বুঝতে পেরেছিলাম ঈশ্বর আজ সঙ্গে আছেন

কটা সময় 'শচীন টেন্ডুলকারের ক্লোন' বলা হতো তাঁকে। এখন বীরেন্দর শেবাগ স্বনামেই পরিচিত, আপন কীর্তিতেই উজ্জ্বল। কিছু কিছু জায়গায় তো পেছনে ফেলেছেন টেন্ডুলকারকেও। টেস্টে টেন্ডুলকারের কোনো ট্রিপল সেঞ্চুরি না থাকলেও শেবাগের আছে দুটি। পরশু ওয়ানডেতে টেন্ডুলকারের ২০০ রানের ইনিংস পেছনে ফেলে গড়লেন ২১৯ রানের নতুন রেকর্ড। পরে সংবাদ সম্মেলনেও জানিয়েছেন, টেন্ডুলকারের রেকর্ড ভাঙতে পেরে তিনি খুশি।


ইনিংসটা তিনি উৎসর্গ করেছেন প্রয়াত বাবাকে। এমন একটা রেকর্ড গড়ার দিনে ক্ষমাও চেয়ে নিলেন গৌতম গম্ভীরকে রান আউট করার জন্য।
প্রশ্ন : টেস্টে দু'দুটি ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে আপনার। ওয়ানডেতেও হয়ে গেল ডাবল সেঞ্চুরি। মাইলফলকটাতে কি একটু দেরিতে পেঁৗছানো হলো?
বীরেন্দর শেবাগ : মনে হয় না খুব বেশি দেরিতে হয়েছে (হেসে)। আমার বয়স এখন ৩৩ বছর। বয়স ৩০ পেরিয়ে গেলে আরো পরিপক্ব হয় সবাই। তখন যা যা পেতে চান সেসব অর্জনের জন্য আরো বেশি চেষ্টা করতে হয়। পরিবারের সবাই অনেক দিন ধরেই আমার কাছ থেকে ওয়ানডের ডাবল সেঞ্চুরি প্রত্যাশা করছিল। সেটা করতে পারায় আমি খুশি। এ ধরনের সুযোগ জীবনে একবারই আসে।
প্রশ্ন : এ ইনিংসে তো ওয়ানডেতে টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটাও ভাঙলেন...
বীরেন্দর শেবাগ : টেন্ডুলকারকে আদর্শ মেনেই বেড়ে উঠেছি আমি। তাঁর রেকর্ড ভাঙতে পারায় তাই অন্য রকম আনন্দ হচ্ছে। ওয়ানডেতে ২০০ করা খুবই কঠিন। আবারও বলছি এটা আরো একবার করা খুবই কঠিন। তবে ক্রিস গেইল বা শেন ওয়াটসনের মতো ক্রিকেটারদের পক্ষে সেটা সম্ভব।
প্রশ্ন : আপনি ডাবল সেঞ্চুরি করবেন আর দল রানের পাহাড় গড়বে এমনটা কি আগে ভেবেছিলেন?
শেবাগ : কখনোই না। গম্ভীরের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম, একটু ধৈর্য ধরে খেললে আমরা এখানে বড় রানের স্কোর পেতে পারি, কেননা এখানকার উইকেট ব্যাটিং-স্বর্গ, বাউন্ডারি লাইন ৫০ গজের আর আউটফিল্ডও অসাধারণ। তাই একটু ধৈর্য ধরে ৩০ ওভার পর্যন্ত খেলতে পারলে যে বড় স্কোর পাওয়া সম্ভব সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম। তা ছাড়া আমাদের মিডল অর্ডারও অসাধারণ খেলেছে আর ওরা ফর্মেও আছে। তবে এটা ঠিক আমি ২০০ করব তা ভাবিনি।
প্রশ্ন : এই ডাবল সেঞ্চুরিটা কাউকে উৎসর্গ করতে চান?
শেবাগ : আমার বাবাকে। তিনি আর আমাদের মাঝে নেই, তবে বেঁচে থাকলে এই কীর্তিতে সবচেয়ে খুশি হতেন বাবাই।
প্রশ্ন : অভিনন্দন পাচ্ছেন কেমন?
শেবাগ : কিছুক্ষণ আগে (ম্যাচ শেষের পর) আমার মোবাইল খুললাম, এটুকু সময়েই সাত-আট শ মেসেজ চলে এসেছে। স্ত্রী আর মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। দারুণ খুশি ওরা। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি রণবীর সিং মহেন্দ্রকেও (ভারতীয় বোর্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট)। ২০-৩০ রানে আউট হচ্ছিলাম দেখে তিনি ফোন করে জানিয়েছিলেন, 'স্পিনারদের উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসছ তুমি। ধৈর্য হারিও না, ঠিকই বড় রানের ইনিংস পাবে।' সেটাই হলো।
প্রশ্ন : উইকেটটা কি আপনার কাজ আরো সহজ করে দিয়েছিল?
শেবাগ : এ পিচে লক্ষ্য ছিল অন্তত ১৫০ বল খেলার। সুযোগটা কাজে লাগাতে পারায় আমি খুশি।
প্রশ্ন : কন্ডিশনটাও ছিল অসাধারণ আর ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ...
শেবাগ : হ্যাঁ, অবশ্যই। ব্যাটিং-স্বর্গ এটা। এ ধরনের উইকেটে কিছুটা সময় কাটাতে হয় আর ধীরে ধীরে নিজের শটগুলো খেলে যেতে হয়। শট খেলার সময় ফাঁক-ফোকরও পাচ্ছিলাম সহজে। যখন ভাবছিলাম ছক্কা মারব, সোজা ব্যাটে খেলে ঠিকই পেয়ে যাচ্ছিলাম। তাই মনে হচ্ছিল সবাই নিশ্চয়ই চাচ্ছে ২০০ করে ফেলি। সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরে আমি খুশি। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার পরিবার আর বন্ধুদের প্রতি। সব সময় তারা সমর্থন দিয়ে এসেছে আমাকে।
প্রশ্ন : প্রথম তিনটা ম্যাচে রান না পাওয়ায় ভালো একটা স্কোরের জন্য কি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন?
শেবাগ : আগের ম্যাচের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেই বলেছিলাম, আমাদের টপ অর্ডারের রান না পাওয়ার কথা। ভালো একটা শুরুর দায়িত্ব তো আমার ওপরেও ছিল, আছে। তা ছাড়া সব সময় এ ধরনের সূচনা আপনি পাবেন না, যেদিন পাবেন সেদিন স্কোর বোর্ডে ৪০০ রান তোলার চেষ্টা করাই উচিত।
প্রশ্ন : কখন ভাবলেন যে ২০০ হতে পারে আর তা ভেবে খেলার ধরনটাও বদলালেন?
শেবাগ : পুরো ইনিংসজুড়েই নিজের শট খেলে গেছি আমি, ব্যাটিংয়ের ধরন কখনো বদলাইনি। তবে দ্বিতীয় ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে ব্যাট করার সময় ভাবনাটা এসেছিল মাথায়। ভেবেছিলাম, পাওয়ার প্লের পাঁচটা ওভার ব্যাট করতে পারলে হয়তো হয়ে যাবে ডাবল সেঞ্চুরিটা। তবে ড্যারেন সামি যখন ক্যাচটা ফেলল তখন বুঝে গিয়েছিলাম ঈশ্বর আমার সঙ্গে আছেন আর তিনি বলছেন, '৪৫-৪৬ ওভার পর্যন্ত ক্রিজে থাকলে পেয়ে যাবে ডাবল সেঞ্চুরিটা।'
প্রশ্ন : এমন লম্বা একটা ইনিংস খেলে কি ক্লান্ত?
শেবাগ : (হেসে) অবশ্যই প্রচণ্ড ক্লান্ত। আমি ৩৩ বছরের বুড়ো, পিঠ-কোমর সবই কেমন আড়ষ্ট মনে হচ্ছে। আইস বাথ নিতে হবে।
প্রশ্ন : আজকের এ ইনিংসটার মূল্যায়ন কিভাবে করবেন?
শেবাগ : ওয়ানডেতে এটা আমার অন্যতম সেরা। টেস্টে মানিয়ে নিতে অনেক সময় পাওয়া যায়। কিন্তু ওয়ানডেতে আপনাকে নিজের শট খেলে রান রেট বাড়াতে হয়। কাজটা কঠিন।
প্রশ্ন : এই ইনিংসটা কি অস্ট্রেলিয়ায় ভালো করার ব্যাপারে আপনাকে প্রেরণা জোগাবে?
শেবাগ : অস্ট্রেলিয়ার ব্যাপারটা আলাদা। ওরা খুব ভালো দল, তাই প্রস্তুতিটাও হবে অন্য রকম। আমরা আমাদের সেরাটা খেলারই চেষ্টা করব।
প্রশ্ন : টসে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্তটা তাহলে ঠিক ছিল?
শেবাগ : আমি কিন্তু প্রথমে ফিল্ডিং করার কথাও ভাবছিলাম! কিন্তু এখানে চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে খেলা কয়েকজন সতীর্থ জানিয়েছিল, পরে রান তাড়া করাটা খুবই কঠিন হবে। সেই টুর্নামেন্টে কোনো দলই নাকি পরে ব্যাট করে জেতেনি। এসব জানার পরই টস জিতলে ব্যাট করার সিদ্ধান্তটা কিন্তু নিয়েছিলাম টসের মাত্র পাঁচ মিনিট আগে।
প্রশ্ন : গৌতম গম্ভীর তো রান আউট হয়ে গেল ভুল বোঝাবুঝির জন্য...
শেবাগ : এমনটা হয়ই। আমার জন্য ও রান আউট হয়েছে বলে খারাপ লেগেছে। ড্রেসিংরুমে অন্তত ১০ বার ক্ষমা চেয়েছি ওর কাছে। এখনো ক্ষমা চাচ্ছি।
প্রশ্ন : টেন্ডুলকার যদি ইন্দোরে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিটা করতেন...?
শেবাগ : ও এটা যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় করতে পারে। ওটা হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার।
প্রশংসার ডালি

No comments

Powered by Blogger.