নরসিংদীতে র্যাবের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত ৬-ঢাকায়ও একজনের মৃত্যু
নরসিংদীতে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ছয়জন নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা সবাই ছিনতাইকারী বলে দাবি করেছে র্যাব। গতকাল সোমবার দুপুরে নরসিংদী সদর উপজেলার নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কের খাটেহারা এলাকায় কথিত ওই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় দুই র্যাব সদস্যসহ আরো পাঁচজন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন ছিনতাইকারী দলের সদস্য।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান। তারা হলো সদর উপজেলার দক্ষিণ বিলাসদী এলাকার নাহিদ মিয়া (৩০), শহরের বেলানগর এলাকার আরিফ মিয়া (৩৩), উপজেলার পাঁচদোনা গ্রামের মাইক্রোবাসচালক মোশারফ হোসেন (২৮) ও শিবপুর উপজেলার কারার চর গ্রামের জামাল মিয়া (৪৫)।
রবিবার রাতে রাজধানীর কাফরুল এলাকায় র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে এক যুবক। তার নাম মোমিন ওরফে ল্যাংড়া (৩২)।
র্যাব ও পুলিশ দাবি করেছে, মোমিন এলাকায় ল্যাংড়া মোমিন নামে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১০টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে নিহতের স্বজনদের দাবি, মোমিনকে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গুলির ঘটনা ঘটেছে। তাকে ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেলা হয়েছে।
নরসিংদী : র্যাব-১১-এর কর্মকর্তারা জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে নরসিংদী র্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন করে এক ব্যবসায়ী শহরে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার খবর দেন। ওই ব্যবসায়ী জানান, ছিনতাইকারীরা তাঁর ৪০ হাজার টাকা লুট করে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে পালিয়েছে। এ খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক র্যাব ক্যাম্প থেকে তাদের টহলদলকে বিষয়টি জানিয়ে সাদা মাইক্রোবাস নিয়ে যাওয়া ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
দুপুর পৌনে ৩টার দিকে র্যাবের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) জামালের নেতৃত্বে একটি টহলদল মাইক্রোবাস নিয়ে সদর উপজেলার নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কের খাটেহারা এলাকায় টহল দিচ্ছিল।
ছিনতাইকারীরা সাধারণ মানুষ ভেবে একটি ট্রাক দিয়ে র্যাবের মাইক্রোবাসটির সামনে থেকে গতিরোধ করে। পেছনে থামে আরেকটি মাইক্রোবাস। ওই মাইক্রোবাস থেকে কয়েকজন ছিনতাইকারী বেরিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্কের চেষ্টা চালায়। র্যাব সদস্যরা ছিনতাইকারীদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি ছোড়েন।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় আধা ঘণ্টা গোলাগুলি হয়। একপর্যায়ে র্যাবের আরো তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গেলে ছিনতাইকারীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।
পরে র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছিনতাইকারীদের বহনকারী মাইক্রোবাসে দুজনের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। ট্রাকের মধ্যে পাওয়া যায় একজনের মৃতদেহ। এ ছাড়া সড়কের ওপর এক ব্যক্তির এবং সড়কের দুই পাশে আরো দুজনের লাশ পাওয়া যায়।
পালানোর চেষ্টার সময় গুলিবিদ্ধ তিনজনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তারা হলো নরসিংদী শহরের বিলাসদী এলাকার শাওন মিয়া (২৫), সদর উপজেলার পাঁচদোনা গ্রামের মনির হোসেন (৩২), রায়পুরা উপজেলার পিরিজকান্দী গ্রামের অমর বিশ্বাস (৩২) ও শিবপুর উপজেলার কুমরাদী গ্রামের মাসুম মিয়া (২৭)।
তাদের মধ্যে মনির ছাড়া বাকিরা সবাই গুলিবিদ্ধ। তাদের প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোলাগুলির ঘটনায় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খাটেহারা এলাকায় ছিনতাইকারীদের সাদা মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো-চ ১৩-৩৫৭৩) পড়ে রয়েছে। এটির চারপাশের কাচ গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে সড়কে। গতিরোধের জন্য ছিনতাইকারীদের ব্যবহার করা ট্রাকের সামনের কাচেও গুলির ছিদ্র রয়েছে।
ঘটনার পর সেখানে আশপাশের এলাকার শত শত মানুষ ভিড় জমায়। খবর পেয়ে নরসিংদীর পুলিশ সুপার ড. মহিদ উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পাশের বাগহাটা গ্রামের আল-আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হঠাৎ করে গুলির শব্দে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। শব্দ থামার পর শুনি র্যাব ও ছিনতাইকারীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। ঘটনাস্থলে এসে দেখি মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন জায়গায় লাশ পড়ে আছে। ধানক্ষেতে তল্লাশি চালিয়ে আরো কয়েকজনকে আটক করে র্যাব।'
গ্রেপ্তার করা মনির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তিনি পাঁচদোনা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী। তাঁর পূর্বপরিচিত জামাল তাঁকে কাজের কথা বলে সঙ্গে নিয়ে আসে। যাওয়ার পথে তারা তাঁকে নরসিংদী নতুন বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়। পরে গুলির শব্দ শুনে তিনি ঘটনাস্থলে এলে র্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত আরেক ব্যক্তি মাসুম জানান, তিনি গাড়িচালক। জামাল তাঁকে কাজের কথা বলে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে আসে। এরপর এ ঘটনা ঘটে। তাঁরা কোনো ছিনতাই করেনি বলে তিনি দাবি করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন র্যাবের নরসিংদী ক্যাম্পের উপপরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বলেন, 'ছিনতাইকারীরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আমরাও পাল্টা গুলি ছুড়ি। ওই সময় আমরা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা ছিলাম। ছিনতাইকারীদের ছোড়া গুলি আমার শরীরে লাগলে আমি পড়ে যাই এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।'
র্যাব-১১-এর নরসিংদী ক্যাম্পের কম্পানি কমান্ডার মেজর খন্দকার গোলাম সারোয়ার জানান, ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে টহলে থাকা র্যাব সদস্যরা অভিযান শুরু করেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে ছিনতাইকারীরা র্যাবের টহল গাড়িকে সাধারণ মানুষ বহনকারী গাড়ি ভেবে গতিরোধ করে গুলি ছোড়ে। র্যাব সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় ২৫০টি গুলিবিনিময় হয়েছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে ছিনতাইকারীদের ব্যবহৃত তিনটি পিস্তল, একটি কাটা রাইফেল, তিনটি গুলি ও ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
মেজর গোলাম সারোয়ার জানান, গোলাগুলিতে র্যাবের আরেক সদস্য সাইফুল ইসলাম আহত হয়েছেন।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ছিনতাইকারীদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ও ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকা : কাফরুল থানার ওসি আবদুল লতিফ র্যাবের বরাত দিয়ে কালের কণ্ঠকে জানান, রবিবার রাত দেড়টার দিকে মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনের কৃষি ব্যাংকের পেছনে 'বন্দুকযুদ্ধের' এ ঘটনা ঘটে। র্যাব-৪-এর একটি দলের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে মোমিন আহত হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মোমিনের কাছে গুলিসহ একটি রিভলবার পাওয়া গেছে।
ওসি জানান, মোমিনের বিরুদ্ধে কাফরুলসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ ১০টি মামলা রয়েছে।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, র্যাব-৪-এর একটি দল কাফরুল থানার মিরপুরের ১৩ নম্বর সেকশনের এ ব্লকে ১২ নম্বর রোডে টিনশেড কলোনির ৩৮৩ নম্বর বাসার সামনে অভিযান চালায়। মোমিন ও তার সহযোগীরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছুড়তে থাকে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এতে মোমিন আহত হয়। অন্যরা পালিয়ে যায়।
পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিভর্তি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
মোমিনের স্ত্রী জোৎস্না আক্তার পলি মর্গে লাশ শনাক্ত করতে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, রবিবার দুপুর ১টার দিকে মোমিনকে বাসার সামনে থেকে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক ধরে নিয়ে যায়। এরপর তার মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন করলে সে বলেছিল, 'আমি খুব বিপদে আছি, পরে কথা হবে।'
পলি জানান, পরে সোমবার সকাল ৮টার দিকে রুবেল নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা ফোন করে তাঁকে বলেন, 'তোর স্বামীর লাশ মর্গে পড়ে আছে, তুই গিয়ে দেখে আয়।'
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মোমিনের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সে কেরানীগঞ্জের পূর্ব চড়াইলে হালিম মিয়ার বাসায় পাঁচ মাস ধরে ভাড়া থাকত। এর আগে প্রায় চার বছর মিরপুরের সেনপাড়ায় থাকত। সেখানে মোমিনের একটি দর্জি দোকান ছিল। এ ছাড়া সে জিপারের ব্যবসা করত। তখন ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুবেলের সঙ্গে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। মোমিনের বাম পা জন্মগতভাবে খোঁড়া থাকায় অনেকে তাকে ল্যাংড়া ডাকত।
মোমিন সন্ত্রাসী ছিল না বলে দাবি করে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কেউ টাকা দিয়ে তাকে হত্যা করিয়েছে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান। তারা হলো সদর উপজেলার দক্ষিণ বিলাসদী এলাকার নাহিদ মিয়া (৩০), শহরের বেলানগর এলাকার আরিফ মিয়া (৩৩), উপজেলার পাঁচদোনা গ্রামের মাইক্রোবাসচালক মোশারফ হোসেন (২৮) ও শিবপুর উপজেলার কারার চর গ্রামের জামাল মিয়া (৪৫)।
রবিবার রাতে রাজধানীর কাফরুল এলাকায় র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে এক যুবক। তার নাম মোমিন ওরফে ল্যাংড়া (৩২)।
র্যাব ও পুলিশ দাবি করেছে, মোমিন এলাকায় ল্যাংড়া মোমিন নামে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১০টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে নিহতের স্বজনদের দাবি, মোমিনকে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গুলির ঘটনা ঘটেছে। তাকে ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেলা হয়েছে।
নরসিংদী : র্যাব-১১-এর কর্মকর্তারা জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে নরসিংদী র্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন করে এক ব্যবসায়ী শহরে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার খবর দেন। ওই ব্যবসায়ী জানান, ছিনতাইকারীরা তাঁর ৪০ হাজার টাকা লুট করে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে পালিয়েছে। এ খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক র্যাব ক্যাম্প থেকে তাদের টহলদলকে বিষয়টি জানিয়ে সাদা মাইক্রোবাস নিয়ে যাওয়া ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
দুপুর পৌনে ৩টার দিকে র্যাবের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) জামালের নেতৃত্বে একটি টহলদল মাইক্রোবাস নিয়ে সদর উপজেলার নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কের খাটেহারা এলাকায় টহল দিচ্ছিল।
ছিনতাইকারীরা সাধারণ মানুষ ভেবে একটি ট্রাক দিয়ে র্যাবের মাইক্রোবাসটির সামনে থেকে গতিরোধ করে। পেছনে থামে আরেকটি মাইক্রোবাস। ওই মাইক্রোবাস থেকে কয়েকজন ছিনতাইকারী বেরিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্কের চেষ্টা চালায়। র্যাব সদস্যরা ছিনতাইকারীদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি ছোড়েন।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় আধা ঘণ্টা গোলাগুলি হয়। একপর্যায়ে র্যাবের আরো তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গেলে ছিনতাইকারীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।
পরে র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছিনতাইকারীদের বহনকারী মাইক্রোবাসে দুজনের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। ট্রাকের মধ্যে পাওয়া যায় একজনের মৃতদেহ। এ ছাড়া সড়কের ওপর এক ব্যক্তির এবং সড়কের দুই পাশে আরো দুজনের লাশ পাওয়া যায়।
পালানোর চেষ্টার সময় গুলিবিদ্ধ তিনজনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তারা হলো নরসিংদী শহরের বিলাসদী এলাকার শাওন মিয়া (২৫), সদর উপজেলার পাঁচদোনা গ্রামের মনির হোসেন (৩২), রায়পুরা উপজেলার পিরিজকান্দী গ্রামের অমর বিশ্বাস (৩২) ও শিবপুর উপজেলার কুমরাদী গ্রামের মাসুম মিয়া (২৭)।
তাদের মধ্যে মনির ছাড়া বাকিরা সবাই গুলিবিদ্ধ। তাদের প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোলাগুলির ঘটনায় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খাটেহারা এলাকায় ছিনতাইকারীদের সাদা মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো-চ ১৩-৩৫৭৩) পড়ে রয়েছে। এটির চারপাশের কাচ গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে সড়কে। গতিরোধের জন্য ছিনতাইকারীদের ব্যবহার করা ট্রাকের সামনের কাচেও গুলির ছিদ্র রয়েছে।
ঘটনার পর সেখানে আশপাশের এলাকার শত শত মানুষ ভিড় জমায়। খবর পেয়ে নরসিংদীর পুলিশ সুপার ড. মহিদ উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পাশের বাগহাটা গ্রামের আল-আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হঠাৎ করে গুলির শব্দে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। শব্দ থামার পর শুনি র্যাব ও ছিনতাইকারীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। ঘটনাস্থলে এসে দেখি মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন জায়গায় লাশ পড়ে আছে। ধানক্ষেতে তল্লাশি চালিয়ে আরো কয়েকজনকে আটক করে র্যাব।'
গ্রেপ্তার করা মনির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তিনি পাঁচদোনা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী। তাঁর পূর্বপরিচিত জামাল তাঁকে কাজের কথা বলে সঙ্গে নিয়ে আসে। যাওয়ার পথে তারা তাঁকে নরসিংদী নতুন বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়। পরে গুলির শব্দ শুনে তিনি ঘটনাস্থলে এলে র্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত আরেক ব্যক্তি মাসুম জানান, তিনি গাড়িচালক। জামাল তাঁকে কাজের কথা বলে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে আসে। এরপর এ ঘটনা ঘটে। তাঁরা কোনো ছিনতাই করেনি বলে তিনি দাবি করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন র্যাবের নরসিংদী ক্যাম্পের উপপরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বলেন, 'ছিনতাইকারীরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আমরাও পাল্টা গুলি ছুড়ি। ওই সময় আমরা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা ছিলাম। ছিনতাইকারীদের ছোড়া গুলি আমার শরীরে লাগলে আমি পড়ে যাই এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।'
র্যাব-১১-এর নরসিংদী ক্যাম্পের কম্পানি কমান্ডার মেজর খন্দকার গোলাম সারোয়ার জানান, ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে টহলে থাকা র্যাব সদস্যরা অভিযান শুরু করেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে ছিনতাইকারীরা র্যাবের টহল গাড়িকে সাধারণ মানুষ বহনকারী গাড়ি ভেবে গতিরোধ করে গুলি ছোড়ে। র্যাব সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় ২৫০টি গুলিবিনিময় হয়েছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে ছিনতাইকারীদের ব্যবহৃত তিনটি পিস্তল, একটি কাটা রাইফেল, তিনটি গুলি ও ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
মেজর গোলাম সারোয়ার জানান, গোলাগুলিতে র্যাবের আরেক সদস্য সাইফুল ইসলাম আহত হয়েছেন।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ছিনতাইকারীদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ও ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকা : কাফরুল থানার ওসি আবদুল লতিফ র্যাবের বরাত দিয়ে কালের কণ্ঠকে জানান, রবিবার রাত দেড়টার দিকে মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনের কৃষি ব্যাংকের পেছনে 'বন্দুকযুদ্ধের' এ ঘটনা ঘটে। র্যাব-৪-এর একটি দলের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে মোমিন আহত হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মোমিনের কাছে গুলিসহ একটি রিভলবার পাওয়া গেছে।
ওসি জানান, মোমিনের বিরুদ্ধে কাফরুলসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ ১০টি মামলা রয়েছে।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, র্যাব-৪-এর একটি দল কাফরুল থানার মিরপুরের ১৩ নম্বর সেকশনের এ ব্লকে ১২ নম্বর রোডে টিনশেড কলোনির ৩৮৩ নম্বর বাসার সামনে অভিযান চালায়। মোমিন ও তার সহযোগীরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছুড়তে থাকে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এতে মোমিন আহত হয়। অন্যরা পালিয়ে যায়।
পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিভর্তি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
মোমিনের স্ত্রী জোৎস্না আক্তার পলি মর্গে লাশ শনাক্ত করতে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, রবিবার দুপুর ১টার দিকে মোমিনকে বাসার সামনে থেকে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক ধরে নিয়ে যায়। এরপর তার মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন করলে সে বলেছিল, 'আমি খুব বিপদে আছি, পরে কথা হবে।'
পলি জানান, পরে সোমবার সকাল ৮টার দিকে রুবেল নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা ফোন করে তাঁকে বলেন, 'তোর স্বামীর লাশ মর্গে পড়ে আছে, তুই গিয়ে দেখে আয়।'
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মোমিনের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সে কেরানীগঞ্জের পূর্ব চড়াইলে হালিম মিয়ার বাসায় পাঁচ মাস ধরে ভাড়া থাকত। এর আগে প্রায় চার বছর মিরপুরের সেনপাড়ায় থাকত। সেখানে মোমিনের একটি দর্জি দোকান ছিল। এ ছাড়া সে জিপারের ব্যবসা করত। তখন ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুবেলের সঙ্গে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। মোমিনের বাম পা জন্মগতভাবে খোঁড়া থাকায় অনেকে তাকে ল্যাংড়া ডাকত।
মোমিন সন্ত্রাসী ছিল না বলে দাবি করে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কেউ টাকা দিয়ে তাকে হত্যা করিয়েছে।
No comments