প্রশাসনিক অদক্ষতা ও দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে হবে-এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি

বর্তমান সরকারের প্রথম অর্থবছরে (২০০৯-২০১০) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি লক্ষ করা গিয়েছিল, এবার তার ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে না। চলতি ২০১০-২০১১ অর্থবছরের মূল এডিপির আয়তন ছিল ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা; প্রথম সাত মাসে বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক না হওয়ায় ফেব্রুয়ারিতে প্রায়


সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপির বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নেও গত দুই মাসের চিত্র হতাশাব্যঞ্জক। ফলে, সরকারের ১৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ইতিমধ্যে সংশোধিত এডিপি থেকে ৬২৯ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে।
প্রতি অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাজেট ঘোষণার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। এই আহ্বান নিছক আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে, কারণ প্রতি অর্থবছরেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে মূল এডিপির আয়তন ছেঁটে বরাদ্দ কমানো হয়, আবার সংশোধিত এডিপির বরাদ্দকৃত অর্থও পুরোটা ব্যয় হয় না। বর্তমান অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এডিপির সংশোধিত বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। গত অর্থবছরের মোট সংশোধিত এডিপি বরাদ্দে ব্যয় হয়েছিল ৯১ শতাংশ। বর্তমান অর্থবছরের আর মাত্র তিন মাস বাকি রয়েছে, এই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক প্রকল্প তড়িঘড়ি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যয়ের হার বাড়বে বটে, কিন্তু অর্থের সদ্ব্যবহার কতটা হবে, তা বলা কঠিন। প্রতিবছরই দেখা যায়, শেষ তিন মাসে ব্যয় হয় প্রায় ৪০ শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। প্রধান সমস্যাগুলো যে চিহ্নিত করা হয়নি, তা-ও নয়। যেমন—যথাসময়ে বাস্তবসম্মত ক্রয়-পরিকল্পনা ও কর্মপরিকল্পনা করা হয় না, হলেও ঠিকভাবে কর্মপরিকল্পনা অনুসৃত হয় না। দরপত্র আহ্বান, কার্যাদেশ দেওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক রকমের বিলম্বও ঘটে যায়। বরাদ্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের প্রশাসনিক সক্ষমতা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভিজ্ঞতার অভাবও একটি বড় সমস্যা। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, বদলি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনিময় রয়েছে; যোগ্যতা যাচাইয়ের বিষয়টি কম গুরুত্ব পায়, এসব ক্ষেত্রে ঘন ঘন বদলি কাজের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। সব মিলিয়ে, অর্থবছরের শেষাংশে এসে তড়িঘড়ি করে বরাদ্দ ব্যয় করার ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত হয় না।
এডিপি বাস্তবায়নে সাফল্য বা ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে সরকারের সামগ্রিক কর্মসম্পাদনের সাফল্য-ব্যর্থতার আংশিক চিত্র ফুটে ওঠে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুরো অর্থনীতিতে যে কর্মচাঞ্চল্য প্রত্যাশা করা হয়, তার মধ্য দিয়ে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং আয় বাড়ে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে চিরাচরিত শ্লথগতি থেকে বেরিয়ে এসে যথাসময়ে বরাদ্দ অর্থের সদ্ব্যবহার কীভাবে করা যায়, সেদিকে আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.