মনের ভয়েই ১৩৫! by সঞ্জয় সাহা পিয়াল

মে'ন্টাল ব্লক'_ গতকাল বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ১৩৫ রানের প্যাকেট হাতে নিয়ে হতাশ কোচ ইংরেজিতে ওই শব্দ দুটিই ব্যবহার করেছিলেন। শব্দটির কাছাকাছি বাংলা করতে গিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যেই মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। কেউ বলছিলেন শব্দটি হতে পারে 'মানসিক বৈকল্য'। এতে অবশ্য অনেকেই আপত্তি তুলে জানিয়েছিলেন, পাগলের কাছাকাছি শোনা যায় এটি। সবাই মিলে যুতসই দুটি শব্দটি বেছে নেন_ 'মানসিক প্রতিবন্ধকতা' বা


'মনস্তাত্তি্বক বাধা'। এতে আপত্তি না তুললেও সাদা বাংলায় কোচ স্টুয়ার্ট ল বোঝাতে চেয়েছিলেন মনের বাঘেই খেয়েছে তার ছেলেদের। 'সবচেয়ে খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, পাকিস্তানি বোলাররা আমাদের উইকেট নেয়নি, আমরা নিজেরাই তাদের উইকেট দিয়ে এসেছি। আর এটা একবার নয়, বারবারই হচ্ছে। কোচ বলে শুধু আমি একা নই, আমার মনে হয় প্রত্যেক সমর্থকই এই পুনরাবৃত্তি দেখে হতাশ হয়েছেন। মানসিক প্রতিবন্ধকতায় আটকে আছে ব্যাটসম্যানরা।' চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে সাংবাদিকদের সামনে হতাশার কথা বলার পর একটা সম্ভাবনার কথাও বলেছিলেন। 'এখনও এ টেস্ট শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের বোলাররা যদি ওদের কম রানে আউট করতে পারে। তারপর দ্বিতীয় ইনিংসে যদি আমরা ভালো স্কোর করি, এরপর আমাদের বোলাররা আরও ভালো বোলিং করে, তাহলে অনেক কিছুই সম্ভব।' স্টুয়ার্ট ল-র এ কথাগুলো উপস্থিত কাউকেই আস্থা দিতে পারেনি। তাই অনেকেই কোচের এ কথাটুকু বাদ দিয়ে নোট নিয়েছিলেন গতকাল।
কেননা এ মুহূর্তে আর যাই হোক জয়ের দিবাস্বপ্ন দেখার মানুষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তামিম, নাফীস ,আশরাফুলের ফুটওয়ার্কের দুর্বলতা এদিন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সাকিবের সুইপ শট খেলার জটিলতা, রিয়াদের ব্যাক ফুটে গিয়ে ডিফেন্স করার প্রবণতা সবার সামনে এসেছে, যা কেবল ম্যাচের দিনই প্রকট হয়ে ধরা পড়ে, নেটে কি কখনও ছেলেদের এ দুর্বলতা চোখে পড়েনি কোচের? 'এটা অনুশীলন কম করার ব্যাপার না। এটা মানসিক একটি প্রতিবন্ধকতা। এদিনের উইকেট ব্যাটিং সহায়ক ছিল। আমাদের ছেলেরা ক্রিকেটের বেসিক ব্যাপারগুলোই মাঠে গিয়ে প্রয়োগ করতে পারছে না। কখনও কখনও মানসিক এ প্রতিবন্ধকতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আক্রমণই হতে পারে সেরা রক্ষণের অস্ত্র; কিন্তু আমরা তাও পারছি না। দলের কেউ একজন বড় স্কোর পেলেই এটা ঠিক হয়ে যাবে। তামিমের একটা খারাপ সময় যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সে তো অতীতে প্রমাণ করেছে যে সে পারে। শুধু আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণেই এটা হচ্ছে না।'
মনের বাঘে সিনিয়রদের ঘুম হারাম হয়ে গেলেও নাসির-নাজিমের মতো নতুনরা কিন্তু বেশ আছেন। 'নাসিরের ভয়ডর নেই। সে আন্তর্জাতিক ম্যাচে নতুন। সে কখনও খারাপ সময় দেখেনি, এ কারণেই সে সাহসী হয়ে ব্যাটিং করছে। নাজিমউদ্দিনও দারুণ খেলেছে, আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। অভিষেক ম্যাচেই সে তার প্রতিভার নিদর্শন দেখিয়েছে, যা সিনিয়র ক্রিকেটাররা দেখাতে পারেনি। তারা চাপ সামলাতে পারছেন না।'
তিন স্লিপ আর এক গালি নিয়ে পাকিস্তানিরা জাল সাজিয়েছিলেন। সে জালেই কি-না ধরা পড়ল ছয় ব্যাটসম্যান। ৫১.২ ওভারেই শেষ হলো প্রথম ইনিংস। লম্বা ইনিংস খেলতে হবে, বড় স্কোর করতে হবে, ভালো খেলা খেলতে হবে বলে ম্যাচের আগের দিন যে কথাগুলো শোনা যায়, সেগুলো কি শুধুই বায়বীয় কথাই থেকে যাবে? 'আমরা লম্বা ইনিংসের যে কথা বলি, সেটা খেলার আদর্শ সুযোগ ছিল আজ (গতকাল)। চা বিরতির পর উইকেট অনেক সহজ হয়ে এসেছিল; কিন্তু আমরা পারিনি। তবে আমি আশাহত হতে পারি না। আমাদের ছেলেরা প্রতিভাবান, শুধু মানসিক জড়তা তাদের একটি জায়গায় স্থির করে রেখেছে। যেখান থেকে তারা শটও খেলতে পারছে না,আবার ডিফেন্সও করতে পারছে না। সবাই যদি নিজের ওপর বিশ্বাস রাখে তাহলে এ টেস্টেই একটা সময় আমারা ফিরে আসব।' কোচের মতো সমর্থকরাও চায়, মনের বাঘকে দূরে ঠেলে সত্যিকারের বাঘের হুঙ্কার দিয়ে উঠুক মুশফিকরা। তাতে চট্টগ্রাম টেস্ট না বাঁচুক, অন্তত মুখ রক্ষা হবে কিছুটা।

No comments

Powered by Blogger.