হাওয়ার জন্য শুভকামনা by মনিরুজ্জামান
স্বপ্নের মাঝপথে ঘুম ভেঙে গেলে যেমন দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়, তেমনি হাতের আঙুলগুলো হারানো আমার জীবনের স্বপ্নপূরণের পথে দুঃস্বপ্নের মতো।’ এ আক্ষেপ নরসিংদীর হাওয়া আক্তার ওরফে জুঁইয়ের। স্বামীর অমত সত্ত্বেও পড়াশোনা চালাতে গিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে স্বামীর চাপাতির কোপে ডান হাতের চারটি আঙুল হারান তিনি।
সেই দুঃস্বপ্নই এখন নিত্যসঙ্গী হাওয়ার। তবে হাতের আঙুল হারালেও হার মানেনি তাঁর মনোবল। সেই মনোবলই পূরণ করে দেবে তাঁর স্বপ্নগুলো। অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে বলীয়ান হাওয়া কাল রোববার থেকে শুরু হওয়া এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে অংশ নেবেন। এগিয়ে যাবেন স্বপ্নপূরণের সিঁড়িতে আরেক ধাপ।
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে গতকাল শুক্রবার হাওয়া জানান, অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। তবে তার পরও পরীক্ষার জন্য মোটামুটি ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন।
হাওয়া বলেন, ‘আমি ডান হাত দিয়ে ভালোভাবে লিখতে পারি না। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য স্যাররা আমাকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছেন। পরীক্ষায় আমার লেখা আরেকজন লিখবে। বুঝতে পারছি না, কেমন হবে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে আমি পরীক্ষায় ভালো করতে পারি।’
হাওয়ার পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাহসী আখ্যায়িত করেন নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘হাওয়ার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা আমরা করেছি। তার পক্ষে তার এক ছোট বোন অংশ নেবে। হাওয়া প্রশ্নের উত্তর বলবে, আর সে লিখবে। পরীক্ষার জন্য তাকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।’
হাওয়ার বাবা ইউনূস মিয়া তাঁর অনুভূতি জানাতে গিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত জুঁই পরীক্ষা দেবে, খুব ভালো লাগছে। তবে সে যদি নিজের আঙুলে দিতে পারত, তাহলে আরও বেশি ভালো লাগত।’
পরিবার সূত্রে জানা যায়, আঙুল হারানোর পরও সম্পূর্ণ একক সিদ্ধান্তেই এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছেন হাওয়া। আর তাঁর সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা শুরু করছে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)।
সিআরপির অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের প্রধান মাহফুজুর রহমান জানান, হাওয়ার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের স্বার্থে তাঁর হাতের জন্য অর্থোটিকস অ্যান্ড প্রস্থেটিক ইউনিটে গ্লাভসের অর্ডার দেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষ হলে গ্লাভসের মাধ্যমে তাঁর হাতে কৃত্রিম আঙুল সংযোজন করা হবে।
পারিবারিক সূত্রমতে, নরসিংদী সদর উপজেলার ভেলানগর এলাকার বাসিন্দা ইউনূস মিয়ার মেয়ে হাওয়ার সঙ্গে ২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নূরজাহানপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পরও লেখাপড়ার প্রতি হাওয়ার প্রবল ঝোঁক থাকলেও এ পথে বেঁকে বসেন স্বামী রফিক। পরে হাওয়াকে তাঁর বাবার বাড়িতে রেখে দুবাই চলে যান রফিক। এ সময় রফিককে না জানিয়েই হাওয়াকে নরসিংদী সরকারি কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন তাঁর বাবা ইউনূস। এ খবর জানতে পেরে দুবাই থেকে দেশে ফিরে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর রফিক চাপাতি দিয়ে হাওয়ার ডান হাতের চারটি আঙুল কেটে দেন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার জিয়া কলোনিতে রফিকের বোনের বাসায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ৫ ডিসেম্বর রফিককে ওই বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
No comments