আনন্দ স্কুলে অনিয়ম-শিক্ষার নামে এ কী চলছে!
'আনন্দ স্কুলের' নামে অর্থ আত্মসাৎকারী সাড়ে তিনশ' বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। গত শনিবার সমকালে 'শিক্ষাদানের নামে অর্থ আত্মসাৎ' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুবিধাবঞ্চিত ও ঝরে পড়া শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে ৯০টি উপজেলায় ২০০৫ সালে 'রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন বা রস্ক' প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ৬৮৪ কোটি টাকারও বেশি।
দায়িত্ব দেওয়া হয় বিপুলসংখ্যক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা এনজিওকে। প্রকল্পের মেয়াদ জুন, ২০১৩ পর্যন্ত। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক আনন্দ স্কুলের কোনো খবর নেই। ঝরে পড়ার হার কমাতেও স্কুলগুলো তেমন অবদান রাখতে পারছে না। 'রস্ক' প্রকল্পের উদ্দেশ্য ভালো তাতে সন্দেহ নেই। এ জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণও নেওয়া হয়। ঋণ গ্রহণ মানেই সুদসহ তা পরিশোধ করা। এ ধরনের প্রকল্পে দাতাদের কনসালট্যান্ট নিয়োগ দিতে হয় এবং তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধার ফিরিস্তি বেশ বড়। বিশ্বব্যাংক যে ঋণ দিয়েছে, তা থেকেই এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কেটে রাখা হয়। এমন একটি প্রকল্প থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল না পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক এবং এতে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ প্রত্যাশিত। সঠিকভাবে স্কুল পরিচালনা না করা, ক্লাসে মানহীন পাঠদান, ভুয়া প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী দেখিয়ে শিক্ষকের নামে বেতন উত্তোলন, পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় ভুয়া পরীক্ষার্থী বসিয়ে দেওয়া_ এ ধরনের নানা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পর সাড়ে তিনশ' এনজিওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ঘটনায় এনজিও পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট সবারই সতর্ক হওয়া উচিত। সাধারণভাবে ধারণা রয়েছে যে, এনজিওদের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু প্রাথমিক স্কুল থেকে ঝরে পড়া লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে ফের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাঠামোতে নিয়ে আসার বিপুল আয়োজনে তার প্রমাণ মিলছে না। রস্ক প্রকল্পের পরিচালক বলেছেন, দেশে ২০ লাখ ড্রপ আউট শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৫ লাখকে আনন্দ স্কুলের আওতায় আনা সম্ভব হয়। শিক্ষকের সম্মানী মাত্র এক হাজার টাকা। শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং তারা লেখাপড়ার চেয়ে উপার্জনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তেই বেশি আগ্রহ দেখায়। এ বক্তব্য থেকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সমস্যা সম্পর্কে ধারণা মেলে। নীতিনির্ধারকরা পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় এসব বিষয় বিবেচনায় নেবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
No comments