্ঠু প্রয়োগই জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.