ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা-অর্থনীতির স্বার্থ সর্বাগ্রে
উন্নত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। তার সঙ্গে বিনিয়োগবান্ধব বিধিবিধান ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে, দেশের আয় বাড়িয়ে অর্থনীতির শনৈঃ শনৈঃ উন্নতির দ্বার অবারিত করে। তবে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নতির জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে অধিক গুরুত্ববহ।
এই একই কথা ধ্বনিত হয়েছে গত রোববার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত 'দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি' শীর্ষক মতবিনিময় সভায়। আলোচনাকালে ব্যবসায়ী নেতারা অভিযোগ করেছেন, চাঁদাবাজি ও হুমকি, ছিনতাই-লুটতরাজ, পুলিশের হয়রানির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। বস্তুত দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতির যোগ লক্ষ্য করা গেলেও দেশের ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের নিরাপত্তাজনিত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়। আর এ কথাটি মতবিনিময় সভায় উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও অস্বীকার করতে পারেননি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, চিহ্নিত চাঁদাবাজরা কোনো না কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় লাভ করে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও এসব মাস্তানকে সাহায্য করতে দেখা যায়। মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মিলে এই যে আঁতাত গুঁড়িয়ে দিতে হলে প্রয়োজন কঠিন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায় থেকেও এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বাহিনী সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখলে এরাও ভবিষ্যতে প্রকৃত আইনের রক্ষকের কাজই করবে। রাজনৈতিক ক্ষমতা যাদের হাতে থাকে তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যই হলো সেই জিয়নকাঠি, যার মাধ্যমে একটি অনুন্নত দেশও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারে। সে জন্য সর্বাগ্রে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি সবসময় অধিক গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হয়। ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাবোধ করলেই নতুন নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টি রাজনৈতিক নেতৃত্বের অগ্রাধিকার তালিকার পহেলা নম্বরে থাকা উচিত। আমাদের দেশের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হয়তো অতীতের চেয়ে কিছুটা ভালো। কিন্তু এখনও ব্যবসায়ীরা যে স্বাভাবিক নিরাপত্তাটুকুও সবসময় পান না সেটা তো তাদের নিজস্ব বয়ানেই স্পষ্ট। টাকা বা পণ্য আনা-নেওয়ার পথে ছিনতাই, জবরদস্তি চাঁদা আদায়, যখন-তখন প্রাণনাশের হুমকি প্রদান এসব এ দেশে নিত্যদিনের ব্যাপার। এতে ব্যবসায়িক নিরাপত্তাহীনতা ছাড়াও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতেও তা পরোক্ষে অবদান রাখে। পথে পথে চাঁদাবাজি, এমনকি উৎসে কর কর্তনের মতো করে টোল আদায়সহ নানাভাবে চাঁদাবাজির শিকার হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরাও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পণ্যমূল্য নিজেদের ইচ্ছামতো বেঁধে দেন। এর খেসারত দিতে হয় শেষ পর্যন্ত সাধারণ ক্রেতাদেরই। সুতরাং দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা ও বাজারকে বাজারের নিয়মে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেওয়ার স্বার্থেও চাঁদাবাজি-হুমকির মতো ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিকূল পরিস্থিতির অবসান হওয়া দরকার।
আমরা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পণ্যমূল্যকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সহনীয় সীমার মধ্যে আনার স্বার্থেই এ ক্ষেত্রে ভয়ভীতি দূর করে অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা দরকার বলে মনে করি। সরকার বিষয়টির্ স্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে করা অভিযোগগুলোকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।
আমরা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পণ্যমূল্যকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সহনীয় সীমার মধ্যে আনার স্বার্থেই এ ক্ষেত্রে ভয়ভীতি দূর করে অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা দরকার বলে মনে করি। সরকার বিষয়টির্ স্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে করা অভিযোগগুলোকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।
No comments