রাজধানীর জনপরিবহন ব্যবস্থা-'মহাপরিকল্পনা'য় কচ্ছপগতি মহাবিপর্যয় অনিবার্য!-* মেট্রোরেল, বিআরটি, উড়াল সড়ক-সেতু নিয়ে অনিশ্চয়তা -* পরিকল্পনাতেই গলদ by পার্থ সারথি দাস

২০ মার্চ। সকাল সাড়ে ১১টা। গুলশান দুই নম্বরের মূল সড়ক ধরে কালাচাঁদপুরের দিকে আসতেই দেখা গেল আটকে আছে শত শত গাড়ি। ফুটপাতের ওপর কিংবা পাকা বাড়ির সামনের খালি জায়গা দিয়ে হর্ন বাজিয়ে ছুটছে মোটরসাইকেলগুলো।


কিন্তু রিকশা, প্রাইভেট কার আর মাইক্রোবাসের যাত্রী-চালকরা অবরুদ্ধ। অটোরিকশায় এক কিলোমিটারেরও কম পথ পাড়ি দিতে ওখানে সময় লেগেছে ৫৫ মিনিট। তিনটি পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশকেও অসহায় মনে হয়েছে। তাদের ইশারাও কোনো কাজে লাগেনি।
শুধু গুলশান-কালাচাঁদপুর নয়, রাজধানীর সব রাস্তা ও অলিগলিতে যানজট তীব্রতর হয়ে উঠছে। বাসা কিংবা কর্মস্থল থেকে বেরিয়েই মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে পথে। জন ও যানের ভারে নুয়ে পড়া রাজধানীতে জনপরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট গবেষকদের দাবি, আগামী ২০ বছরেও এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাবে না রাজধানী ঢাকা। বরং সামনে অপেক্ষা করছে মহাবিপর্যয়। তাঁরা বলেছেন, একদিকে ক্রমবর্ধমান হারে দেশের মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে; অন্যদিকে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতাসহ বিভিন্ন কারণে মহানগরীর পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের 'মহাপরিকল্পনা' বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারো কারো মতে, পরিকল্পনার মধ্যেও গলদ আছে।
যানজট ও জনপরিবহন গবেষক সন্তোষ কুমার রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এসটিপি প্রণয়ন করা হয়েছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ৯ বছরে যে কাজ হয়েছে, তা আশার সঞ্চার করে না। এ ছাড়া উড়াল সেতু ও সড়কের যেসব পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেগুলো সাধারণ জনগণের কথা ভেবে করা হয়নি। উড়াল সেতু স্থাপনে যানজট স্থানান্তরিত হয়, কিন্তু নিরসন হয় না। অথচ সরকার বহু অর্থ ব্যয়সাপেক্ষ উড়াল সেতু ও সড়ক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আমি নিজে নগরীর বিভিন্ন ইন্টারসেকশনে ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছি, তাতে ব্যয় হবে মাত্র দুই হাজার কোটি টাকা। যানজট নিরসনের জন্য সড়কের সংযোগস্থলে গাড়ির অবিরাম যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে। অথচ এ ব্যাপারে মহাপরিকল্পনায় কিছু বলা হয়নি। মহাপরিকল্পনা হতে হবে বাস্তবসম্মত ও দূরদর্শী।' দুঃসহ যানজট পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) প্রণয়ন করা হয় বেশ কয়েক বছর আগে। এই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক স্থাপনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নেই। পরিকল্পনা নিয়ে পাঁচ বছর পরপর সভা করার নির্দেশনা থাকলেও তা করা হয়নি। পরিকল্পনায় গণপরিবহনকে উৎসাহিত করার নির্দেশনা না মেনে সরকার অবাধে ছোট গাড়ির নিবন্ধন দিচ্ছে। যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে চার বছরের ব্যবধানে রাজধানীতে ৪২টি পরিবহন কম্পানির পাঁচ শতাধিক বাস বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি উদ্যোগে দুই হাজার নতুন বাস আনার পরিকল্পনা তিন বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি।
নগরীতে চলমান বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে যানবাহন সমন্বয় বোর্ডের (ডিটিসিবি) সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কোনো সমন্বয়ও নেই। এ কারণে কোনো কোনো প্রকল্প আবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্তরায় হয়েও দেখা দিচ্ছে।
এসটিপি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ডিটিসিবির অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম সালেহ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলায় নতুন আবাসন ও শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে। প্রণীত ওই মহাপরিকল্পনায় এ বিষয়গুলো সামনে রেখে ঈষৎ পরিবর্তন করতে হবে। জরুরিভিত্তিতে বৃত্তাকার নৌপথের বিষয়ে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না হলে ঢাকা নিশ্চল হয়ে যাবে।'
প্রতিদিন বাড়ছে দুই হাজার নতুন বাসিন্দা : এমনিতেই ঢাকা গিজগিজ করছে মানুষে। তার ওপর ঢাকায় প্রতিদিন দুই হাজার ১৩৬ জন বাসিন্দা বাড়ছে বলে ঢাকা মেট্রোপলিটন উন্নয়ন পরিকল্পনায় (ডিএমডিপি) উল্লেখ আছে। নদীভাঙনসহ নানা কারণে অভাবী মানুষ এই নগরীতে আসছে জীবিকার টানে। গবেষকরা বলছেন, মানুষের চাপে রাজধানীর আয়তন বাড়িয়ে নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, সাভারকে অন্তর্ভুক্ত করলেও ২০৫০ সালে বাড়তি জনসংখ্যায় তা পূর্ণ হয়ে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম নূর-উন-নবী কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের ভেতরে গড় অভিবাসনের হার ৪.৫ শতাংশ। কিন্তু ঢাকা শহরে এই হার ৬ শতাংশ। এখনই নগরী চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঢাকায় বাড়তে থাকা জনসংখ্যার সঙ্গে সংগতি রেখে পরিবহন ও সড়কে চলাচলের ব্যবস্থা করতে না পারলে ১০-১৫ বছর পর মানুষ ঘর থেকে বেরোতে পারবে না। বাস্তব উদাহরণ টেনে এই গবেষক বলেন, গুলশান থেকে নিউ মার্কেট যেতে যেখানে ২০-২৫ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়, সেখানে এখন লাগছে দুই-আড়াই ঘণ্টা। এই পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে এখন অক্লোফোবিয়া কাজ করছে। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে চায় না।
সড়ক প্রয়োজনের এক-চতুর্থাংশ : ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এক হাজার ৫২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঢাকায় সড়ক রয়েছে দুই হাজার ৫৫০ বর্গ কিলোমিটার। নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি আদর্শ নগরীতে মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতে হয়। কিন্তু ঢাকায় রয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ।
বড় যানবাহন বাড়ছে না : নগরীতে ব্যাপক হারে মানুষ বাড়ছে। সে হারে বাড়ছে না একসঙ্গে বেশি মানুষ পরিবহনে সক্ষম বড় বাস। এসটিপিতে ছোট গাড়ির বদলে গণপরিবহনকে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। বাস্তবে ছোট গাড়ির নিবন্ধন ও রুট পারমিট দেওয়া হচ্ছে অবাধে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সর্বশেষ হিসাবে, রাজধানীতে গড়ে প্রতিদিন ১৮০টি নতুন মোটরগাড়ি যোগ হচ্ছে। এ কারণে যানজট পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
প্রতি তিন হাজার মানুষের জন্য বাস একটি : বিআরটিএর হিসাবে, ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ যানবাহন চলাচল করে। এ সবের মধ্যে বিআরটিএর রুট পারমিট নেওয়া বাস-মিনিবাস পাঁচ হাজার। ঢাকায় বসবাসকারী প্রতি তিন হাজার মানুষের জন্য বাস-মিনিবাস আছে মাত্র একটি।
বাসচালকদের কাছ থেকে জানা গেছে, যানজটের কারণেও বড় বাসের সংকট দেখা দিচ্ছে। বাসচালক মো. মহিউদ্দিন ও অন্যরা জানান, তিন বছর আগেও একটি বাস বা মিনিবাস দিনে ১৭০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার চালানো সম্ভব হতো। কিন্তু বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটারের বেশি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। রাজধানীতে গত চার বছরে ৪২টি পরিবহন কম্পানির পাঁচ শতাধিক বাস-মিনিবাস বন্ধ হয়ে গেছে। অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কম্পানিজের (এবিসি) সভাপতি খন্দকার রফিকুল হোসেন কাজল কালের কণ্ঠকে বলেন, যানজটের কারণে রংধনু, পূবালী, মাই লাইন, তাশিকো, শক্তি, ব্লু-বার্ড, কপোতাক্ষ, ওয়ান লাইন, এরভিন, মধুমতি, কর্ণফুলী, গ্রেট ওয়াল, পিংক সিটি, রাহবার, পাঞ্জেরী, মনজিলসহ বিভিন্ন কম্পানির বাস বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
২০ বছরের পরিকল্পনা : কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) বাস্তবায়নের জন্য একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লুইসবার্জার গ্রুপ। এই সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০০৫ সালে এটি প্রকাশ করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে এর অনুমোদন দেয়। ডিটিসিবির আওতায় তৈরি এসটিপিতে ২০২৪ সালের বৃহত্তর ঢাকা মহানগরীর তিন কোটি ৬০ লাখ মানুষের পরিবহন চাহিদা, যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্মাণ ও নিয়ন্ত্রণের দিকনির্দেশনা রাখা হয়েছে। এ পরিকল্পনায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে দ্রুত জনপরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) ও ৫০টি সংযোগ সড়ক নির্মাণের নির্দেশনা রয়েছে। কয়েকটি সংযোগ সড়ক ছাড়া আর কোনো প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি এ যাবৎ। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া হলেও বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ের অভাব এবং প্রক্রিয়াগত জটিলতায় এগুলো থমকে আছে।
বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট : বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি হলো দ্রুতগতির জনপরিবহন ব্যবস্থা। প্রশস্ত লেনে এ পদ্ধতিতে বিশেষ ধরনের বাস চলাচল করে। এসটিপিতে প্রস্তাব করা হয়েছে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে তিনটি রুটে বিআরটি পদ্ধতি চালু করার। গাজীপুর থেকে সদরঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়কে বিআরটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্তাবিত রুটে বিআরটি চালু হলে ঢাকা নগরীর বিশেষ করে গাজীপুর, টঙ্গী ও উত্তরা এলাকায় যানজট কমবে। এই করিডরে ঘণ্টায় ২০-২৫ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ চলছে। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর অংশেই ব্যয় হবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। কথা থাকলেও আগামী মে মাসে এডিবির সঙ্গে প্রকল্পের ঋণচুক্তি হবে কি না এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ কারণে ২০১৬ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
মেট্রোরেল : এসটিপিতে রাজধানীর জন্য তিনটি রুটে মেট্রোরেল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। উত্তরা থেকে পল্লবী-রোকেয়া সরণি-খামারবাড়ী-তোপখানা রোড হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত প্রায় ২০ কিমি দীর্ঘ রুটে প্রথম ধাপে মেট্রোরেল স্থাপন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দেবে ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। চলতি মার্চ মাসেই জাইকার সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তি হওয়ার কথা। মেট্রোরেল চালু হওয়ার কথা ২০১৭ সালে। কিন্তু সরকারের তিন বছরেও ঋণচুক্তি না হওয়ায় এ নিয়ে আছে সংশয়।
ঢাকা উড়াল সড়ক : যানজট নিরসনে ঢাকা উড়াল সড়ক (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে) প্রকল্প গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ। সড়কের রুট হবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। সংযোগ সড়কসহ ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারী ইতাল-থাই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি। ৪২ মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৩৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে প্রকল্পে গতি কম। এ ছাড়া এই সড়ক দিয়ে বাস ও প্রাইভেট কার চলতে টোল লাগবে। বিশেষজ্ঞ সন্তোষ কুমার রায় বলেন, এ ধরনের প্রকল্প বিলাসী।
ঢাকা-আশুলিয়া উড়াল সড়ক : আশুলিয়া ও ইপিজেড এলাকায় রয়েছে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানা। কিন্তু এসব এলাকা থেকে রপ্তানিযোগ্য পণ্য পরিবহনে প্রধান বাধা যানজট। ঢাকা থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় উড়াল সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়ার নবীনগর হয়ে গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত প্রায় ২৪ কি.মি. দীর্ঘ এই উড়াল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার। জানা গেছে, সেতু বিভাগে প্রকল্পের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং সে অনুযায়ী জনবল না থাকায় প্রকল্পটি থমকে আছে।
পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক : এসটিপি অনুসরণ করে পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে। দুই হাজার ১৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১০ সালে। অতিরিক্ত দুই বছরেও আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। প্রকল্পের দলনেতা অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, এসটিপি অনুসরণ করে প্রকল্পের একটি অংশ সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ করা হবে।
সমন্বয়ের অভাব : বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, সমন্বয়ের অভাবে পরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে ২০২৪ সালের মধ্যে এসটিপি বাস্তবায়ন করার বিষয়টিও অনিশ্চিত। জনসংখ্যা বাড়ার বিষয়টি সামনে রেখে ২০৫০ সাল পর্যন্ত একটি সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে।
জানা যায়, এসটিপির বাইরেও বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ডিটিসিবির সঙ্গে রাজউক, ডিসিসিসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যেমন ডিসিসি যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান উড়াল সড়ক প্রকল্প গ্রহণের সময় ডিটিসিবিকে প্রকল্পের রুটের বিষয়ে কিছু জানায়নি। এ কারণে মেট্রোরেল রুটের পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এ ছাড়া যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনকে টঙ্গীতে সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু এর কিছুদিন পর ডিটিসিবি একই রেল স্টেশনকে বিমানবন্দরের পাশে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব তৈরি করে। এসটিপির বাইরে রাজউক কুড়িলে উড়াল সেতু নির্মাণ করছে। এ ছাড়া সাতটি সড়ক ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে রাজউকের। এসব প্রকল্পও চলছে ধীরে। কিন্তু একই রুটে একাধিক প্রকল্প এলাকার কারণে প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান। যেমন_ঢাকা উড়াল সড়ক বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত হবে। কুড়িলে নির্মাণাধীন উড়াল সেতুর সঙ্গে এর সমন্বয় কিভাবে হবে তা ঠিক হয়নি। একইভাবে এটি বনানী ওভারপাস ও খামারবাড়ীতে মেট্রোরেল রুটের সঙ্গে কিভাবে সমন্বয় হবে, তা-ও ঠিক করা হয়নি। বিআরটি মালিবাগ উড়াল সেতুর ওপর দিয়ে যাবে নাকি নিচ দিয়ে যাবে, তা ঠিক হয়নি।
প্রক্রিয়ায় আরো প্রকল্প : গাবতলী-সোয়ারীঘাট সড়ক উন্নয়ন, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু অ্যাপ্রোচ থেকে মাওয়া লিংক পর্যন্ত চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, তৃতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক (তিনটি সেতুসহ) নির্মাণ (আটিবাজার সংযোগসহ), যাত্রাবাড়ী- ডেমরা-তারাবো-কাঁচপুর সড়ক ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর অংশ (পোল্ডার সড়ক) আট লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পগুও ঘুরছে প্রক্রিয়ায়।
এ ছাড়া মগবাজার, এফডিসি ও মালিবাগ রেলক্রসিংকে কেন্দ্র করে সাতরাস্তা মোড় থেকে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত আট কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাত দিকে শাখা বিস্তৃত এ উড়াল সেতুটি হলে রাজধানীর উত্তর-দক্ষিণাংশ দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা দুর্বিষহ যানজট থেকে রেহাই পাবে। এ প্রকল্পও আছে প্রক্রিয়ায়। গাবতলী-আসাদগেট-রাসেল স্কয়ার-সায়েন্স ল্যাবরেটরি-পলাশী রুটে গ্রেড সেপারেটর নির্মাণ প্রকল্পের নথি প্রায় দেড় বছর বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছিল। অর্থ মিলছিল না। মালয়েশিয়ার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুনৃং ক্যাপিটাল বারহাড প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে সম্মত হয়েছে। পরিকল্পনা করা হলেও জুরাইনে ওভারপাস নির্মাণের প্রকল্প তিন বছর ধরে ঘুরছে অর্থ সংকট ও কোন সংস্থা নির্মাণ করবে এ জটিলতায়।

No comments

Powered by Blogger.