নাক থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন by এমএ ওহাব

নাক থেকে বিদ্যুৎ শুনতে যেমনই মনে হোক না কেন, বিষয়টি সত্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৌশলীদের একটি দল মানুষের শ্বাসক্রিয়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করেছে। নাক মানবদেহের শ্বাসকার্য পরিচালনার জন্য নির্ধারিত একটি অঙ্গ। শ্বাসক্রিয়া পরিচালনার সময় নাক দিয়ে নির্দিষ্ট বেগে বাতাস ফুসফুস অর্থাৎ দেহে প্রবেশ করে, আবার বেরিয়ে যায়। এতে বাতাস নাকের ছিদ্রপথে দেহে প্রবেশ বা বেরিয়ে যাওয়াই নয়, এ কার্যকারিতায় দেহের নির্দিষ্ট কিছু অংশ ফুলে ওঠে এবং একটা


চাপ সৃষ্টি হয়। এ চাপ সৃষ্টির বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে কম মানের হলেও বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব, বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক এবং ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক জুডং ওয়াং। সম্প্রতি এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল জার্নালে তিনি এ নিয়ে একটি রিপোর্টও প্রকাশ করেছেন।
তবে শুধু শ্বাসক্রিয়া থেকেই নয়, মানবদেহে যে বিদ্যুৎ রয়েছে অর্থাৎ ক্ষুদ্র মানের হলেও মানবদেহে যে বিদ্যুৎ তৈরি হয়, তা অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানী গ্যালভানি তা প্রমাণ করেছেন। দেহের জৈবিক কার্যকারিতায় অর্থাৎ দেহকোষের নিয়মিত ক্রিয়াচক্রে এ বৈদ্যুতিক পালস সৃষ্টি হয়। মানবদেহে এ বিদ্যুতের অস্তিত্ব উদ্ভাবনের পরই চিকিৎসাবিজ্ঞানে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ে নতুন দরজা খুলে যায়। হার্ট, মস্তিষ্ক ও পেশির কার্যকারিতাকে বৈদ্যুতিক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে প্রদর্শন করা অর্থাৎ ঊঈএ, ঊঊএ এবং ঊগএ-সহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। তবে শ্বাসক্রিয়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি একটু ভিন্ন প্রক্রিয়া। এখানে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়াকে কাজে লাগানোর বিষয়টিই মুখ্য। নিঃশ্বাসের সঙ্গে নাক থেকে বেরিয়ে যাওয়া বাতাসকে উপযুক্ত ডিভাইসের ওপর ফেলে যেমন বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়, আবার প্রশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করা বাতাসের চাপে শরীরের স্ফীত অংশের চাপকেও যান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়। এ ক্ষেত্রে পিয়াজোইলেকট্রিক ক্রিস্টাল ব্যবহার করাই উপযুক্ত বলে গবেষকরা মনে করেন। আর নাক থেকে বেরিয়ে যাওয়া বাতাসের চাপকে কাজে লাগানো কিছুটা অসুবিধাজনক হওয়ায় শরীরের স্ফীত অংশের চাপকে কাজে লাগানো সহজ। আমরা যে বেল্ট পরি তার সঙ্গে পিয়াজোইলেকট্রিক ক্রিস্টাল সংযুক্ত ডিভাইসের বোতাম সংযুক্ত থাকলে সেই বোতামের ওপর প্রযুক্ত চাপ পিয়াজোক্রিস্টালের ওপর পড়বে এবং ওই ক্রিস্টালের স্বাভাবিক ধর্ম থেকেই প্রযুক্ত চাপের সমতুল্য বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। এ বিদ্যুতের মান মাইক্রোওয়াট সীমার হয়ে থাকে; তবে উপযুক্ত অ্যামপ্লিয়ার সার্কিট ব্যবহার করে এটাকে কিছুটা বৃদ্ধি করে কম মানের বিদ্যুতের কাজে ব্যবহার করা যাবে। দেহের সঙ্গে সংযুক্ত কিছু যন্ত্র যেমন_ ঘড়ি, ক্যালকুলেটর, ব্লাড সুগার টেস্টিং যন্ত্র, পেসমেকার, রেডিয়েশন মাপার জন্য পকেট ডোসিমিটার, হাতের কবজিতে সংযুক্ত ছোট মোবাইল সেট প্রভৃতি এ শ্বাসক্রিয়া থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের সাহায্যে চালানো সম্ভব। ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ বা ডিভাইস অর্থাৎ ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেত্রে এ বিদ্যুৎ ভালো কাজে আসবে। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ প্রক্রিয়াকে ন্যানোটেকনোলজির সঙ্গেই তুলনা করেছেন। বেল্টের সঙ্গে সংযুক্ত ডিভাইস থেকে উৎপন্ন এ বিদ্যুতের মান থেকে ফুসফুসের কার্যকারিতা ও দেহের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে। কাজেই শ্বাসকার্য থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ শুধু ক্ষুদ্র ডিভাইসকে চালনাই নয়, এ ব্যবস্থা চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোগ নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

No comments

Powered by Blogger.