বিএনপির সালাহ উদ্দিন সালাম কাইয়ুম, পিন্টু খালেক প্রচারে by মোশাররফ বাবলু ও শফিক সাফি

দ্বিখণ্ডিত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে দলের ভেতর থেকেই চাপ বাড়ছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর। নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহী বিএনপির অনেক নেতা সরাসরি যোগাযোগ করছেন লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গেও।


ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য-সচিব আবদুস সালাম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ এবং সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম এ কাইয়ুম এরই মধ্যে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে অনানুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেছেন। নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু ও এস এ খালেকের পক্ষেও এলাকায় পোস্টার লাগানো হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা অবশ্য জানান, নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চায় বিএনপি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে না দেওয়ার প্রাথমিক চিন্তা আছে তাদের।
দলের অনেক নেতা মনে করেন, নির্বাচনে অংশ না নিলে আন্দোলনের মাঠ হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই বিভিন্ন কৌশল নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন দলের নীতি-নির্ধারকরা। সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো কৌশল নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে দলের একটি সূত্রে জানা যায়।
সূত্র মতে, ঢাকায় দলের সাবেক এমপি, মহানগর বিএনপির অধিকাংশ নেতা এবং সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলররা চান আসন্ন ডিসিসি নির্বাচনে দল অংশ নিক। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও ভেতরে ভেতরে অনেককেই নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে। দলের এক সিনিয়র নেতা জানান, পরিস্থিতি ভালো হলে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। আর ভালো না হলে নাগরিক কমিটির ব্যানারে দলের অনেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ ছাড়া মেয়র পদে আওয়ামী লীগের 'বিদ্রোহী' প্রার্থীকে সমর্থন জানাতে পারে বিএনপি।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আমি ঢাকার মানুষ। ঢাকাকে আধুনিক নগরী হিসেবে দেখতে চাই। তাই দল আমাকে প্রার্থী করলে আমি নির্বাচন করব।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। কারণ ঢাকার মানুষ বিএনপির লোককে মেয়র হিসেবে দেখতে চায়।
ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য-সচিব আবদুস সালাম নিজেকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আওয়ামী লীগকে মাঠ ছেড়ে দেওয়া হবে না। আমরা আন্দোলনে মাঠে আছি। নির্বাচনও আন্দোলনের অংশ হয়ে দাঁড়াবে। তাই বিএনপির অবশ্যই নির্বাচনে যাওয়া উচিত। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব। আশা করি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে চট্টগ্রামের মতো ডিসিসি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীই বিজয়ী হবে। কারণ এই সরকারকে ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।'
বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম এ কাইয়ুম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি উত্তরের মেয়র পদপ্রার্থী হতে চাই। কাজও করছি। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।' তিনি জানান, দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলীয় অধিকাংশ সাবেক কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাঁদের কোনোভাবে আটকে রাখা যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলনের মাঠ ধরে রাখতে হলে অবশ্যই বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত।
জানা গেছে, ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণে মেয়র পদে বিএনপির আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে আরো আছেন সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী আবুল বাশার, কারাবন্দি বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এ খালেক, কেন্দ্রীয় নেতা মো. সাহাবউদ্দিন, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হারুন অর রশীদ। অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনে আগ্রহী অন্য প্রার্থীরা হলেন বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম এবং মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ খান খোকন।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে দল এ মুহূর্তে কিছু ভাবছে না। তফসিল ঘোষণা করার পরই দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম বসে সিদ্ধান্ত নেবে। দলের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ঢাকার বিভক্তি, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও ইভিএম পদ্ধতি- সব কিছুই সরকার একতরফাভাবে করছে। বিরোধী দলের কোনো মতামত নেয়নি সরকার। তাই এ বিষয়গুলো সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কিংবা ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে কিছুই বলা যাবে না।
ইভিএম পদ্ধতি এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে এখনো মেনে নেয়নি বিএনপি। এ জন্য এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের মধ্যে দ্বিধা আছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে বিএনপির প্রধান দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল করা। কিন্তু সরকার এ দাবি মেনে না নিলে ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নেওয়াটা ঠিক হবে কি না, সে নিয়েও দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
জানা গেছে, আগ্রহী প্রার্থীরা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে শীর্ষ নেতৃত্বকে রাজি করাতে বিভিন্ন কৌশলও অবলম্বন করছেন। দেখাচ্ছেন অনেক যুক্তি। শীর্ষ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও দলের আগ্রহী প্রার্থীদের একেবারে নিরাশ করেনি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে তাঁদের।
সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনুমতি নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তাঁরা। শীর্ষ নেতারা তাঁদের বলেছেন, নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকতে। তবে যাঁদের দল সমর্থন দেবে না, ওই সব আগ্রহী প্রার্থীকে বলা হচ্ছে ডিসিসি নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
সূত্র মতে, নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রভাবশালী নেতারা সরাসরি বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা বলেছেন। অনেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন বলেও দাবি করছেন। এর পরও প্রতিযোগিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে অনেকে যোগাযোগ করছেন তারেক রহমানের সঙ্গে। কেউ কেউ লন্ডনে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এমনকি অনেকে সিঙ্গাপুর, ভারতসহ আশপাশের রাষ্ট্র থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে তারেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।
সূত্র মতে, বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী প্রার্থীরাও মাঠে নেমে পড়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন ইস্যুতে নিজেদের ছবি দিয়ে পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার সাঁটিয়ে দিয়েছেন নিজ নিজ এলাকায়। একই সঙ্গে দলীয় সমর্থন আদায়ের জন্য কেন্দ্রীয় ও মহানগরের শীর্ষ নেতাদের কাছে তদবির করছেন।

No comments

Powered by Blogger.