কালের আয়নায়-ভারতের মন্ত্রী চড় খেলেন :'আম্মোদের' অবস্থা কী হবে? by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

ণতন্ত্র কোনো দেশে জুড়ি গাড়ি চড়ে আসে না। আসে চর্চা, ধৈর্য ও অভ্যাস গঠনের দ্বারা। আমাদের দেশে এই চর্চা, ধৈর্য ও অভ্যাস গঠন কোনোটাই নেই। ভারত বড় দেশ হতে পারে। কিন্তু এখনও আমাদের মতো একই আর্থসামাজিক অবস্থার দেশ। কিন্তু সে দেশটিতে যে গণতন্ত্রচর্চার ইচ্ছা আছে, অভ্যাস গড়ে উঠছে, শারদ পাওয়ারের ঘটনা তার প্রমাণ\
খবরটা এতদিনে শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই চাউর হয়ে গেছে। বিলেতের কাগজেও বড় করে ছাপা হয়েছে।


ভারতের কংগ্রেসের এককালের জাঁদরেল নেতা, বর্তমানে এনসিপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শারদ পাওয়ারের গালে প্রচণ্ড চড় দিয়েছে হরবিন্দর সিং নামে এক যুবক। খবরটি এখন সকলের জানা। সুতরাং বিস্তারিত লেখার দরকার নেই। প্রাসঙ্গিকভাবে শুধু বলা চলে, ভারতের কৃষিমন্ত্রী শারদ পাওয়ার দিলি্লর পার্লামেন্ট স্ট্রিটের এক সিনেমা হলে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ কয়েকজন সরকারি কর্মচারী ও সাংবাদিকদের ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে ওই যুবক ৭১ বছর বয়সী নেতা এবং মন্ত্রীর গালে প্রচণ্ড থাপ্পড় দিয়েছে। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষী কম ছিল।
হরবিন্দর সিং চড় মারার পর বলেছে, মন্ত্রীর দুর্নীতি এবং দেশে ক্রমাগত অসহনীয়ভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে তার এই চড় মারা। সাংবাদিকদের কাছে সে বলেছে, 'আমি তাকে চড় মারার জন্যই এসেছিলাম।' কোমর থেকে ছোট একটি কৃপাণ বের করে সে বলেছে, 'আজ (বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর) গুরুতর কিছু ঘটে যেতে পারত। কেবল গুরু তেজবাহাদুরের শাহাদাত দিবস বলে মন্ত্রীকে ক্ষমা করে দিয়েছি।' পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে।
ভারতে শারদ পাওয়ারের মতো নেতার গায়ে হাত দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। তিনি দীর্ঘকাল কংগ্রেসের সামনের সারির নেতা ছিলেন। তার একবার কংগ্রেসের নেতা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও কথা ছিল। কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে তা হতে পারেননি। বর্তমানে মনমোহন সরকারে কৃষিমন্ত্রী হলেও তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী মন্ত্রী ও নেতা। এহেন প্রভাবশালী ব্যক্তির গালে প্রকাশ্যে চড় মারা ভারতের রাজনীতিতে এক অভাবনীয় ঘটনা। সেখানে গান্ধীর মতো নেতাও আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন। কিন্তু কেউ তার মতো কোনো নেতাকে প্রকাশ্যে চড় মেরে দাবি করেনি যে, 'এই নেতা দুর্নীতিপরায়ণ এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিও থামাতে পারছে না, তাই তাকে চড় মারলাম।'
এই শিখ যুবক প্রবীণ নেতার গালে এত জোরে চড় মেরেছিল যে, তিনি ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলেন। কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মী তাকে ধরে ফেলে। এই ঘটনায় সারা ভারতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শারদ পাওয়ারের রাজনৈতিক শত্রু-মিত্র সবাই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। এই ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস যে বিজেপিকে উস্কানিদানের জন্য দায়ী করেছে, তারাও এই ঘটনার নিন্দা করেছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি নেতা যশোবন্ত সিনহা কিছুদিন আগে বলেছেন, 'যেভাবে দেশে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে তাতে জনসাধারণ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।' কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি নেতার এই মন্তব্যই হরবিন্দর সিংকে মন্ত্রীর গালে চড় মারার জন্য উস্কানির কাজ করেছে।
কংগ্রেসের এই অভিযোগ সঠিক হোক আর না হোক গান্ধীবাদী নেতা আন্না হাজারের এ সম্পর্কিত এক মন্তব্যে তার বিরুদ্ধেও ধিক্কার ধ্বনি উঠেছে। শারদ পাওয়ারের গালে চড় মারা হয়েছে, এই খবরটা শুনে আন্না হাজারে নাকি বিদ্রূপের ভঙ্গিতে বলেছেন, 'মাত্র একটা চড়?' এমনিতেই মনমোহন সিংয়ের সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অনশন ধর্মঘট করে আন্না হাজারে যে বাহবা কুড়িয়েছিলেন তা এখন নেই। তার কিছু ক্রিয়াকর্ম, কথাবার্তা, বিতর্কিত দল ও ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ তার ভাবমূর্তি অনেকটাই ক্ষুণ্ন করেছে।
এখন শারদ পাওয়ারকে চড় মারার ঘটনায় তির্যক উক্তি তার সম্পর্কে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। আন্না হাজারে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, তার বক্তব্য যেভাবে প্রচার করা হয়েছে, তিনি সেভাবে কথাটা বলেননি। তাতে তার সমালোচকরা মুখ বন্ধ করেনি। ভারতের পার্লামেন্টে শারদ পাওয়ারের ওপর হামলা সম্পর্কে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে আন্না হাজারের মন্তব্যেরও সমালোচনা হয়েছে।
প্রবীণ নেতা ও মন্ত্রীর ওপর দৈহিক হামলার ঘটনায় সবচেয়ে সংযত মনোভাব দেখিয়েছেন তার কন্যা এবং এনসিপিদলীয় সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে। সুপ্রিয়া বলেছেন, তিনি কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে চান না। দলের সদস্যদের তিনি উপদেশ দিয়েছেন, 'এই ঘটনা তাদের ভুলে যাওয়া উচিত। সমস্ত ব্যাপারটা পুলিশ দেখছে। সুতরাং কেউ যেন আইন-শৃঙ্খলা নিজের হাতে তুলে না নেয়।'
এই উপদেশে তার দলের সব নেতাকর্মী কান দিয়েছেন তা নয়। তারা অনেকেই হরবিন্দর সিংকে পুলিশ যেদিন দিলি্লর পাতিওয়ালা হাউস আদালতে হাজির করে, সেদিন তার ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা চালায়। সিংকে এজলাসে নিয়ে যেতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়। শারদ পাওয়ারের ঘটনা নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের সংসদে কিছুকাল আগের একটি ঘটনার মতো ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের সংসদে কয়েকজন সংসদ সদস্য দেশের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ভূমিকার ঢালাও সমালোচনা করে তেমন বাহবা কুড়াতে পারেননি, বরং তারা নিজেরাই নাগরিক সমাজে সমালোচনার, ক্ষেত্রবিশেষে নিন্দার সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু ভারতে শারদ পাওয়ারের ঘটনায় সেখানকার মিডিয়ার, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকায় তীব্র সমালোচনা হয়েছে। গত ২৫ নভেম্বর ভারতের পার্লামেন্টে এবং সে সমালোচনাকে দেশের সুশীল সমাজের একটি বড় অংশ সমর্থন জানিয়েছে।
শারদ পাওয়ারের সঙ্গে অভব্য আচরণের নিন্দা জানাতে গিয়ে জনতা দলের (ইউ) সাংসদ শারদ যাদব ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, 'ওই চড় মারার ঘটনা এই মিডিয়া বারবার দেখিয়েছে। এমনিতেই ঘটনাটি অপমানজনক। তার ওপর ইলেকট্রনিক মিডিয়া বারবার ওই ফুটেজ দেখিয়ে সেটাকে আরও বড় করে দেখাতে চেয়েছে। জনতা দলের নেতা আরও বলেছেন, 'শারদ পাওয়ারকে চড় মারা হয়েছিল একবার। কিন্তু ইলেকট্রনিক মিডিয়া সেটা ৫০ বার দেখিয়েছে। মনে হবে ওই যুবক বুঝি ৫০ বার চড় মেরেছে। অর্থাৎ মিডিয়া বোঝাতে চেয়েছে, বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের এটাই প্রাপ্য।'
জনতা দলের সাংসদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে সংসদে টিভি মিডিয়াগুলোর তীব্র নিন্দা করেছে সিপিআই, বিএসপি, ডিএমকে দলও। এ ব্যাপারে টিভি মিডিয়ার ভূমিকা সমর্থন করার জন্য ভারতে ছোট-বড় একটি দলও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সর্বভারতীয় সুশীল সমাজের কেউ এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি। ভারতের টিভি মিডিয়ায় এই অবস্থা থেকে বাংলাদেশের অধিকাংশ ইলেকট্রনিক মিডিয়া, এমনকি কোনো কোনো প্রিন্ট মিডিয়ারও শিক্ষা নেওয়া উচিত। নইলে 'বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এবার হে ঘুঘু তব বধিব পরান' এই অবস্থার উদ্ভব বাংলাদেশেও হতে পারে।
শারদ পাওয়ারের মতো একজন জাঁদরেল কেন্দ্রীয় নেতা এবং মন্ত্রীর বেলায় যা ঘটল তা কি বাংলাদেশেও ঘটতে পারে? শত নিরাপত্তা ও সতর্কতা উপেক্ষা করে ভারতে একজন মন্ত্রীর বেলায় যা ঘটতে পেরেছে, তা বাংলাদেশেও ঘটতে পারে। বাংলাদেশে একজন নয়, একাধিক মন্ত্রী ও উপদেষ্টার বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ আছে। বিদ্যুৎ সংকট, দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে নাভিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশেও কি হরবিন্দর সিংয়ের মতো একজন ত্রুক্রদ্ধ যুবকের দেখা পাওয়া যেতে পারে না?
সুধী পাঠকরা, আমাকে ভুল বুঝবেন না। বাংলাদেশেও হরবিন্দর সিংয়ের মতো এক 'উন্মাদ' যুবকের আবির্ভাব আমার কাম্য নয়। অবশ্যই তা আমি চাই না। কিন্তু ভারতে ঘটনাটি ঘটেছে বলে বাংলাদেশেও তা অনুকরণের চেষ্টা ও চক্রান্ত দুই-ই যে হতে পারে সে সম্পর্কে আমি সরকারকে আগেভাগেই সতর্ক করে দিচ্ছি। তবে মন্ত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও দৃঢ় করার পরিবর্তে দেশের বিদ্যুৎ সংকট, দ্রব্যমূল্য সমস্যা ইত্যাদি দ্রুত সমাধান দ্বারা সরকার জনমনের ক্রোধ ও অসন্তোষ দূর করার ব্যবস্থা করলে ভালো করবেন। এক শ্রেণীর মন্ত্রী ও উপদেষ্টার গণ্ডদেশ রক্ষার সেটাই হবে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা।
আমার কোনো কোনো বন্ধু বলেছেন, 'ভারতীয় মন্ত্রীর চড় খাওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রী বা উপদেষ্টা সম্পর্কে তোমার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। যদিও আমরা বলি, বাংলাদেশও একটি গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু ভারতের মতো রাজনৈতিক কালচার বাংলাদেশে নেই। যদি থাকত তাহলে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা, খাদ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাস্তায় বের হতে পারতেন কি-না সন্দেহ। কোনো সভা-সম্মেলনে যাওয়া দূরের কথা, বরং বাংলাদেশে দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের জন্য কোনো ত্রুক্রদ্ধ বেকার যুবক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তারই চড় খাওয়ার আশঙ্কা আছে। একটি চড় নয়, বহু চড়। কারণ কোনো মন্ত্রী বা উপদেষ্টা চড় মারলে তার পারিষদরা চড় মারবেন আরও বেশি।
এই বন্ধুদের মন্তব্য অত্যুক্তি মনে হয়নি। লন্ডনের রাস্তায় প্রিন্সেস অ্যানের গাড়ি হাইস্পিডের জন্য পুলিশ আটকালে রাজকুমারী পুলিশের কাছে ক্ষমা চান, জরিমানা দিতে রাজি হন। ঢাকায় এক এমপিকে ট্রাফিক জ্যামে দ্রুত রাস্তামুক্ত করে দিতে না পারায় ট্রাফিক পুলিশকে এমপির হাতে চড়-থাপ্পড় খেতে হয়েছে। এ জন্যই বলি 'যস্মিন দেশে যদাচারেও'। ভারতের ঘটনায় আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ভারতে যা ঘটেছে, তার উল্টোটাই বরং আমাদের দেশে ঘটতে পারে।
ভারতে শারদ পাওয়ারের মতো সম্মানিত প্রবীণ নেতাকে যে যুবক চড় মেরেছে এবং চড় মেরে সাংবাদিকদের কাছে গর্ব প্রকাশ করেছে, তাকে পুলিশ হেনস্তা করেনি। শারদ পাওয়ারের দলের লোকদের কবল থেকে তাকে রক্ষা করে আদালতে নিয়ে বিচারে সোপর্দ করেছে। নেতার সাংসদকন্যাও দলের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, 'তারা যেন ব্যাপারটি ভুলে যায়। পুলিশ যা করার করবে। তারা যেন বিচারের ভার নিজেদের হাতে তুলে না নেয়।' একটি গণতান্ত্রিক দেশের গণতান্ত্রিক কালচারে লালিত নেতা-নেত্রীর মুখেই এ কথা শোভা পায়। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এ ঘটনা ঘটলে কী ঘটতে পারত?
কোনো পাতি মন্ত্রীর গায়েও কেউ হাত দিলে পুলিশ তাকে ধরার আগেই মন্ত্রীর দলের লোকজনই তাকে পিটিয়ে আধমরা করত। তারপর 'পুলিশে ছুঁলে তো আঠারো ঘা'। অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনও নির্যাতিত হতো। তার ঘরবাড়িতেও হামলা হতো। রাজপথে ট্রাফিক আইন ভাঙলে বা অমান্য করলে কোনো মন্ত্রী, সাংসদ বা সরকারি দলের চুনোপুঁটির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের সাহস ও ক্ষমতা ট্রাফিক পুলিশের আছে কি?
গণতন্ত্র কোনো দেশে জুড়ি গাড়ি চড়ে আসে না। আসে চর্চা, ধৈর্য ও অভ্যাস গঠনের দ্বারা। আমাদের দেশে এই চর্চা, ধৈর্য ও অভ্যাস গঠন কোনোটাই নেই। ভারত বড় দেশ হতে পারে। কিন্তু এখনও আমাদের মতো একই আর্থসামাজিক অবস্থার দেশ। কিন্তু সে দেশটিতে যে গণতন্ত্রচর্চার ইচ্ছা আছে, অভ্যাস গড়ে উঠছে, শারদ পাওয়ারের ঘটনা তার প্রমাণ।
লন্ডন, ৯ ডিসেম্বর ২০১১, শুক্রবার

No comments

Powered by Blogger.