এই আত্মঘাতী উদাসীনতার অবসান হোক-ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস

ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা পৃথিবীর সর্বত্র আধুনিক রাষ্ট্রগুলো উপলব্ধি করে থাকে। অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো আমাদের দেশেও এর গুরুত্ব নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু আমরা হয়তো এক জায়গায় অনন্য—সেটি আমাদের সীমাহীন উদাসীনতা।


আমরাই হয়তো মহাপরিকল্পনা গ্রহণের পরও বছরের পর বছর ধরে প্রকৃত কোনো কাজ না করেই চালিয়ে যেতে পারি দফায় দফায় বৈঠক আর চিঠি চালাচালি; সেই ফাঁকে দখল আর ধ্বংসযজ্ঞ চলতে পারে প্রায় নির্বিঘ্নে। যাঁদের সন্দেহ আছে, তাঁরা নজর ফিরিয়ে দেখতে পারেন ঢাকার ঐতিহাসিক মোগল স্থাপত্য ছোট ও বড় কাটরার প্রলয়যাত্রার দিকে। গত মঙ্গলবার প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৫৪ সালে এগুলো প্রত্নসম্পদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলেও দখলদারের কবলে পড়ে এখন ধ্বংসের মুখে।
কোনো রাষ্ট্র ও তার নাগরিকেরা নিজের যে পরিচয় দাঁড় করাতে চায়, এর ভিত্তি নির্মাণ করে ইতিহাসে তার নানা অভিব্যক্তি। তাই কোনো সময়ের মূর্তমান নিদর্শনের এত আবেদন। সেই হিসেবে মোগল স্থাপনাগুলো আমাদের ইতিহাসের একেকটা অনন্য নিদর্শন। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসন কায়েমের পর আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। উপনিবেশ-পূর্বকাল এখন আমাদের মনে ও চিন্তায় অনেক ঝাপসা; সেই সঙ্গে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ধারাও। সেই অতীত নিয়ে ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পাঠও করতে পারিনি আমরা। এই অবস্থায় অতীত নিয়ে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি যখন প্রয়োজন, সে সময়ে ঐতিহাসিক স্থাপনা বিলুপ্ত হতে দেওয়া অবশ্যই আত্মঘাতী।
ঐতিহাসিক গুরুত্ববাহী স্থাপনার ব্যাপারে আমাদের উদাসীনতার অবসান হোক। এ ক্ষেত্রে সরকারের সময়মতো ও কার্যকর হস্তক্ষেপ দরকার। দখলদারির বিরুদ্ধে এখনই পদক্ষেপ না নিলে হয়তো এমন দিন আসবে, যখন শত চেষ্টা করেও এসব স্থাপনা রক্ষা করা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.