চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বেপরোয়া শিবির-বাসের চাকা পাংচার, ট্রেনচালককে অপহরণ, তালায় সুপার গ্লু

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অচল করতে নিত্যনতুন কৌশল নিচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। শ্রেণীকক্ষের তালায় 'সুপার গ্লু' (আঠা) লাগানোর পর এবার শিক্ষকদের বহনকারী বাসের চাকা পাংচার এবং চালককে অপহরণ করে শাটল ট্রেন অচল করে দিয়েছে শিবির ক্যাডাররা।


তা ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিনই। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিরাজ উদ-দৌল্লাহ বলেন, ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। গভীর রাতে অপরিচিত নম্বর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে শিবিরের অপতৎপরতা প্রশাসন ঠেকিয়ে দেওয়ার কারণে এখনো ক্যাম্পাস সচল রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগামী সকালের প্রথম শাটল ট্রেনটি ঝাউতলা স্টেশনে পৌঁছলে সেটি আটকে দেয় ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। তারা দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মারধর করে ট্রেনচালক গোপাল চন্দ্রকে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়গামী আর কোনো ট্রেন চলাচল করেনি। পরে দুপুর আড়াইটায় শিবিরকর্মীরা ট্রেনচালককে ছেড়ে দেয়।
এর আগে গতকাল ভোরে শিক্ষকদের বহনের কাজে ব্যবহৃত সাতটি বাসের চাকায় পেরেক ঢুকিয়ে পাংচার (অচল) করে দেয় শিবিরকর্মীরা। পরিবহন দপ্তরের পার্কিং এলাকায় তারা এ ঘটনা ঘটায় বলে দপ্তর সূত্র জানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, ভোর ৪টার দিকে দপ্তরের গ্যারেজে পার্কিং অবস্থায় সাতটি বাসের চাকা পাংচার করে দেওয়া হয়। এতে প্রতিটি গাড়িই অচল হয়ে পড়েছে। শিবিরকর্মীরাই এ কাজ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এর আগে গত শনিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে তিনটি বাসের স্টার্টিং সুইচে 'সুপার গ্লু' লাগিয়ে রেখেছিল শিবির ক্যাডাররা।
অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশিকুল্লাহ বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন করছি। তবে বন্ধ থাকা শাহ আমানত হলের বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা জড়িত থাকতে পারে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) বাবুল আক্তার বলেন, 'বাস অচলকারীদের গ্রেপ্তারে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট।'
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে দুই ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় ৩৮ দিন বন্ধ থাকার পর গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারসহ চার দফা দাবিতে ওই দিন থেকেই ছাত্রশিবির ধর্মঘটের ডাক দেয়। ক্যাম্পাস খোলার দুই দিন আগে গত ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হলেও শাহ আমানত হলে ছাত্রলীগ ও শিবিরকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় হলটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষকদের হুমকি দেওয়া এবং শিক্ষকদের অফিস কক্ষ ও শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে সুপার গ্লু লাগানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরীর দেওয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়। শিক্ষকরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে উদ্বেগ জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনে একের পর এক চালক অপহরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ রানিং স্টাফ লোকোমাস্টার ইউনিয়ন। এ ধরনের ঘটনার সুরাহা না হলে ভবিষ্যতে শাটল ট্রেন না চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী।

No comments

Powered by Blogger.