অবৈধ বালুমহাল-রক্ষা করতে হবে জনপদ

ভূমিগ্রাস বা নদীগ্রাসের খবরগুলো সকলের জানা। পত্রপত্রিকার লেখালেখি, পরিবেশ সচেতন মানুষের সচেতনতামূলক তৎপরতার ফলে জনসমাজে এ সমস্যাগুলো নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলে। কিন্তু এসব অপতৎপরতার চেয়ে বালুগ্রাস কোনো অংশে কম ভয়ঙ্কর নয়। ভূমিগ্রাসীদের লক্ষ্য থাকে যেনতেন উপায়ে জমি দখল করে সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, নদী দখলের উদ্দেশ্যও এমন। কিন্তু বালু উত্তোলনের জন্য নদীর তীর বা চর দখলের উদ্দেশ্য কী?


শহরে যে বিপুল নির্মাণযজ্ঞ চলে, সেই নিত্যনতুন অট্টালিকা আবশ্যিক নির্মাণ উপকরণ বালু। আর এই নির্মাণ উপকরণটি সরবরাহ করতে গিয়ে তৈরি হয় বালু উত্তোলনের বড় বড় মহাল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ মহালগুলোর মালিকরা মানুষ ও প্রকৃতির ইতিনেতির বিষয়ে ভাবেন না। নগদ মুনাফার লোভে তারা এমনভাবে বালু উত্তোলন করেন যে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদীতীর, নদীর ভাঙন ত্বরান্বিত হয়_ আশপাশের গ্রামের ওপর নেমে আসে ভাঙনের অভিশাপ। রাজধানীর আশপাশের বহু জনপদ এমন বালুমহালের উৎপাতে রীতিমতো অস্থির। সোনারগাঁয়ের বেশ কিছু গ্রামে এ সমস্যার কারণে রীতিমতো নাগরিক প্রতিবাদ হয়েছে। নিজেদের অস্তিত্বের সংকট মোকাবেলা করতে গিয়ে গ্রামবাসীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছেন, সরকারের কাছে বিহিত দাবি করেছেন। গ্রামবাসীর দাবির মুখে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, উচ্চতর আদালত থেকে বালু উত্তোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গোপনে ও প্রকাশ্যে চলছে বালু উত্তোলনের কাজ। বালুমহালের মালিকদের হাত লম্বা। প্রতিবারই বালু উত্তোলন ঠেকাতে এলাকাবাসীকে প্রতিবাদ করতে হয়। অভিযোগ আছে, প্রতিবারের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলেই কেবল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়। প্রশ্ন হলো, এমন কেন হবে? বালুমহাল যে পরিবেশ ও জনপদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা তো স্পষ্ট। আর এ বিষয়ে উচ্চতর আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। তারপরও কেন বালু উত্তোলন নির্বিবাদে চলতে থাকবে? আমরা মনে করি, সোনারগাঁয়ের নুনেরটেক শুধু নয়, রাজধানীর আশপাশের জনপদগুলোর নিকটবর্তী বালুমহালগুলো অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। প্রয়োজনে দূরের নদীচর থেকে বালু এনে নির্মাণ কাজ চলতে পারে। কিন্তু বালু উত্তোলনের জন্য জনপদগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা কোনো যৌক্তিক পদক্ষেপ হতে পারে না। সরকারের উচিত, এখনই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের তৎপরতা থামিয়ে দেওয়া।
 

No comments

Powered by Blogger.