মায়ের কাছে প্রার্থনা by রনজিত কীর্তনিয়া
শতবর্ষব্যাপী দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল, যুদ্ধে দেবতারা পরাজিত স্বর্গ থেকে বিতাড়িত। দেবতারা ব্রহ্মা, বিষুষ্ণ ও শিবের শরণাপন্ন হয়ে প্রতিকার চাইলেন অসুরদের হাতে দেবতাদের নির্যাতনের কাহিনী শুনে প্রচণ্ড ক্রোধ জন্মে। ক্রোধ থেকে তেজ আর তেজ রাশি মিলিত হয়ে এক নারীমূর্তির আবির্ভাব ঘটল। সেই নারী মূর্তিই হলো দুর্গা।
শারদীয় দুর্গোৎসব। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। এখন এই উৎসব আর শুধু হিন্দুদের একার উৎসব
শারদীয় দুর্গোৎসব। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। এখন এই উৎসব আর শুধু হিন্দুদের একার উৎসব
নয়। সময়ের পরিবর্তনে অসাম্প্রদায়িক হাজার বছরের বাঙালি ঐতিহ্যের লালিত শুভবোধসম্পন্ন মানুষের কাছে এ যেন একটি সর্বজনীন আনন্দ উৎসবে পরিণত হয়েছে।
দুর্গাপূজাকে ঘিরে প্রতি বছরই হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎসবের আমেজ নেমে আসে। বিশ্বব্যাপী এখন দুর্গোৎসবের ব্যাপকতা প্রসারিত হয়েছে। এই উৎসব এখন সাড়ম্বরে সর্বত্র উদযাপিত হয়। দেবী দুর্গার পূজাকে প্রধানত মাতৃশক্তির আরাধনা বলেই দাবি করেন হিন্দু সম্প্রদায়। দেবী দুর্গা বহুর মধ্যে এক মহাশক্তিরূপিণী হিসেবে অভিহিত। ইতিহাসবিদদের মতে, বঙ্গদেশ দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় ১৬শ' শতাব্দীতে মোগল সম্রাট আকবরের শাসনকালে প্রচলিত হয়, যা পরবর্তীকালে ব্যাপক পরিসরে অনুষ্ঠিত হতে থাকে। প্রতি বছর পঞ্জিকার তারিখ অনুযায়ী হিন্দু সম্প্রদায় মা দুর্গার এই পূজার আয়োজন করে।
বর্তমান পৃথিবীর ধর্মীয় ইতিহাসে দেখা যায়, মেক্সিকোতে চন্দ্রাদেবী, গ্রিসে রোহীদেবী, রোমানদের সিবলী দেবী, জার্মানিতে নের্থস দেবী হিসেবে মুক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী দুর্গা আবির্ভূতা ও পূজিতা হন। সাম্য, সৌহার্দ্য, প্রীতি ও মৈত্রীর বন্ধন নিয়ে জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতা আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা কৈলাস পর্বত থেকে মর্ত্যলোকে বছরে তিন ঋতুতে তিনবার তিন নামে আবির্ভূত হয়ে স্তব, স্তুতি, যাগযজ্ঞ, পূজা অর্চনার মাধ্যমে আমাদের শক্তি আরাধনার সুযোগ সৃষ্টি করেন। শরৎকালে শারদীয়া দুর্গা, বসন্তে বাসন্তী দুর্গা এবং হেমন্তে কাত্যায়ানী দুর্গা নামে অভয়দায়িনী দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা পূজিতা হন।
বিশ্বস্বীকৃত ও বিজ্ঞানসম্মত শাস্ত্র শ্রীশ্রী চণ্ডীর প্রথম অংশ মধু কৈকর বধ, মধ্যম খণ্ড মহিষাসুর বধ এবং উত্তর খণ্ডে শুম্ভু নিশুম্ভুবধ বর্ণিত মন্ত্র মহাশক্তির বিকাশ, দেবী দুর্গাকে নির্ভরশীলতার প্রতীক হিসেবে স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রাচীনকালে শক্তি হিসেবে প্রকৃতি পূজিত হতো। এরপর হতো ঋতুযজ্ঞ, কালের বিবর্তনে অদৃশ্য, অসীম শক্তির প্রতীকরূপে আবির্ভূত হয় প্রতিমা। বাংলার চিত্তলোক আলোকিত করে মঙ্গলদায়িনী মা দুর্গা আবির্ভূতা হন আমাদের পর্ণ কুটিরে। মাতৃবন্দনা পুলকিত হয় ভক্ত হৃদয়।
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে জীবন, সমাজ ও সংস্কৃতির অঙ্গনে দুর্গাশক্তির পূজা হয়ে ওঠে অহংসত্তার বিশ্বজনীন মানবতা এবং যুবশক্তির প্রেরণা। মা দুর্গা বাঙালি হিন্দুর ভাবমূর্তিতে শিবের জায়া, গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতীর জননী। তিনি তার পতিগৃহ কৈলাসে থাকেন। বছরের তিন ঋতুতে তিনি তিনরূপে আবির্ভূত হন। শরৎকালে শারদীয়, হেমন্তকালে ক্যাতায়ন পূজা ও বসন্তকালে বাসন্তী পূজা এই তিন ঋতুতে ভক্তরা এই তিন পূজা নামে করে থাকে। তবে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় শারদীয় পূজা। রামচন্দ্র সীতাকে রাবণপুরী থেকে উদ্ধারের জন্য ১০৮টি নীল পদ্ম দিয়ে দেবীর যে পূজা করেছিল সেই শারদীয় পূজা প্রতি বছর মা দুর্গা তার সন্তানদের নিয়ে আশ্বিন মাসের ষষ্ঠী তিথিতে পাঁচ দিনের জন্য কৈলাস থেকে মর্ত্যে আসেন এবং পূজা শেষে চলে যান। জীবজগতের সুখ-শান্তি, অসুরদের বিনাশ এবং শরণাগতদের রক্ষার জন্য দেবীর দশ হাত ত্রিশূল, খণ্ড, চক্র, তীক্ষষ্টবাণ, শক্তি, ঢাল ধনু, পাশ, অংকুশ ও কুঠার এই দশ অস্ত্রে সজ্জিত থাকে। পৃথিবীতে যাওয়া-আসার পথে দেবী যে বাহন ব্যবহার করেন তার ওপরই জগতের শুভাশুভ নির্ভর করে।
দেবী দুর্গা বিভিন্ন দেশে বা অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। কোথাও কোথাও শক্তিপূজা নামে পরিচিত। অনেকে শক্তির উপাসককে বিশেষ সম্প্রদায়ের বলে মনে করে অবমূল্যায়ন করে এটা ঠিক নয়। শক্তিপূজার ধারা চলে আসছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায়, রোম, গ্রিস, আফ্রিকা, মেক্সিকো প্রভৃতি স্থানে শক্তিপূজা বিভিন্ন দেবতার নামে প্রচলিত ছিল। মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পায় আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক দেবীমূর্তি। এই দেবী মূর্তিকেই দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
যেথায় দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয়েছে সেখানেই দেখা গেছে ভক্তদের কাছে সর্বদাই স্নেহময়ী জননী, কল্যাণ প্রদায়িনী মা, দুষ্টের বিনাশ করে কল্যাণ সাধনই তার উদ্দেশ্য। দেবী দুর্গাপূজার সময় ফল মিষ্টি প্রসাদ খাওয়া হয়, একই দিন পূজা বাড়িতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
সত্য সুন্দরের আলোকিত হোক আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ূক শান্তি ও সুখের বার্তা, মায়ের কাছে সেটাই প্রার্থনা।
দুর্গাপূজাকে ঘিরে প্রতি বছরই হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎসবের আমেজ নেমে আসে। বিশ্বব্যাপী এখন দুর্গোৎসবের ব্যাপকতা প্রসারিত হয়েছে। এই উৎসব এখন সাড়ম্বরে সর্বত্র উদযাপিত হয়। দেবী দুর্গার পূজাকে প্রধানত মাতৃশক্তির আরাধনা বলেই দাবি করেন হিন্দু সম্প্রদায়। দেবী দুর্গা বহুর মধ্যে এক মহাশক্তিরূপিণী হিসেবে অভিহিত। ইতিহাসবিদদের মতে, বঙ্গদেশ দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় ১৬শ' শতাব্দীতে মোগল সম্রাট আকবরের শাসনকালে প্রচলিত হয়, যা পরবর্তীকালে ব্যাপক পরিসরে অনুষ্ঠিত হতে থাকে। প্রতি বছর পঞ্জিকার তারিখ অনুযায়ী হিন্দু সম্প্রদায় মা দুর্গার এই পূজার আয়োজন করে।
বর্তমান পৃথিবীর ধর্মীয় ইতিহাসে দেখা যায়, মেক্সিকোতে চন্দ্রাদেবী, গ্রিসে রোহীদেবী, রোমানদের সিবলী দেবী, জার্মানিতে নের্থস দেবী হিসেবে মুক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী দুর্গা আবির্ভূতা ও পূজিতা হন। সাম্য, সৌহার্দ্য, প্রীতি ও মৈত্রীর বন্ধন নিয়ে জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতা আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা কৈলাস পর্বত থেকে মর্ত্যলোকে বছরে তিন ঋতুতে তিনবার তিন নামে আবির্ভূত হয়ে স্তব, স্তুতি, যাগযজ্ঞ, পূজা অর্চনার মাধ্যমে আমাদের শক্তি আরাধনার সুযোগ সৃষ্টি করেন। শরৎকালে শারদীয়া দুর্গা, বসন্তে বাসন্তী দুর্গা এবং হেমন্তে কাত্যায়ানী দুর্গা নামে অভয়দায়িনী দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা পূজিতা হন।
বিশ্বস্বীকৃত ও বিজ্ঞানসম্মত শাস্ত্র শ্রীশ্রী চণ্ডীর প্রথম অংশ মধু কৈকর বধ, মধ্যম খণ্ড মহিষাসুর বধ এবং উত্তর খণ্ডে শুম্ভু নিশুম্ভুবধ বর্ণিত মন্ত্র মহাশক্তির বিকাশ, দেবী দুর্গাকে নির্ভরশীলতার প্রতীক হিসেবে স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রাচীনকালে শক্তি হিসেবে প্রকৃতি পূজিত হতো। এরপর হতো ঋতুযজ্ঞ, কালের বিবর্তনে অদৃশ্য, অসীম শক্তির প্রতীকরূপে আবির্ভূত হয় প্রতিমা। বাংলার চিত্তলোক আলোকিত করে মঙ্গলদায়িনী মা দুর্গা আবির্ভূতা হন আমাদের পর্ণ কুটিরে। মাতৃবন্দনা পুলকিত হয় ভক্ত হৃদয়।
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে জীবন, সমাজ ও সংস্কৃতির অঙ্গনে দুর্গাশক্তির পূজা হয়ে ওঠে অহংসত্তার বিশ্বজনীন মানবতা এবং যুবশক্তির প্রেরণা। মা দুর্গা বাঙালি হিন্দুর ভাবমূর্তিতে শিবের জায়া, গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতীর জননী। তিনি তার পতিগৃহ কৈলাসে থাকেন। বছরের তিন ঋতুতে তিনি তিনরূপে আবির্ভূত হন। শরৎকালে শারদীয়, হেমন্তকালে ক্যাতায়ন পূজা ও বসন্তকালে বাসন্তী পূজা এই তিন ঋতুতে ভক্তরা এই তিন পূজা নামে করে থাকে। তবে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় শারদীয় পূজা। রামচন্দ্র সীতাকে রাবণপুরী থেকে উদ্ধারের জন্য ১০৮টি নীল পদ্ম দিয়ে দেবীর যে পূজা করেছিল সেই শারদীয় পূজা প্রতি বছর মা দুর্গা তার সন্তানদের নিয়ে আশ্বিন মাসের ষষ্ঠী তিথিতে পাঁচ দিনের জন্য কৈলাস থেকে মর্ত্যে আসেন এবং পূজা শেষে চলে যান। জীবজগতের সুখ-শান্তি, অসুরদের বিনাশ এবং শরণাগতদের রক্ষার জন্য দেবীর দশ হাত ত্রিশূল, খণ্ড, চক্র, তীক্ষষ্টবাণ, শক্তি, ঢাল ধনু, পাশ, অংকুশ ও কুঠার এই দশ অস্ত্রে সজ্জিত থাকে। পৃথিবীতে যাওয়া-আসার পথে দেবী যে বাহন ব্যবহার করেন তার ওপরই জগতের শুভাশুভ নির্ভর করে।
দেবী দুর্গা বিভিন্ন দেশে বা অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। কোথাও কোথাও শক্তিপূজা নামে পরিচিত। অনেকে শক্তির উপাসককে বিশেষ সম্প্রদায়ের বলে মনে করে অবমূল্যায়ন করে এটা ঠিক নয়। শক্তিপূজার ধারা চলে আসছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায়, রোম, গ্রিস, আফ্রিকা, মেক্সিকো প্রভৃতি স্থানে শক্তিপূজা বিভিন্ন দেবতার নামে প্রচলিত ছিল। মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পায় আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক দেবীমূর্তি। এই দেবী মূর্তিকেই দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
যেথায় দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয়েছে সেখানেই দেখা গেছে ভক্তদের কাছে সর্বদাই স্নেহময়ী জননী, কল্যাণ প্রদায়িনী মা, দুষ্টের বিনাশ করে কল্যাণ সাধনই তার উদ্দেশ্য। দেবী দুর্গাপূজার সময় ফল মিষ্টি প্রসাদ খাওয়া হয়, একই দিন পূজা বাড়িতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
সত্য সুন্দরের আলোকিত হোক আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ূক শান্তি ও সুখের বার্তা, মায়ের কাছে সেটাই প্রার্থনা।
No comments