র ঙ বে র ঙ-ভূতের রাত!
বিকালের সূর্যটা পশ্চিমাকাশের দিকে ছুটে চলছে। লালচে আভা জমাট বাঁধছে মেঘের ভাঁজে। কিশোর রিহান মুগ্ধ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে, কেউ রঙ-তুলি দিয়ে খুব যত্ন করে আকাশের ক্যানভাসে কোনো বিশেষ অবয়ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টায় মেতে উঠেছে। পুরো ব্যাপারটা কেমন যেন অপার্থিব লাগছে। অলৌকিক কোনো দৃশ্য দেখার আশায় আকাশের দিকে আরও মনোযোগ দিল রিহান। সূর্যটাকে অস্বাভাবিক বড় দেখাচ্ছে এখন।
ঠিক গোল নয়, কিছুটা ডিমের মতো লাগছে। রহস্যের রঙ মেখে দিগন্তে ডুবে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে ওটা। মায়ের ডাকে চমকে গেল রিহান। এক ঝটকায় ফিরে এলো নিজের পৃথিবীতে। দ্রুত বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ করার কাজ শুরু করে দিল। আঙুলে ব্যথা পেলেও সেটা চেপে গেল মায়ের উদ্বিগ্ন মুখের দিকে তাকিয়ে। তারপর গেল ছোট ভাইবোনদের ধরে আনতে। ওরা বাড়ির সামনেই ছোট্ট উঠোনে খেলছিল। সবাইকে নিয়ে ঘরে ঢুকতেই মা দরজা বন্ধ করে দিলেন। কঠোর নির্দেশ দিলেন, সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে। প্রস্রাব-পায়খানার বেগ পেলেও দরজার কাছে পাহারা দেওয়ার জন্য কাউকে না কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
বাবা যে এখনও ফিরলেন না_ রিহানের এ প্রশ্নের উত্তরে মা কিছু বললেন না। চিন্তিত ভঙ্গিতে দরজা-জানালাগুলো নেড়েচেড়ে দেখা শুরু করলেন। সব ঠিকঠাক লাগানো হয়েছে নিশ্চিত হয়ে এসে বসলেন রিহানের পাশে। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বললেন, চিন্তা করিস না বাবা। উনি ঠিক সময়ই ফিরবেন।
রিহান মুখে কিছু বলল না। মায়ের আরও কাছে সরে এলো। মনে মনে মাকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করল। মুখে মা যা-ই বলুক, মনের ভেতরে তার দুশ্চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে_ এটা ঠিকই বুঝতে পারছে কিশোর রিহান। সূর্যাস্তের শেষ দৃশ্যটা রিহানের খুব দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখন সেটা মাকে বলা সম্ভব না।
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। রিহান চমকে উঠল। মায়ের মুখে আতঙ্কের ছায়া। কে? কয়েকবার ডেকেও কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। দরজা খুলল না ওরা। আধঘণ্টা পর আবার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। সঙ্গে বাবার ভারি গলায় কাশির শব্দও পাওয়া যাচ্ছে। মায়ের চোখে সম্মতি দেখে দরজা খুলে ফেলল রিহান। জড়িয়ে ধরল বাবাকে। আদুরে গলায় বলল, এত দেরি কেন?
রাতে খাবার তৈরি করাই ছিল। গরম করে দ্রুত খেয়ে ফেলল ওরা। তারপর টেবিল ঘিরে গোল হয়ে বসে শুরু করল প্রার্থনা। মধ্যরাতের আগে আবার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। সেই শব্দ ছড়িয়ে গেল প্রত্যেকটি দরজা আর জানালায়। যেন অসংখ্য মানুষ আশ্রয় চাইছে এই গভীর রাতে। হঠাৎ দুলে উঠল পুরো বাড়ি! আতঙ্কে নীল হয়ে পুুরো পরিবার জড়াজড়ি করে বসে পড়ল মেঝেতে। বাইরে তখন কারা যেন সশব্দে ঝগড়ায় মেতে উঠেছে। যেন একদল জোর করে বাড়িতে ঢুকতে চাইছে, বাধা দিচ্ছে অন্য দল। ভয়ঙ্কর তাণ্ডবের ভেতর দিয়ে কেটে গেল সারারাত। সকালের সূর্য রিহানের পরিবারে নিয়ে এলো স্বস্তি।
আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে কেন্ট জাতির ভেতরে এমন বিশ্বাস ছিল, বছরের একটা রাতে প্রেতাত্মারা ছাড়া পায় জীবিত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। ধর্মীয় অনুভূতি থেকে এ রাতকে ঘিরে তাই নানা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। ভালো আত্মার জন্য বাড়ির বাইরে রেখে দেওয়া হতো নতুন ফসল দিয়ে তৈরি নানা খাবার। দুষ্টু আত্মাকে ভয় দেখানোর জন্য রাখা হতো ভয়ঙ্কর মুখোশ। এ সংস্কৃতি ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড ঘুরে উত্তর আমেরিকায় পেঁৗছে তা রূপান্তরিত হয়েছে ভূতসংক্রান্ত আনন্দময় হ্যালোইন উৎসবে।
আমির খসরু সেলিম
বাবা যে এখনও ফিরলেন না_ রিহানের এ প্রশ্নের উত্তরে মা কিছু বললেন না। চিন্তিত ভঙ্গিতে দরজা-জানালাগুলো নেড়েচেড়ে দেখা শুরু করলেন। সব ঠিকঠাক লাগানো হয়েছে নিশ্চিত হয়ে এসে বসলেন রিহানের পাশে। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বললেন, চিন্তা করিস না বাবা। উনি ঠিক সময়ই ফিরবেন।
রিহান মুখে কিছু বলল না। মায়ের আরও কাছে সরে এলো। মনে মনে মাকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করল। মুখে মা যা-ই বলুক, মনের ভেতরে তার দুশ্চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে_ এটা ঠিকই বুঝতে পারছে কিশোর রিহান। সূর্যাস্তের শেষ দৃশ্যটা রিহানের খুব দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখন সেটা মাকে বলা সম্ভব না।
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। রিহান চমকে উঠল। মায়ের মুখে আতঙ্কের ছায়া। কে? কয়েকবার ডেকেও কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। দরজা খুলল না ওরা। আধঘণ্টা পর আবার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। সঙ্গে বাবার ভারি গলায় কাশির শব্দও পাওয়া যাচ্ছে। মায়ের চোখে সম্মতি দেখে দরজা খুলে ফেলল রিহান। জড়িয়ে ধরল বাবাকে। আদুরে গলায় বলল, এত দেরি কেন?
রাতে খাবার তৈরি করাই ছিল। গরম করে দ্রুত খেয়ে ফেলল ওরা। তারপর টেবিল ঘিরে গোল হয়ে বসে শুরু করল প্রার্থনা। মধ্যরাতের আগে আবার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। সেই শব্দ ছড়িয়ে গেল প্রত্যেকটি দরজা আর জানালায়। যেন অসংখ্য মানুষ আশ্রয় চাইছে এই গভীর রাতে। হঠাৎ দুলে উঠল পুরো বাড়ি! আতঙ্কে নীল হয়ে পুুরো পরিবার জড়াজড়ি করে বসে পড়ল মেঝেতে। বাইরে তখন কারা যেন সশব্দে ঝগড়ায় মেতে উঠেছে। যেন একদল জোর করে বাড়িতে ঢুকতে চাইছে, বাধা দিচ্ছে অন্য দল। ভয়ঙ্কর তাণ্ডবের ভেতর দিয়ে কেটে গেল সারারাত। সকালের সূর্য রিহানের পরিবারে নিয়ে এলো স্বস্তি।
আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে কেন্ট জাতির ভেতরে এমন বিশ্বাস ছিল, বছরের একটা রাতে প্রেতাত্মারা ছাড়া পায় জীবিত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। ধর্মীয় অনুভূতি থেকে এ রাতকে ঘিরে তাই নানা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। ভালো আত্মার জন্য বাড়ির বাইরে রেখে দেওয়া হতো নতুন ফসল দিয়ে তৈরি নানা খাবার। দুষ্টু আত্মাকে ভয় দেখানোর জন্য রাখা হতো ভয়ঙ্কর মুখোশ। এ সংস্কৃতি ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড ঘুরে উত্তর আমেরিকায় পেঁৗছে তা রূপান্তরিত হয়েছে ভূতসংক্রান্ত আনন্দময় হ্যালোইন উৎসবে।
আমির খসরু সেলিম
No comments