সমৃদ্ধির যাত্রায় নেতৃত্ব দেওয়ার প্রত্যয়

সুদীর্ঘকালের ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ চট্টগ্রামের নেতৃত্বে সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর ১২ দিনব্যাপী ‘অদম্য চট্টগ্রাম উৎসব’। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘অঙ্গীকার বাণী’ পাঠের মধ্য দিয়ে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শতবর্ষী বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ও সুন্দর অতীত আছে। সেই গৌরবময় অতীত আমরা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরব। শুধু মুখের কথায় নয়, অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করি, সততা ও ন্যায়ের পথে চট্টগ্রাম দিশারি হবে। দেশকে জগৎসভার শ্রেষ্ঠ আসনে নেওয়ার জন্য আমরা সবাই মিলে কাজ করব। আমাদের মধ্যে কোনো বিভক্তি থাকবে না। আমরা এক জাতি, বাঙালি জাতি। সবাই মিলে আমরা দেশকে এগিয়ে নেব।’
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ‘ফুলকি’র শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে দেওয়া স্বাগত বক্তব্যে দ্য ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘চট্টগ্রামের গৌরবময় ঐতিহ্য ও ব্যাপক সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ দেশবাসীকে জানাতেই এই উৎসবের আয়োজন। কোনো আঞ্চলিকতা নয়, আমার বৈচিত্র্যকেই তুলে ধরতে চাই। চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করেই আমরা সমস্ত বাংলাদেশ গড়ব।’
এরপর শতবর্ষী বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরীর নেতৃত্বে মঞ্চে আসেন চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। তারপর ‘অঙ্গীকার বাণী’ পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। স্টেডিয়ামে উপস্থিত সব দর্শক স্বতঃস্ফূর্তভাবে অঙ্গীকার বাণী পাঠ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলম উৎসব আয়োজনের জন্য নগরবাসীর পক্ষ থেকে ডেইলি স্টারকে ধন্যবাদ জানান।
অঙ্গীকার বাণী পাঠের সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলম, সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সিকান্দর খান, শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী, মিডিয়া ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান রোকেয়া আফজাল রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণ-এর সম্পাদক স্থপতি তসলিম উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম, এ কে খান ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি সেক্রেটারি সালাউদ্দিন কাশেম খান, চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকার সভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী মোশতাক, বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবর আলী, বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন, গ্রামীণফোনের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন সৈয়দ তাহমিদ আজিজুল হক, ইউসিবিএলের পরিচালক সাইফুজ্জামান চৌধুরী, প্যাসিফিক জিনসের তানভীর আহমেদ, টিকে গ্রুপের তারিক আহমেদ ও আরবি ইন্ডাস্ট্রির খুরশেদ আলম। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন মডেল নোবেল।
বর্ণিল আলোকচ্ছটা: আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে আতশবাজিতে রঙিন হয়ে ওঠে আকাশ। লেজার শোর মাধ্যমে পর্দায় ভেসে ওঠে উৎসবের নানা আয়োজন। একে একে পর্দায় ফুটে ওঠে চট্টগ্রামের মানচিত্র, ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা, জাহাজ, চট্টগ্রাম বন্দর ও সাম্পান। এর আগে বিকেলে কনসার্ট শুরু হয় ব্যান্ড দল সাসটেইনের গানের মধ্য দিয়ে। এরপর একক সংগীত পরিবেশন করেন জাহেদ ও ক্লোজআপ তারকা অরিন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের কিংবদন্তি আবদুল গফুর হালী আসেন তাঁর দল নিয়ে। চট্টগ্রামের ছেলে কিশোরের গানের পর দর্শক মাতান হেডমাস্টার-খ্যাত সিরাজুল ইসলাম। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর আবার শুরু হয় কনসার্ট। এ সময় ব্যান্ড রেনেসাঁর গানে আনন্দে উত্তাল হয়ে ওঠে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম। রেনেসাঁর পর দর্শক মাতান অর্ণব। সবশেষে চট্টগ্রামের ছেলে আইয়ুব বাচ্চুর গানে গলা মিলিয়ে শেষ হয় দিনের আয়োজন।
উৎসবের যত আয়োজন: বিকেলে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে সকাল থেকেই নগরের পৃথক তিনটি ভেন্যুতে উৎসবের তিনটি আয়োজন শুরু হয়।
এর মধ্যে সকাল ১০টায় নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে সপ্তাহব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘চিত্রময় চট্টলা’র উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। এ সময় তিনি বলেন, ‘এই প্রদর্শনীতে চট্টগ্রামের শিল্পীদের অসামান্য অর্জনের প্রতিফলন ঘটেছে।’ এ সময় মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘এই প্রদর্শনী আমরা ঢাকায় নিয়ে যাব। সুযোগ হলে দেশের অন্যান্য জেলায় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।’
আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর আবাসিক সম্পাদক আবুল মোমেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকার সভাপতি রেজাউল হক মোশতাক, বিচারকমণ্ডলীর সদস্য আলোকচিত্রশিল্পী মওদুদুল আলম এবং আয়োজকদের পক্ষে আলোকচিত্রশিল্পী শোয়েব ফারুকী। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া সেরা ১০ আলোকচিত্রশিল্পীর নাম ঘোষণা করা হয় অনুষ্ঠানে। শিল্পী আদ্রিয়ান পরানের ‘দ্য মঙ্ক ম্যাডিটেটেড’ শিরোনামের ছবিটি প্রদর্শনীর সেরা ছবি মনোনীত হয়।
আয়োজক সূত্র জানায়, প্রদর্শনীতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের মোট ২২৩ জন শিল্পীর ৬৫০টি আলোকচিত্র জমা পড়ে। প্রাথমিক বাছাইয়ে ১২১টি ছবি নির্বাচিত হয়। পরে চূড়ান্ত বাছাই শেষে দেশ-বিদেশের প্রায় ৭৪ জন শিল্পীর ৮০টি আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।
এরপর বেলা ১১টায় নগরের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিল্পী রশিদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারিতে উদ্বোধন করা হয় শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ‘ছবির হাট’। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পী সবিহ উল আলম। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর আগে চট্টগ্রামের পরিবেশ ছবি আঁকার অনুকূল ছিল না। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ডেইলি স্টার-এর এ ধরনের উদ্যোগ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
বিকেল পাঁচটায় এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে ‘চিরায়ত চট্টগ্রাম প্রদর্শনী’র উদ্বোধন করেন বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। এই প্রদর্শনীতে সুলতানি, মোগল ও ঔপনিবেশিক আমলের চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থাপত্য, মুদ্রা ও নিদর্শনের ছবি ও তথ্য স্থান পায়।

No comments

Powered by Blogger.