বিদ্যুতের জন্য রাতভর অপেক্ষা
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের কিশামত হাবু গ্রাম। গত রোববার রাত ১১টা বাজার ঠিক এক মিনিট আগে চলে যায় বিদ্যুৎ। মুহূর্তে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় গ্রামের সেচযন্ত্রের মালিক কমল কান্ত রায়ের। বিষণ্ন হয়ে বললেন, ‘দেখলেন তো, আমাদের কষ্ট।
ভেবেছিলাম, রাত ১১টায় সেচ দিয়ে একটু আরাম করে ঘুমাব। এখন বিদ্যুতের জন্য রাতভর অপেক্ষা করতে হবে।’
এমনি করে বিদ্যুতের জন্য রাতভর অপেক্ষা করছেন রংপুর, নীলফামারী ও বগুড়ার কৃষকেরা। সারা রাত থাকতে হচ্ছে সেচপাম্পের ঘরে। রাতে বিদ্যুৎ না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক ডিজেল দিয়ে পাম্প চালিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এতে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। অথচ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, রাত ১১টা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত কৃষকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
রংপুর: গঙ্গাচড়ার কিশামত হাবু গ্রামের কমল কান্ত রায় তিন বছর ধরে বিদ্যুৎচালিত পাম্প দিয়ে নিজের জমিসহ এলাকার অধিকাংশ জমিতে সেচের সুবিধা দিচ্ছেন। বিদ্যুতের অবস্থা দেখতে রোববার রাতে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বললেন, ‘১১টা বাজার ১৫-২০ মিনিট আগে বিদ্যুৎ এসেছিল। ১১টা বাজার এক মিনিট আগে আবার বিদ্যুৎ চলে গেল। এই বিদ্যুৎ আসে রাত ১২টা ২০ মিনিটে। পরে আবার সাড়ে চারটায় বিদ্যুৎ গিয়ে আসে সকাল নয়টার দিকে।’
রাত ১১টার আগমুহূর্তে কিশামত হাবু গ্রামের জমিতে সেচ দিতে ব্যস্ত ছিলেন কৃষক আশরাফ, আনিছসহ আরও অনেকে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যায় তাঁদের। এর মধ্যে আশরাফ বলেন, ‘জমিত নালা কাটি দিছি। পানি ছাড়লে জমিত পানি যাইবে। যদি নালা ভাঙি যায় তাইলে জমিত পানি যাওয়া কষ্ট হইবে। আর তা না হইলে বিদ্যুৎ না আসা পর্যন্ত জাগি থাকা লাগবে।’
বিদ্যুৎ দিয়ে কম খরচে সেচ দেওয়ার কথা জানিয়ে কমল বলেন, ‘এক দোন (২২ শতাংশ) জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রে একজন কৃষকের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় ৮০০। আর ডিজেলচালিত শ্যালোযন্ত্রের সাহায্যে সেচ দিতে খরচ পড়ে দেড় হাজার টাকা। এ কারণে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের চাহিদা বেশি। কিন্তু চাহিদামতো বিদ্যুৎ না পাওয়ায় সেচ দিতে অনেক সমস্যা হচ্ছে।’
বগুড়া: গত রোববার রাত ১১টার দিকে জেলার কাহালু উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে বিদ্যুৎ তখন আছে। সেখান থেকে চলে আসার পর জানা যায়, সকাল সাতটা পর্যন্ত মাত্র এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না।
ওই গ্রামের গভীর নলকূপের সেচগ্রাহক আবদুল আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে রাত ১১টা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। বিদ্যুতের জন্য সারা রাত বসে ছিলাম। তবে দুই দিন ধরে তুলনামূলক বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে।’ একই কথা বলেন লোকনাথপাড়ার হিরু মিয়া।
নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের কাথম গ্রামের মাঠে গভীর নলকূপের ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ বলেন, ‘কারেন্ট যাওয়ার বাপ-মাও নাই, এই আসে আবার যায়। রাতের মধ্যি চার পাঁচবার তো যাবি। তার ওপর ভোল্টেজ থাকে না।’
একই ইউনিয়নের পুনাইল মাঠের সেচগ্রাহক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জমি এখন নিড়ানি দিছি, তাই পানি কম লাগিচ্ছে। ইংকা করে কারেন্ট দিলি ধান আর ভালো হবি না।’
বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক সনৎ কুমার ঘোষ জানান, ‘বগুড়ায় রাতে সেচ দিতে বিদ্যুতের চাহিদা ৭০ মেগাওয়াট। দুদিন ধরে চাহিদার কাছাকাছি বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। তবে তার আগে বিদ্যুতের সমস্যা ছিল।’
নীলফামারী: সদর উপজেলার দোগাছি গ্রামে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বিদ্যুৎ গিয়ে আসে রাত সাড়ে ১১টায়। রাত আড়াইটায় বিদ্যুৎ গিয়ে আসে ২০ মিনিট পর। কিন্তু সকাল ছয়টার পর চলে গেলে বিদ্যুতের আর দেখা পাওয়া যায়নি। তবে অন্যান্য রাতে আরও কম সময় বিদ্যুৎ থাকে বলে অভিযোগ করেন সেচপাম্পের মালিকেরা।
সেচপাম্পের মালিক আবদুল মালেক বলেন, সবচেয়ে বিরক্ত লাগে, রাতে বিদ্যুৎ আসার পরও আধা ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং হয়। এ জন্য রাতে ঘুমও হয় না। জেগে থাকতে হয় সেচপাম্পের ঘরে। তিনি বলেন, ‘আমার সেচপাম্পের আওতায় ২৫ বিঘা জমিতে এক দিন অন্তর সেচ দিতে হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুতের যে অবস্থা তাতে রাত ১১টা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত সেচ দিলেও সব জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব নয়।’
নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক এনামুল হক বলেন, দুদিন ধরে রাতে পুরো বিদ্যুৎ পাচ্ছি। দিনে কম পাচ্ছি।
অন্যদিকে জেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আবাসিক প্রকৌশলী রুবেল আহম্মেদ বলেন, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা মিলে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা দিনে সাড়ে ১২ মেগাওয়াটের বিপরীতে পাচ্ছি ছয় মেগাওয়াট। সন্ধ্যার পর ১৪ মেগাওয়াটের বিপরীতে পাচ্ছি ১০ মেগাওয়াট। এ কারণে লোডশেডিং দিয়ে চালাতে হচ্ছে।
এমনি করে বিদ্যুতের জন্য রাতভর অপেক্ষা করছেন রংপুর, নীলফামারী ও বগুড়ার কৃষকেরা। সারা রাত থাকতে হচ্ছে সেচপাম্পের ঘরে। রাতে বিদ্যুৎ না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক ডিজেল দিয়ে পাম্প চালিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এতে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। অথচ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, রাত ১১টা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত কৃষকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
রংপুর: গঙ্গাচড়ার কিশামত হাবু গ্রামের কমল কান্ত রায় তিন বছর ধরে বিদ্যুৎচালিত পাম্প দিয়ে নিজের জমিসহ এলাকার অধিকাংশ জমিতে সেচের সুবিধা দিচ্ছেন। বিদ্যুতের অবস্থা দেখতে রোববার রাতে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বললেন, ‘১১টা বাজার ১৫-২০ মিনিট আগে বিদ্যুৎ এসেছিল। ১১টা বাজার এক মিনিট আগে আবার বিদ্যুৎ চলে গেল। এই বিদ্যুৎ আসে রাত ১২টা ২০ মিনিটে। পরে আবার সাড়ে চারটায় বিদ্যুৎ গিয়ে আসে সকাল নয়টার দিকে।’
রাত ১১টার আগমুহূর্তে কিশামত হাবু গ্রামের জমিতে সেচ দিতে ব্যস্ত ছিলেন কৃষক আশরাফ, আনিছসহ আরও অনেকে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যায় তাঁদের। এর মধ্যে আশরাফ বলেন, ‘জমিত নালা কাটি দিছি। পানি ছাড়লে জমিত পানি যাইবে। যদি নালা ভাঙি যায় তাইলে জমিত পানি যাওয়া কষ্ট হইবে। আর তা না হইলে বিদ্যুৎ না আসা পর্যন্ত জাগি থাকা লাগবে।’
বিদ্যুৎ দিয়ে কম খরচে সেচ দেওয়ার কথা জানিয়ে কমল বলেন, ‘এক দোন (২২ শতাংশ) জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রে একজন কৃষকের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় ৮০০। আর ডিজেলচালিত শ্যালোযন্ত্রের সাহায্যে সেচ দিতে খরচ পড়ে দেড় হাজার টাকা। এ কারণে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের চাহিদা বেশি। কিন্তু চাহিদামতো বিদ্যুৎ না পাওয়ায় সেচ দিতে অনেক সমস্যা হচ্ছে।’
বগুড়া: গত রোববার রাত ১১টার দিকে জেলার কাহালু উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে বিদ্যুৎ তখন আছে। সেখান থেকে চলে আসার পর জানা যায়, সকাল সাতটা পর্যন্ত মাত্র এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না।
ওই গ্রামের গভীর নলকূপের সেচগ্রাহক আবদুল আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে রাত ১১টা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। বিদ্যুতের জন্য সারা রাত বসে ছিলাম। তবে দুই দিন ধরে তুলনামূলক বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে।’ একই কথা বলেন লোকনাথপাড়ার হিরু মিয়া।
নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের কাথম গ্রামের মাঠে গভীর নলকূপের ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ বলেন, ‘কারেন্ট যাওয়ার বাপ-মাও নাই, এই আসে আবার যায়। রাতের মধ্যি চার পাঁচবার তো যাবি। তার ওপর ভোল্টেজ থাকে না।’
একই ইউনিয়নের পুনাইল মাঠের সেচগ্রাহক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জমি এখন নিড়ানি দিছি, তাই পানি কম লাগিচ্ছে। ইংকা করে কারেন্ট দিলি ধান আর ভালো হবি না।’
বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক সনৎ কুমার ঘোষ জানান, ‘বগুড়ায় রাতে সেচ দিতে বিদ্যুতের চাহিদা ৭০ মেগাওয়াট। দুদিন ধরে চাহিদার কাছাকাছি বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। তবে তার আগে বিদ্যুতের সমস্যা ছিল।’
নীলফামারী: সদর উপজেলার দোগাছি গ্রামে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বিদ্যুৎ গিয়ে আসে রাত সাড়ে ১১টায়। রাত আড়াইটায় বিদ্যুৎ গিয়ে আসে ২০ মিনিট পর। কিন্তু সকাল ছয়টার পর চলে গেলে বিদ্যুতের আর দেখা পাওয়া যায়নি। তবে অন্যান্য রাতে আরও কম সময় বিদ্যুৎ থাকে বলে অভিযোগ করেন সেচপাম্পের মালিকেরা।
সেচপাম্পের মালিক আবদুল মালেক বলেন, সবচেয়ে বিরক্ত লাগে, রাতে বিদ্যুৎ আসার পরও আধা ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং হয়। এ জন্য রাতে ঘুমও হয় না। জেগে থাকতে হয় সেচপাম্পের ঘরে। তিনি বলেন, ‘আমার সেচপাম্পের আওতায় ২৫ বিঘা জমিতে এক দিন অন্তর সেচ দিতে হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুতের যে অবস্থা তাতে রাত ১১টা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত সেচ দিলেও সব জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব নয়।’
নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক এনামুল হক বলেন, দুদিন ধরে রাতে পুরো বিদ্যুৎ পাচ্ছি। দিনে কম পাচ্ছি।
অন্যদিকে জেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আবাসিক প্রকৌশলী রুবেল আহম্মেদ বলেন, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা মিলে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা দিনে সাড়ে ১২ মেগাওয়াটের বিপরীতে পাচ্ছি ছয় মেগাওয়াট। সন্ধ্যার পর ১৪ মেগাওয়াটের বিপরীতে পাচ্ছি ১০ মেগাওয়াট। এ কারণে লোডশেডিং দিয়ে চালাতে হচ্ছে।
No comments