ভালো ফলের সঙ্গে শিক্ষার মানও বাড়ুক-মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল

২০১১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাহিমা খাতুন মন্তব্য করেছেন, ‘নোট-গাইড না কিনে বিনা মূল্যে দেওয়া সরকারের বই পড়লে ভালো নম্বর পাওয়া যায়—এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।’


আমাদের বিশ্বাস, এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন এটিই। এ পরীক্ষায় পাসের হার যেমন আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে, তেমনি রেকর্ড ভেঙেছে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণের হার। পাসের হার বেড়েছে গত বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ; জিপিএ-৫ পেয়েছে আগের বছরের চেয়ে ৬৫৪ জন বেশি। এই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের মধ্যেই, যে পদ্ধতিটি প্রথম দিকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ঘাবড়ে দিয়েছিল। সাত বিষয়ের প্রশ্নপত্রে বাজারের নোট বা গাইড থেকে একটি প্রশ্নও আসেনি, কিন্তু পরীক্ষার্থীরা আগের চেয়ে ভালো ফল করেছে। আরও ভালো খবর, নকল প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে।
ইংরেজি ও গণিত—এই দুটি বিষয়ের ফল এবার অপেক্ষাকৃত ভালো হওয়ায় পাসের হার বেড়েছে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মধ্যে পরীক্ষায় ভালো ফল করার প্রতিযোগিতাসুলভ মনোভাব, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ, অভিভাবকদের বাড়তি যত্ন—এগুলোও ভালো ফলের পেছনে কাজ করেছে বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন। শিক্ষকেরা পরীক্ষার খাতা দেখা ও নম্বর প্রদানে আরও উদার হয়েছেন—এমন কথাও বলা হচ্ছে। বিষয়টি অবশ্য সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ করা দরকার। কারণ, পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার বাড়ানোর লক্ষ্যে খাতা পরীক্ষা করা ও নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে পরীক্ষকদের অতিরিক্ত উদারতা শিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ভালো নম্বর পাওয়া অবশ্যই আনন্দের বিষয়, কিন্তু তা কখনো শিক্ষার গুণগত মানের সঙ্গে আপস করে নয়। আবার এত ভালো ফলের মধ্যেও কিন্তু ২৮টি বিদ্যালয় থেকে এবার একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। এর কী কারণ থাকতে পারে, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
এটা দুঃখজনক যে, এ বছরের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার দুটোই কমেছে। কী কী কারণে এমনটি হয়েছে, তা অনুসন্ধান করে দেখা প্রয়োজন। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগত মানও বাড়ানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন।
এ বছর আট লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও যেন এদের পড়াশোনা অব্যাহত থাকে, সেদিকে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মেয়ে-শিক্ষার্থীরা যেন এখানেই ঝরে না পড়ে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে; সুতরাং রাষ্ট্রের এই সুযোগের সদ্ব্যবহার যেন গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মাধ্যমিক পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করার জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি

No comments

Powered by Blogger.