সবুজ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের উৎসব

খেলোয়াড়ি জীবন তো বটেই, ধারাভাষ্যকার ক্যারিয়ারেও এমনটা দেখেননি জেফ লসন। গতকাল বেলেরিভ ওভালের উইকেট বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিস্মিত অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এ ফাস্ট বোলার, 'এমন সবুজ টেস্ট উইকেট আগে কখনো দেখিনি!' তার ওপর বৃষ্টিস্নাত ওভালের ওপর মেঘে ঢাকা আকাশ দেখে টসের সময় নাকি ড্রেসিংরুম থেকে চিৎকার করছিলেন স্বাগতিক দলের পেসাররা, 'বোলিং, বোলিং!' টস জিতে সে দাবি মিটিয়েছেন মাইকেল ক্লার্ক।


আর অধিনায়কের আস্থার প্রতিদানে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস মাত্র ১৫০ রানে উড়িয়ে দিয়েছেন প্যাটিনসন-সিডলরা। অবশ্য বৃষ্টিতে নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে খেলা শেষ হওয়ার সময় খুব একটা স্বস্তিতে নেই অস্ট্রেলিয়াও। ১২ রানে ১ উইকেট হারিয়ে বসেছে তারা।
ফিলিপ হিউজেসের জন্য রীতিমতো বিব্রতকরই। পরপর তিনবার একইভাবে আউট হওয়াটা যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই অস্বস্তিকর। ক্রিস মার্টিনের বল 'পুশ' করতে গিয়ে স্লিপে মার্টিন গুপ্তিলের তালুবন্দি অস্ট্রেলিয়ার এ ওপেনার। আগের টেস্টের উভয় ইনিংসেও স্কোর কার্ডে হিউজেসের পাশে লেখা আছে_কট গাপটিল ব মার্টিন। সৌভাগ্য উসমান খাজার। এলবিডাবি্লউর দুটি জোরালো আবেদন থেকে গা বাঁচিয়ে আজ আবার ব্যাট হাতে নামছেন তিনি। ম্যাথু হেইডেনের পরের প্রজন্ম ডেভিড ওয়ার্নারের মনেও অভিষেক টেস্টেই ভয় ধরিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি পেসার ট্রেন্ট বোল্ট।
তবু এখনো অমিত সম্ভাবনা অস্ট্রেলিয়ার সামনে। অনভিজ্ঞ হাতেই সম্ভাবনার সে আলো জ্বালিয়েছেন প্যাটিনসন-সিডলরা। যে সলতেটা তাঁদের হাতে তুলে দেন ক্লার্ক। এই যে বৃষ্টিভেজা পরিবেশ কিংবা মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে সবুজ ঘাসের উইকেট দেখেও কি প্রথমে ফিল্ডিং নিতেন ক্লার্কের পূর্বসূরি রিকি পন্টিং? ২০০৫ সালের অ্যাশেজে বার্মিংহামে এমন পরিবেশ দেখেই ফিল্ডিং নিয়েছিলেন তৎকালীন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। সে ম্যাচে হারের পর আর ও-পথে হাঁটেননি পন্টিং। বিভীষিকার পূর্বাভাস উপেক্ষা করে টস জিতেই বলেছেন 'উই উইল ব্যাট'। গতকালের আগে গত ছয় বছরে ৭০ টেস্টে টস জিতে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং করাটাকে অনেকে পন্টিংয়ের 'বার্মিংহাম শিক্ষা'র ফল বলে মনে করেন।
নেতৃত্বের ব্যাটন হাত বদলের সঙ্গে সঙ্গে ধরনেও পরিবর্তন প্রত্যাশিত। ইনজুরির কারণে সেরা পেস বোলিং আক্রমণ নেই জেনেও মাইকেল ক্লার্কের এ সিদ্ধান্ত দিনশেষে প্রশংসিত হচ্ছে বহুগুণ বেশি। ৫১ রানে ৫ উইকেট সে স্রোতটাকে করে দিয়েছে প্যাটিসনমুখী। এটা প্যাটিনসনের দ্বিতীয় টেস্ট। দুই ম্যাচেই একবার করে ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে নেওয়া প্যাটিনসন অবশ্য নতুন বলের সঙ্গী পিটার সিডলকেও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, 'খুব জোরে বল করছে সিড (সিডল)। আগে বল বেশি সুইং করাতে পারত না। কিন্তু এখন পারছে। দেড় শ কিলোমিটার গতির বল সুইং করলে ব্যাটসম্যান খেলবে কী করে?' তিন কিউই ব্যাটসম্যান সিডলের সুইং বুঝতে পারেননি। টেস্ট অভিজ্ঞতায় প্যাটিনসনের 'সমবয়সী' মিশেল স্টার্ককেও খালি হাতে ফিরতে হয়নি। ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। সিডনি টেস্টের প্রথম দিনটা যেন পুরোপুরি নতুনদের! প্রবল ঝরে ডানা ঝাপটে কিউইরা দেড় শ' ছুঁতে পেরেছে ডিন ব্রাউলিনের ফিফটির সৌজন্যে। লোয়ার মিডল অর্ডারে নামা এ ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত স্কোরটাই চোখে পড়ার মতো। অথচ এটা ব্রাউলিনের তৃতীয় টেস্ট। ক্রিকইনফো
নিউজিল্যান্ড : ১ম ইনিংস ৪৫.৫ ওভার ১৫০ (ব্রাউলিন ৫৬, প্যাটিনসন ৫/৫১, সিডল ৩/৪২, স্টার্ক ২/৩০)।
অস্ট্রেলিয়া : ১ম ইনিংস ৪.২ ওভার ১২/১ (ওয়ার্নার ব্যাটিং ৭, খাজা ব্যাটিং ১; মার্টিন ১/১২)।

No comments

Powered by Blogger.