সহজ-সরল-স্রষ্টার নিয়ামত কোন পাপে বিষ হয়ে যায়! by কনকচাঁপা
ছোটবেলায় দেখেছি বাবা-চাচা-খালু-মামাদের রোজ সকালে হাট-বাজারে যাওয়া। তরতাজা বাজার আনা থেকে কোটা-বাছা- মা-খালাদের রান্নার তৎপরতা, সেই রান্নার সুগন্ধ নাসারন্ধ্রে ছড়িয়ে জিহ্বাকে উদ্বেলিত করার প্রয়াস। সে এক অদ্ভুত সুন্দর; কিন্তু দৈনন্দিন ব্যাপার। রোজ রোজ একই কর্মযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি।
দুপুর, বিকেলে তারা কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে আনতেন মৌসুমি ফলাদি। সেটাও জীবনের কাছ থেকে বড় পাওনা। অন্য মানুষ কেমন করে ভাবেন জানি না, তবে আমি তো আমিই। আমার ভাবনাগুলো এমনই- আমার পুত্র-কন্যার ভাষায় নাটকীয়! হতে পারে। ছোটবেলায় নানি-দাদি যখন তাঁদের ভাড়ার থেকে গুঁড়-দুধ-নারিকেল বের করে পিঠাযজ্ঞ শুরু করতেন, ভাবতাম নাহ্- তাঁরা একেকজন বিশাল ক্ষমতাধারী। কী সুন্দর সবাইকে খাওয়াচ্ছে- এত ক্ষমতা। মা যখন একটা তরমুজ, বালতির ঠাণ্ডা পানিতে ভেজানো অবস্থায় তুলে ফালি ফালি করে সবার হাতে দিতেন তখন খেতাম আর ভাবতাম মা তো শুধু মা না অন্নপূর্ণা! বাবা-মামা-খালু যখন কলার কাঁদি আনতেন সুগন্ধে তাঁদের ওপর কৃতজ্ঞ হয়ে যেতাম। আমি কখনোই ভোজনবিলাসী না; কিন্তু আল্লাহর দেওয়া সব সবজি ফলাদি শস্যাদি, সব কিছুর সৌন্দর্যে গন্ধে-রসে আমি বিমোহিত। যারা তা পরিবেশন করে তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ। যারা এগুলো ফলায় তাদের কাছেও। তখন সে খাবারগুলোকে আল্লাহর নিয়ামত হিসেবে নিয়েছি। কিন্তু এখন?
আজ প্রায় ১৫টি বছর হয়ে গেল ঢাকা শহরের বাজার থেকে কেনা মাছ খাই না। মাছ আনতে আমার জীবনসঙ্গী কত জায়গায়ই না গেলেন। এই মেঘনা ঘাট, এই মাওয়া, এই ভৈরব, এই দাউদকান্দি, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া উফ! কিন্তু শান্তি নেই। দৈনন্দিন মাছ তো মোটামুটি এক দিন পর পরই কেনা উচিত; কিন্তু ১০ দিন পর পর গাড়ির তেল পুড়িয়ে মাছ কেনা? আগে যাও কেনা যেত, এখন এমন হয়েছে ১০ দিনের মাছ কিনতে তেল খরচ হয় চার হাজার টাকা। শাকসবজি, ফলমূল সব কিছুতেই বিষ। এখন তো টমেটোর সিজন। এখনো কি বিষ দেওয়া টমেটা খাব? এই তো দুই দিন আগেই দেখলাম পেপারে, রাজশাহীর গোদাগাড়িতে সবুজ টমেটোকে পাকাচ্ছে বিষ দিয়ে! সবজিগুলোতে এভাবে খোলামেলাভাবেই বিষ দিচ্ছে- কেউ নেই দেখার। তা পেপারেও আসছে- তবুও। আর ফলমূল? আল্লাহর এই নিয়ামত আমাদের কপাল থেকে উঠেই গেছে। আপেল-আঙ্গুরগুলো ভৌতিক চেহারা নিয়ে ঠায় বসে থাকে। একটু চিড়া-দই দিয়ে কলা মেখে খাব, শীত আসছে একটু খেজুরের গুড়ের পায়েস রাঁধব তাতেও ভেজাল। আমে বিষ থাকে, তাই রাজশাহী থেকে সরাসরি আম এনে খেলাম দুই-তিন বছর। এবার দেখি বাগানওয়ালারা গাছে থাকতেই ফলে স্প্রে করছে! এত দূর নেমে গেছে মানুষ- যারা বিষ দেয় সব কিছুতে তারা কী খায়! আসলে ব্যাপার সেটা নয়। তারা জানেই না এটা বা এগুলো বিষ- তারা জানে ওষুধ। তাদের চিন্তা ব্যবসায়িক। ক্ষতির দিকটা চিন্তা করার শিক্ষাই তাদের নেই। তো তাদের মাথার ওপর তো শিক্ষিত কেউ না কেউ আছে, নাকি? পয়োবর্জ্যের লেগুন থেকে টন টন মাছ ধরে পোড়ানোর আগেই কি সেগুলোর চাষ বন্ধ করা যায় না? জেলে-কৃষকদের এই ছোট্ট কিন্তু সঠিক শিক্ষা দেওয়ার কেউ কি নেই, রাষ্ট্রীয়ভাবে, সামাজিকভাবে বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে? আমি আমার পূর্বসূরিদের মতো আমার অগ্রজকে থালায় বিশুদ্ধ খাবার পরিবেশন করার, পিঠাপুলিতে আপ্যায়ন করার বা বৃদ্ধ অভিভাবকের পথ্য নিশ্চিন্তে তাঁদের কাছে পরিবেশন করার অধিকার রাখি নাকি? আমার দোষ কোথায়? আমার মায়ের মতো আমিও তো মা! আমার পুত্র-কন্যা জীবনের সব ব্যাপারে কি আস্থার সঙ্গে আমার পিঠে হেলান দিয়ে দাঁড়াবে না? রাষ্ট্রীয় মা-বাবাদের বলছি- আমরা কিন্তু নিয়মিত কর দিই।
লেখক : সংগীতশিল্পী
আজ প্রায় ১৫টি বছর হয়ে গেল ঢাকা শহরের বাজার থেকে কেনা মাছ খাই না। মাছ আনতে আমার জীবনসঙ্গী কত জায়গায়ই না গেলেন। এই মেঘনা ঘাট, এই মাওয়া, এই ভৈরব, এই দাউদকান্দি, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া উফ! কিন্তু শান্তি নেই। দৈনন্দিন মাছ তো মোটামুটি এক দিন পর পরই কেনা উচিত; কিন্তু ১০ দিন পর পর গাড়ির তেল পুড়িয়ে মাছ কেনা? আগে যাও কেনা যেত, এখন এমন হয়েছে ১০ দিনের মাছ কিনতে তেল খরচ হয় চার হাজার টাকা। শাকসবজি, ফলমূল সব কিছুতেই বিষ। এখন তো টমেটোর সিজন। এখনো কি বিষ দেওয়া টমেটা খাব? এই তো দুই দিন আগেই দেখলাম পেপারে, রাজশাহীর গোদাগাড়িতে সবুজ টমেটোকে পাকাচ্ছে বিষ দিয়ে! সবজিগুলোতে এভাবে খোলামেলাভাবেই বিষ দিচ্ছে- কেউ নেই দেখার। তা পেপারেও আসছে- তবুও। আর ফলমূল? আল্লাহর এই নিয়ামত আমাদের কপাল থেকে উঠেই গেছে। আপেল-আঙ্গুরগুলো ভৌতিক চেহারা নিয়ে ঠায় বসে থাকে। একটু চিড়া-দই দিয়ে কলা মেখে খাব, শীত আসছে একটু খেজুরের গুড়ের পায়েস রাঁধব তাতেও ভেজাল। আমে বিষ থাকে, তাই রাজশাহী থেকে সরাসরি আম এনে খেলাম দুই-তিন বছর। এবার দেখি বাগানওয়ালারা গাছে থাকতেই ফলে স্প্রে করছে! এত দূর নেমে গেছে মানুষ- যারা বিষ দেয় সব কিছুতে তারা কী খায়! আসলে ব্যাপার সেটা নয়। তারা জানেই না এটা বা এগুলো বিষ- তারা জানে ওষুধ। তাদের চিন্তা ব্যবসায়িক। ক্ষতির দিকটা চিন্তা করার শিক্ষাই তাদের নেই। তো তাদের মাথার ওপর তো শিক্ষিত কেউ না কেউ আছে, নাকি? পয়োবর্জ্যের লেগুন থেকে টন টন মাছ ধরে পোড়ানোর আগেই কি সেগুলোর চাষ বন্ধ করা যায় না? জেলে-কৃষকদের এই ছোট্ট কিন্তু সঠিক শিক্ষা দেওয়ার কেউ কি নেই, রাষ্ট্রীয়ভাবে, সামাজিকভাবে বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে? আমি আমার পূর্বসূরিদের মতো আমার অগ্রজকে থালায় বিশুদ্ধ খাবার পরিবেশন করার, পিঠাপুলিতে আপ্যায়ন করার বা বৃদ্ধ অভিভাবকের পথ্য নিশ্চিন্তে তাঁদের কাছে পরিবেশন করার অধিকার রাখি নাকি? আমার দোষ কোথায়? আমার মায়ের মতো আমিও তো মা! আমার পুত্র-কন্যা জীবনের সব ব্যাপারে কি আস্থার সঙ্গে আমার পিঠে হেলান দিয়ে দাঁড়াবে না? রাষ্ট্রীয় মা-বাবাদের বলছি- আমরা কিন্তু নিয়মিত কর দিই।
লেখক : সংগীতশিল্পী
No comments