স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা by রেহানা রিমি

মরা স্বাধীন হয়েছি। চার দশক পেরিয়ে গেছে এ স্বাধীনতার। আমাদের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। এ দিনটিয় শুধু ঐতিহাসিক তাৎপর্যময় নয়। নবতর অঙ্গীকারের চেতনাবাহীও। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় অর্জিত হয়। সশস্ত্র প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। ছিনিয়ে এনেছি বাঙালির বহুদিনের স্বপ্ন। একটি স্বাধীন দেশ। একটি স্বাধীন জাতি। এ দেশের লাখো মানুষের আত্মত্যাগে,


সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজ আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি। লাখো বাঙালির একাত্মতায় আমরা যে স্বাধীন দেশ পেয়েছি, এ স্বাধীন দেশের মানুষের তো তাই প্রত্যাশা অনেক বেশি হবে। কিন্তু তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কি প্রাপ্তি ঘটেছে? পেয়েছে কি তাদের চাওয়া-পাওয়ার পূর্ণ অধিকারটুকু? স্বাধীনতার পরবর্তী এবং দীর্ঘ ৪০ বছরের স্বাধীনতার সময়টুকু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, যে আশায় বাঙালিরা তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল সে আশা তাদের পূর্ণ হয়নি। এ বাঙালিরা এখনও পরাধীন। কিছু মানুষের কাছে জিম্মি তারা। বাস্তবতার শিকার তারা। তাহলে এ বিজয়ের অর্থ কী? নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের প্রতিদান কি এই? জনকল্যাণের জন্য যেখানে বলা হচ্ছে, গণতন্ত্র সবচেয়ে উৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা, সেখানে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা মাঝপথেই ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে। হানাহানি, খুনাখুনির দেশ হয়েছে বাংলাদেশ। মানুষ এখন তার জীবন নিয়ে সর্বদা সংশয়ে থাকে। তাহলে আমরা কেমন স্বাধীন দেশে বাস করছি। ৪০ বছর ধরে এক নীরব পরাধীনতায় বাস করছি আমরা।
স্বাধীনতার লক্ষ্যই ছিল শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা। লক্ষ্য ছিল দুঃখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের; শিক্ষা-সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা এবং সম্পদে সমৃদ্ধি অর্জনের; স্বাধীন ও স্বনির্ভর জাতীয় অগ্রগতি সাধনের। কিন্তু বাস্তবে আমরা সে লক্ষ্য ও আদর্শ থেকে এবং তা বাস্তবায়নের ধারা থেকে বেশ দূরে চলে এসেছি। অন্যদিকে সমাজ জীবনে দারিদ্র্য ঘোচেনি, বরং সমাজে লুটেরা ধনিকের সংখ্যা বেড়েছে। কৃষকরা ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। শিক্ষিতরা কাজ পাচ্ছে না। বেকারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সমাজে মূল্যবোধ মুখ থুবড়ে পড়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম হয়েছে। ডাকাতি, খুন, ছিনতাই, সন্ত্রাস আতঙ্কের পর্যায়ে পেঁৗছেছে। সব মিলিয়ে আমরা পর্যুদস্ত আশাভঙ্গের বেদনায়। তাহলে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে আমরা যে বিজয় এনছি তার ফল কি এই? যদি তাই হয় তাহলে আমরা এমন বিজয় চাই না। আমরা চাই সব মানুষ তাদের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার পাক। স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে পথ চলুক। তাহলেই আমরা একটা স্বাধীন দেশের পাশাপাশি একটি স্বাধীন জাতি হন। তাই বলতে চাই, যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল এবং স্বাধীনতা এসেছিল সে আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন স্বাধীনতার চার দশকেও হয়নি। যেদিন এ আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে সেদিনই বাঙালিরা হবে স্বাধীন। একটি বিজয়ী জাতি।
হপূর্ব গোয়ালপাড়া, ঠাকুরগাঁও

No comments

Powered by Blogger.