সরকারের দায় এড়ানোর কোনোই সুযোগ নেই-শেয়ারবাজার কোথায় যাচ্ছে?

দেশের শেয়ারবাজারের অস্থিরতায় ছোট বিনিয়োগকারী ও কারবারিরা পুঁজি খুইয়ে চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কার্যত হাত গুটিয়ে আছেন। বড় বিনিয়োগকারীরা বহুলাংশে নিষ্ক্রিয়। ফলে প্রায় প্রতিদিনই বাজার নিম্নমুখী হচ্ছে, কমে যাচ্ছে লেনদেন।


এমন গুরুতর পরিস্থিতিতেও সরকারের দিক থেকে পুঁজিবাজারকে ঘিরে কোনো সুপরিকল্পিত ও সুসমন্বিত পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। কখনো এটা, কখনো ওটা—দ্বিধান্বিত ও অবিন্যস্ত নানা পদক্ষেপের ফলে বাজার আরও অস্থিতিশীল করে তোলা হচ্ছে। আড়াই বছর ধরে পুঁজিবাজার বিষয়ে সরকার যেসব নীতি ও পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে এই দ্বিধা ও লক্ষ্যহীনতা বারবার ফুটে উঠেছে। আজ বাজারের এই পরিণতির পেছনের কারণ সেগুলোই।
বাজার যখন লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছিল, তখন সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সমর্থনমূলক পদক্ষেপ দিয়ে শেয়ারবাজারকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। ফাটকা কারবারিদের কোটি কোটি টাকার খেলায় স্বল্প পুঁজির সাধারণ মানুষকে কার্যত টেনে আনা হয়। কিন্তু একটা পর্যায়ে অতিমূল্যায়িত বাজারে মোটা মুনাফা তুলে নিয়ে যখন বড় বিনিয়োগকারী ও ফাটকা কারবারিরা সরে পড়েন, তখন বিপদে পড়ে যান ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। বাজারে দ্রুততার সঙ্গে দরপতন ঘটে। অস্বাভাবিক স্ফীতি ও ধসের কারণ অনুসন্ধানে সরকার গঠন করে তদন্ত কমিটি। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়েই কমিটি সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেয়।
এরপর চিহ্নিত, অভিযুক্ত ও অচিহ্নিত কারসাজিকারীরা মিলে বাজারকে বিকৃত করার প্রতিযোগিতায় নামেন। সরকারের বিভিন্ন মহলে তাঁদের অশুভ তৎপরতা বেড়ে যায়। প্রলম্বিত হয় প্রতিবেদনটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। আটকে যায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) পুনর্গঠন। বরং যে চেয়ারম্যানের হাত দিয়ে নানা কারসাজিকে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়েছে, তিনি এখনো আছেন বহাল তবিয়তে। এটা কোনোভাবেই বোধগম্য নয় যে কেন এত কিছুর পরও এই চেয়ারম্যানকে বহাল রাখা হবে।
এ রকম বাস্তবতায় এটা এখন স্পষ্ট যে শেয়ারবাজারকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়ার দায় সরকার এড়াতে পারে না। লাখ লাখ মানুষকে পথে বসানো ও দেশের শিল্প-পুঁজি গঠনের পথ রুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে যে দীর্ঘমেয়াদি আর্থসামাজিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তা দৃঢ়তার সঙ্গে সরকারকেই রোধ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.