ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম সমাবর্তন-বিশ্ববিদ্যালয়ের ঋণ শোধ হওয়ার নয় by মোঃ জুবায়ের আলম
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম সমাবর্তন। স্নাতক ডিগ্রিধারীদের পদচারণায় মুখরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। আমি নিজেও এই সমাবর্তনে আমন্ত্রিত একজন গ্র্যাজুয়েট। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়, আজকের প্রত্যেক গ্র্যাজুয়েটের এখানে আসার পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, প্রচেষ্টা আর অঙ্গীকার।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন কার না থাকে। আমি এ স্বপ্ন কখন ঠিক করে রেখেছিলাম তার সঠিক দিনক্ষণ মনে করতে পারব না। তবে এ স্বপ্ন প্রথম যখন আমি দেখেছিলাম, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি নিজ চোখে দেখিনি। এ স্বপ্নের রূপকার ছিলেন আমার বাবা।
২০০৫ সালে ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, যশোর থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন প্রগাঢ় হয়। সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলি, আইন বিষয়ে পড়ব। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা, মেধা স্কোর, সর্বোপরি শতাধিক সিটের জন্য হাজারো ছাত্রছাত্রীর প্রতিযোগিতা যেন আমার সে স্বপ্ন পূরণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে আমার কঠিন পরিশ্রমের কাছে সমস্ত অন্তরায় হার মানতে বাধ্য হয়। ঢাবিতে প্রথম সারিতে চান্স পেয়ে পদার্পণ করি। আমার স্বপ্নের রাজ্যে আইন বিভাগে ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষ। হল সলিমুল্লাহ মুসলিম হল।
মনে আছে, প্রথম দিন ক্লাস শুরু হওয়ার স্মৃতি। সব অচেনা মুখ। সব মেধাবী মুখ। ভাবতাম প্রতিযোগিতায় এবারই হয়তো হেরে যাব। আইনের কঠিন ভাষা, ধারা আমার কাছে খুব খাপছাড়া আর দুর্বোধ্য মনে হতো। মাকে একবার ফোনে বলেছিলাম, আমি আর পড়ব না। কিন্তু না, আমাকে যে পড়তেই হবে, মায়ের আদেশ। হাল ছাড়লাম না। পড়াশোনার তীব্র প্রতিযোগিতা, ক্লাস, পরীক্ষা আর কঠিন বাস্তবতা_ এ নিয়েই চলতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। খুব বেশি আড্ডা দেওয়া হয়ে ওঠেনি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও। একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলাম। হল, বিশ্ববিদ্যালয় আর টিউশন_ এই হলো জীবনের পরিমণ্ডল।
তবে ডিপার্টমেন্টের অনুষ্ঠানগুলোতে আমি নিয়মিত ছিলাম সবসময়, হোক সেটা পিকনিক, পূজা, নববর্ষ অথবা বিশেষ কোনো দিন উদযাপন। আমরা ক্লাসমেটরা মিলে আয়োজন করেছিলাম ৫ দিনের শিক্ষাসফরের_ কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, ছেঁড়াদ্বীপ। আমার জীবনের সেরা স্মৃতি কখনও ভুলব না। সময় চলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চার বছর অনার্সেরও বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। এ কথা বুঝতে পেরেছিলাম যখন প্রস্তাব এলো র্যাগ ডে পালন করতে হবে। অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে আমরা এটি পালন করেছিলাম; কিন্তু যে অনুষ্ঠান বিদায়ের তাতো আর আনন্দ দিতে পারে না। ওইদিন আমরা সত্যিই অশ্রুসিক্ত হয়ে বিদায় নিয়েছিলাম বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে। দীর্ঘ এক মাস পরীক্ষা দিলাম, সম্মান ফাইনাল। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ পরীক্ষা। এরপর দীর্ঘ অপেক্ষা এবং অতঃপর ফলাফল। আমরা প্রায় সবাই উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। চোখের পানি তখন আটকাতে পারিনি। বন্ধুদের অভিনন্দনে সিক্ত আমি।
হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অনেক ক্ষোভ আমার ছিল। গণরুমে ঘুমানো, নিম্নমানের খাবার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ইত্যাদি। কিন্তু এতদসত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল, যা আমি এখনও অনুভব করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমার ঋণ কখনোই পূরণ হওয়ার নয়, পরিমাপ করার চেষ্টা বৃথা। আমার ৪ বছরের শিক্ষা জীবনের সফরে অনেক ব্যর্থতার মাঝে কিছু সফলতাও ছিল। সম্পৃক্ত ছিলাম ডিবেটিং, শুটিং ও বিএনসিসিতে। সিনিয়র মিলিটারি সায়েন্স এক্সাম-২০০৯-এর পরীক্ষায় আমি বিএনসিসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করি। নিজেকে যোগ্য করেছি, সাংবিধানিক আইনে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য, 'জাস্টিস মোহাম্মদ হোসেন মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক' পাওয়ার জন্য। সম্মান পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করার জন্য জাস্টিস আবদুল্লাহ স্বর্ণপদক ও অ্যাটর্নি আলমগীর স্বর্ণপদক। আইন অনুষদে (সম্মান পরীক্ষায়) নম্বর পাওয়ার জন্য ২০১০ সালে মনোনীত হয়েছি প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকে। জীবন নদীর চলার স্রোতে হয়তো আমরা বন্ধুরা একেকজন একেক দিকে ধেয়ে যাবে। তবে আমি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হতে চাই। খুবই সাধারণ এবং সৎ। আজকের ৪৬তম সমাবর্তনের দিনে স্রষ্টার কাছে এটাই প্রার্থনা, আমরা সবাই যেন নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারি।
আইন বিভাগ
স্নাতক : ২০০৫-০৬ (প্রথম শ্রেণীতে প্রথম)
স্বর্ণপদক : প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১০, জাস্টিস মোহাম্মদ হোসেন মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক
জাস্টিস আবদুল্লাহ স্বর্ণপদক, অ্যাটর্নি আলমগীর স্বর্ণপদক
২০০৫ সালে ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, যশোর থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন প্রগাঢ় হয়। সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলি, আইন বিষয়ে পড়ব। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা, মেধা স্কোর, সর্বোপরি শতাধিক সিটের জন্য হাজারো ছাত্রছাত্রীর প্রতিযোগিতা যেন আমার সে স্বপ্ন পূরণের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে আমার কঠিন পরিশ্রমের কাছে সমস্ত অন্তরায় হার মানতে বাধ্য হয়। ঢাবিতে প্রথম সারিতে চান্স পেয়ে পদার্পণ করি। আমার স্বপ্নের রাজ্যে আইন বিভাগে ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষ। হল সলিমুল্লাহ মুসলিম হল।
মনে আছে, প্রথম দিন ক্লাস শুরু হওয়ার স্মৃতি। সব অচেনা মুখ। সব মেধাবী মুখ। ভাবতাম প্রতিযোগিতায় এবারই হয়তো হেরে যাব। আইনের কঠিন ভাষা, ধারা আমার কাছে খুব খাপছাড়া আর দুর্বোধ্য মনে হতো। মাকে একবার ফোনে বলেছিলাম, আমি আর পড়ব না। কিন্তু না, আমাকে যে পড়তেই হবে, মায়ের আদেশ। হাল ছাড়লাম না। পড়াশোনার তীব্র প্রতিযোগিতা, ক্লাস, পরীক্ষা আর কঠিন বাস্তবতা_ এ নিয়েই চলতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। খুব বেশি আড্ডা দেওয়া হয়ে ওঠেনি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও। একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলাম। হল, বিশ্ববিদ্যালয় আর টিউশন_ এই হলো জীবনের পরিমণ্ডল।
তবে ডিপার্টমেন্টের অনুষ্ঠানগুলোতে আমি নিয়মিত ছিলাম সবসময়, হোক সেটা পিকনিক, পূজা, নববর্ষ অথবা বিশেষ কোনো দিন উদযাপন। আমরা ক্লাসমেটরা মিলে আয়োজন করেছিলাম ৫ দিনের শিক্ষাসফরের_ কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, ছেঁড়াদ্বীপ। আমার জীবনের সেরা স্মৃতি কখনও ভুলব না। সময় চলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চার বছর অনার্সেরও বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। এ কথা বুঝতে পেরেছিলাম যখন প্রস্তাব এলো র্যাগ ডে পালন করতে হবে। অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে আমরা এটি পালন করেছিলাম; কিন্তু যে অনুষ্ঠান বিদায়ের তাতো আর আনন্দ দিতে পারে না। ওইদিন আমরা সত্যিই অশ্রুসিক্ত হয়ে বিদায় নিয়েছিলাম বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে। দীর্ঘ এক মাস পরীক্ষা দিলাম, সম্মান ফাইনাল। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ পরীক্ষা। এরপর দীর্ঘ অপেক্ষা এবং অতঃপর ফলাফল। আমরা প্রায় সবাই উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। চোখের পানি তখন আটকাতে পারিনি। বন্ধুদের অভিনন্দনে সিক্ত আমি।
হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অনেক ক্ষোভ আমার ছিল। গণরুমে ঘুমানো, নিম্নমানের খাবার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ইত্যাদি। কিন্তু এতদসত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল, যা আমি এখনও অনুভব করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমার ঋণ কখনোই পূরণ হওয়ার নয়, পরিমাপ করার চেষ্টা বৃথা। আমার ৪ বছরের শিক্ষা জীবনের সফরে অনেক ব্যর্থতার মাঝে কিছু সফলতাও ছিল। সম্পৃক্ত ছিলাম ডিবেটিং, শুটিং ও বিএনসিসিতে। সিনিয়র মিলিটারি সায়েন্স এক্সাম-২০০৯-এর পরীক্ষায় আমি বিএনসিসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করি। নিজেকে যোগ্য করেছি, সাংবিধানিক আইনে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য, 'জাস্টিস মোহাম্মদ হোসেন মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক' পাওয়ার জন্য। সম্মান পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করার জন্য জাস্টিস আবদুল্লাহ স্বর্ণপদক ও অ্যাটর্নি আলমগীর স্বর্ণপদক। আইন অনুষদে (সম্মান পরীক্ষায়) নম্বর পাওয়ার জন্য ২০১০ সালে মনোনীত হয়েছি প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকে। জীবন নদীর চলার স্রোতে হয়তো আমরা বন্ধুরা একেকজন একেক দিকে ধেয়ে যাবে। তবে আমি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হতে চাই। খুবই সাধারণ এবং সৎ। আজকের ৪৬তম সমাবর্তনের দিনে স্রষ্টার কাছে এটাই প্রার্থনা, আমরা সবাই যেন নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারি।
আইন বিভাগ
স্নাতক : ২০০৫-০৬ (প্রথম শ্রেণীতে প্রথম)
স্বর্ণপদক : প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১০, জাস্টিস মোহাম্মদ হোসেন মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক
জাস্টিস আবদুল্লাহ স্বর্ণপদক, অ্যাটর্নি আলমগীর স্বর্ণপদক
No comments