যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লিখলে লেখাপ্রতি ১০ হাজার পাউন্ড!- লন্ডনে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করলেন গাফ্ফার চৌধুরী

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে কলম ধরলে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে প্রতি ফিচারে ১০ হাজার পাউন্ড করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকরা।গত রবিবার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের অভিজাত ওয়াটার লিলি ব্যাঙ্কোয়েটিং হলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী নিজেই


এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুকের পরিচালনায় সমাবেশে অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এসএম আকবর এমপি, আব্দুল মান্নান এমপি, সানজীদা খাতুন এমপি, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা জালাল উদ্দিন, সামসুদ্দিন মাস্টার, এমএ রহিম, মারুফ চৌধুরী এবং শাহাব উদ্দিন চঞ্চল।
যুদ্ধাপরাধ বিচার বাধাগ্রস্ত করতে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক জামায়াত দেশে-বিদেশে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘আমি নিজেও তাদের এই টাকা গ্রহণ করার প্রস্তাব পেয়েছি। আমাকে বলা হয়েছে, যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে আমি কলম ধরি তাহলে প্রতি ফিচারে আমাকে ১০ হাজার পাউন্ড করে দেয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ বিচার বাধাগ্রস্ত করতে যে কী পরিমাণ অর্থ নিয়ে জামায়াত মাঠে নেমেছে, তার সামান্যতম উদাহরণ হলো, আমাকে ১০ হাজার পাউন্ড অফার করা। আমার মতো একজন সামান্য কলামিস্টকে যদি এই পরিমাণ অর্থ অফার করা হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পেছনে কত টাকা ব্যয় করা হচ্ছে তার হিসেব বের করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার খুবই কঠিন কাজ উল্লেখ করে গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, এই বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সৌদি আরব, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী রাষ্ট্র। দেশের মানুষেরও একটি বিরাট অংশ এই বিচারের বিরুদ্ধে। এত জটিলতার পরও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিচার সম্পন্ন করার সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন, এর পক্ষে জনমত সৃষ্টি করে তাঁর হাতকে শক্তিশালী করা উচিত আমাদের। যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থকদের সামাজিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দলের নেতাদের সাথে একসাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন, আবার আওয়ামী লীগের প্লাটফর্মে এসে জোর গলায় এদের বিচার চাইবেন Ñ এটি চলতে পারে না।’ লন্ডনে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকদের শক্ত অবস্থানের কথা উল্লেখ করে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘মন্ত্রী-এমপিরা লন্ডন এলে সমাবেশ করে লাগাতার বক্তৃতার মাধ্যমে তাদের কাছে ব্রিটেনে বসবাসরত যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েই নিজেদের কর্তব্য শেষ করছি আমরা। এটা না করে বরং ব্রিটিশ মূলধারায় যুদ্ধাপরাধীদের প্রভাব-আধিপত্য রুখবার চেষ্টা করা উচিত। এ চেষ্টা আমরা কেউ করছি না। শুধুমাত্র বক্তৃতা-বিবৃতিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ঝড় তুলছি।’ গাফ্ফার চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি লন্ডন সফরের সময় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে শেখ হাসিনার দৃঢ়তা আমাকে আশাবাদী করেছে।’ আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জানান, বিশাল অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক লবিং করছে জামায়াত। তিনি বলেন, জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছে ওয়ার ক্রাইম ট্রাইবুনালকে বিতর্কিত করতে। লবিস্ট নিয়োগের সই করা এই চুক্তির কপি সরকারের হস্তগত হয়েছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ২৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে নিযুক্ত জামায়াতের লবিস্টরা মার্কিন সরকারের দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন, যাতে যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন। আমেরিকার এ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ, কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন, ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডমেনসহ অন্যন্যদের সম্প্রতি তৎপরতার বিষয়টি এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। ব্যারিস্টার শফিক দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, যতই ষড়যন্ত্র হোক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। এটি কেউ রুখতে পারবে না। এ বছরের মধ্যেই আমরা শীর্ষ কয়েক যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করতে পারব বলে আশা করছি। ‘যুদ্ধাপরাধীদের অর্থের অন্যতম উৎস লন্ডন’- এ মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী বলেন, মসজিদ-মাদ্রাসার নামে চ্যারিটির মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে লন্ডন থেকে। এই অর্থ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার কাজে ব্যয় হচ্ছে। তিনি এ বিষয়ে প্রবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। স্বরাস্ট্রমন্ত্রী ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো’ মন্তব্য করে বলেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করার বিরোধীদলীয় ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। দেশে জঙ্গীবাদ নেই, বোমাবাজি নেই, ধর্মের নামে সহিংসতা নেই।’

No comments

Powered by Blogger.