সেরেনার রাজ্যে রানী সেরেনাই! by সায়মা শারমীন
মেয়েদের পাওয়ার টেনিসের অন্যতম প্রবক্তা হিসেবে অভিহিত করা হয় তাঁকে। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতে নিন্দুকরা বলতেন, ‘এ ধরনের টেনিস দিয়ে যৎসামান্য সাফল্য পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু বেশিদিন টিকে থাকা যাবে না, আর সর্বকালের সেরাদের তালিকাতেই তো ঠাঁই পাবে না।’ দেখতে দেখতে ১৭ বছর কেটে গেল।
কোথায় হারিয়ে গেছে সেই নিন্দুকরা, অথচ বহালতবিয়তে টিকে আছেন তিনি। শুধু টিকেই আছেন না, ইতোমধ্যে অভিহিত হচ্ছেন ‘ওয়ান অব তদ্য গ্রেটেস্ট ওম্যান টেনিস প্লেয়ার অব অল টাইম’ হিসেবে। যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি যে সেরেনা উইলিয়ামস, সেটা বোধকরি ইতোমধ্যে বুঝে ফেলেছেন পাঠকরা। সম্প্রতি সেরেনা দেখিয়ে দিলেন, সেরেনা সেরেনাই! তাঁর বিকল্প বা প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই। আজকের প্রতিবেদন ইউএস ওপেন জয়ী এ সেরেনাকে নিয়েই।
হেড টু হেড পরিসংখ্যান ছিল সেরেনা উইলিয়ামসের পক্ষেই। ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার বিরুদ্ধে এর আগে দশবারের দ্বৈরথে জয়ী হয়েছেন নয়বারই। সে পরিসংখ্যানটা নিজের দিকে কিছুটা স্ফীত করার আশায় ছিলেন বেলারুশকন্যা আজারেঙ্কা। কিন্তু সে আশা ধুলোয় মিশে গেছে। ইউএস ওপেনের মহিলা এককের ফাইনালে আজারেঙ্কাকে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো ইউএস ওপেনের সুদৃশ্য ট্রফিটা জেতেন মার্কিন কৃষ্ণকন্যা সেরেনাই। শীর্ষ বাছাই আজারেঙ্কাকে রবিবারের ফাইনালে ৬-২, ২-৬, ৭-৫ সেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উল্লাসে মাতোয়ারা হন চতুর্থ বাছাই সেরেনা। এ নিয়ে ক্যারিয়ারের ১৫টি গ্র্যান্ডসø্যাম এবং চতুর্থ ইউএস ওপেন জয়ের কৃতিত্ব দেখালেন ৩০ বছর বয়সী এ টেনিস তারকা। সেই সঙ্গে একই বছরে মহিলা এককে উইম্বলডন, অলিম্পিক ও ইউএস ওপেন জয়ে বড় বোন ভেনাস উইলিয়ামস ও সাবেক জার্মান কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফের অনন্য রেকর্ডে ভাগ বসান। এর আগে ১৯৯৯, ২০০২ ও ২০০৮ সালে ইউএস ওপেন জেতেন সেরেনা। রবিবারের ফাইনালে ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিট লড়াইয়ের পর ২৩ বছর বয়সী আজারেঙ্কাকে ধরাশায়ী করেন তিনি। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ৩১ বছরে পদার্পণ করতে যাওয়া সেরেনা প্রথম মার্কিন হিসেবে সবচেয়ে বেশি বয়সে ইউএস ওপেন জয়ের নজির স্থাপন করলেন। এবারের ইউএস ওপেনে সেরেনা শিরোপা জয়ের পথে একে একে পরাভূত করেন যুক্তরাষ্ট্রের কোকো ভ্যান্ডেওয়েগে, স্পেনের মার্টিনেজ সানচেজ, রাশিয়ার একাতেরিনা মাকারোভা, চেক প্রজাতন্ত্রের আন্দ্রেয়া লাভাককোভা, সার্বিয়ার আনা ইভানোভিচ, ইতালির সারা ইরানি এবং বেলারুশের ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাকে। এবারের ইউএস ওপেন টর্নেডোর কারণে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচগুলো মাঠে গড়াতে পারেনি। এছাড়া ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে হার্ডকোটের ময়দানটাও প্রতিযোগীদের খুব একটা অনুকূলে ছিল না। একদিকে বাজে আবহাওয়া, অন্যদিকে শিরোপা জয়ের হাতছানি। শেষ পর্যন্ত কার হাতে উঠবে শিরোপাÑ টেনিসমোদীদের এমন সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ হাসিটা হাসলেন সেরেনাই।
তিন মাসে আগে ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেন অনেকের মতে তাঁর সময়ের সেরা খেলোয়াড় সেরেনা। গ্র্যান্ডসø্যামের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়ের অভিজ্ঞতা হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে মোটেও সময় নেননি তিনি।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সেরেনা বলেন, ‘অতীতের হার থেকেই ম্যাচ জয়ের অনুপ্রেরণা পেয়েছি আমি। ফ্রেঞ্চ ওপেনে হারের পর শোচনীয় অবস্থায় ছিলাম। এর আগে আর কোন হারের পর এতটা বিপর্যস্ত হইনি (১১১তম বাছাই ফ্রান্সের ভার্জিনি রাজ্জানোর কাছে হারের প্রসঙ্গে এমন উক্তি করেন তিনি)।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি না প্যারিসের সেই হার আমাকে সহায়তা করেছে কি-না। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করতে চাই, কারণ আমি আরও বেশি চাই। আরও, আরও এবং আরও বেশি চাই। উইম্বলডন জেতা সব সময়ই বিশেষ কিছু। কিন্তু নিজেদের দেশে কিছু জেতা সত্যিই অসাধারণ ব্যাপার।’ যোগ করেন তিনি। আজারেঙ্কাকে হারানোর পথে নিজের মেজাজের সঙ্গেও লড়তে হয়েছে সেরেনাকে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অনেক বছর পর প্রথমবারের মতো আমি মেজাজ হারাইনি। আমার মনে হয় প্রত্যেকে আমার ২০০৯ সালের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছে। আমি জানতাম তেমন কিছু করা চলবে না।’ উল্লেখ্য, ২০০৯ ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের কিম ক্লিস্টার্সের বিরুদ্ধে খেলার সময় লাইন কল নিয়ে কোর্টে উপস্থিত এক লাইন জাজের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন সেরেনা। তৎক্ষণাৎ তাঁকে কোর্ট থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং পরে তাঁকে রেকর্ড অর্থ জরিমানা করা হয়। জন্মদিন পালনের আগে ভাল উপহারই পেলেন সেরেনা। কারণ প্রতিযোগিতায় জয় নয়; রানার্সআপ হওয়ার জন্য মানসিকভাবে তৈরি ছিলেন এ সাবেক বিশ্বসেরা! তাই আজারেঙ্কার বিপক্ষে জয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘সত্যি বলছি, আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। রানার্সআপের বক্তব্য তৈরি করে রেখেছিলাম। এক কথায় এটা অবিশ্বাস্য।’ শিরোপা জেতায় প্রাইজমানি হিসেবে ১.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পান সেরেনা। চার বছর পর আবারও ইউএস ওপেনে শিরোপা করায়ত্তের পর উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হন সেরেনা। গত বছর অসুস্থতার জন্য নিয়মিত কোর্টে নামতে পারেননি তিনি। তবে চলতি বছর দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেছেন। উইম্বলডনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সাফল্যের শোকেসে তুলেছেন লন্ডন অলিম্পিকের স্বর্ণপদক। ইউএস ওপেনেও পারফরমেন্সের ঘাটতি হয়নি তাঁর। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার এই ইউএস ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েই ক্যারিয়ারের গ্র্যান্ডসø্যাম করায়ত্তের খাতা খুলেছিলেন সেরেনা। দীর্ঘ ১৩ বছর পর রবিবার যে রকম দুর্দান্ত এবং নজরকাড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করে জয় ছিনিয়ে নেন, তাতে তাঁকে ইতোমধ্যে টেনিসের কিংবদন্তির তালিকায় জায়গা দিয়েছেন টেনিসপ্রেমীরা। সেরেনা অবশ্য এখনও নিজেকে সেরা বলে দাবি করতে নারাজ, ‘আমি নিজেকে মোটেও সেরা বলে বিবেচনা করতে চাই না। আমি শুধুই একজন টেনিস খেলোয়াড়, যে সব সময় নিজের সেরাটা খেলার চেষ্টা করে এবং কখনই হাল ছেড়ে দেয় না। হারার আগে হারে না। আমি এখন আনন্দে উড়ছি। তবে এখানেই থেমে যেতে চাই না। আরও অনেক শিরোপা জেতার বাকি আছে আমার।’ অভিজ্ঞতার একটা দাম আছেই। আর এজন্যই আবারও সফল হলেন মেয়েদের পাওয়ার টেনিসের অন্যতম প্রবক্তা সেরেনা উইলিয়ামস। প্রমাণ করলেন এখনও ফুরিয়ে যাননি তিনি। বিশ্ব টেনিসকে এখন তাঁর দেয়ার আছে আরও অনেক কিছুই। ২০১০ সালে উইম্বলডন জয়ের পরই জার্মানির একটি রেস্টুরেন্টে কাচে লেগে পা কেটে গিয়েছিল সেরেনার। যে কারণে কয়েক দফা অস্ত্রোপচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকাকে। যার মাসুলও তাঁকে দিতে হয়। কোর্টের বাইরে চলে যাওয়া সেরেনার ক্যারিয়ারই হয়ে পড়েছিল হুমকির মুখে। ওই ধাক্কা কাটিয়ে গত বছর থেকেই ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন তিনি। তবে চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছেন চলমান বছরে। বছরের প্রথম গ্র্যান্ডসø্যাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে হার, দ্বিতীয় গ্র্যান্ডসø্যাম ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিলেও জিতে নেন রোম মাস্টার্স ও তৃতীয় গ্র্যান্ডসø্যাম উইম্বলডন। এ জয়ের মধ্য দিয়ে সেরেনার পুনর্জন্ম হয়। এমনিতে বাস্তবে ‘ফিনিক্স’ বলে কোন পাখির অস্তিত্ব নেই। তবে আছে রূপকথায়। এটা এমনই এক পাখি, যে পখির আয়ু শেষ হয়ে গেলে আচমকা নিজের গায়ে নিজেই আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই ভস্মীভূত ছাই থেকেই আবার নতুন করে জন্ম নেয় ফিনিক্স। সেরেনা উইলিয়ামস যেন এমনই এক ফিনিক্স পাখি। নতুন করে যেন জন্ম হয়েছে তাঁর। ইনজুরি এবং অফফর্ম মিলিয়ে হারিয়েই যেতে বসেছিলেন। গত বছরটা ছিল রীতিমতো হতাশার চাদরে ঢাকা। অব্যাহত ইনজুরি ও বাজে ফর্মের দরুন অনেকেই আশা ছেড়ে দিয়ে ভেবেছিলেন, ‘হয়ত অতলেই চলে গেলেন সেরেনা।’ কিন্তু তা হয়নি। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে হতে দেননি। অদম্য দৃঢ় মানসিকতার সেরেনা হাল ছেড়ে দেননি। তাই তো নতুন বছরের শুরু থেকেই ইঙ্গিত দেন ফর্মে ফেরার। অস্তাচলে যাবার আগে কেউ ঝলসে ওঠে, কেউ ওঠে না। সেরেনার বেলায় সেটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, আর কতদিন বিশ্বটেনিসে ‘সেরেনা ম্যাজিক’ অব্যাহত থাকে।
হেড টু হেড পরিসংখ্যান ছিল সেরেনা উইলিয়ামসের পক্ষেই। ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার বিরুদ্ধে এর আগে দশবারের দ্বৈরথে জয়ী হয়েছেন নয়বারই। সে পরিসংখ্যানটা নিজের দিকে কিছুটা স্ফীত করার আশায় ছিলেন বেলারুশকন্যা আজারেঙ্কা। কিন্তু সে আশা ধুলোয় মিশে গেছে। ইউএস ওপেনের মহিলা এককের ফাইনালে আজারেঙ্কাকে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো ইউএস ওপেনের সুদৃশ্য ট্রফিটা জেতেন মার্কিন কৃষ্ণকন্যা সেরেনাই। শীর্ষ বাছাই আজারেঙ্কাকে রবিবারের ফাইনালে ৬-২, ২-৬, ৭-৫ সেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উল্লাসে মাতোয়ারা হন চতুর্থ বাছাই সেরেনা। এ নিয়ে ক্যারিয়ারের ১৫টি গ্র্যান্ডসø্যাম এবং চতুর্থ ইউএস ওপেন জয়ের কৃতিত্ব দেখালেন ৩০ বছর বয়সী এ টেনিস তারকা। সেই সঙ্গে একই বছরে মহিলা এককে উইম্বলডন, অলিম্পিক ও ইউএস ওপেন জয়ে বড় বোন ভেনাস উইলিয়ামস ও সাবেক জার্মান কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফের অনন্য রেকর্ডে ভাগ বসান। এর আগে ১৯৯৯, ২০০২ ও ২০০৮ সালে ইউএস ওপেন জেতেন সেরেনা। রবিবারের ফাইনালে ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিট লড়াইয়ের পর ২৩ বছর বয়সী আজারেঙ্কাকে ধরাশায়ী করেন তিনি। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ৩১ বছরে পদার্পণ করতে যাওয়া সেরেনা প্রথম মার্কিন হিসেবে সবচেয়ে বেশি বয়সে ইউএস ওপেন জয়ের নজির স্থাপন করলেন। এবারের ইউএস ওপেনে সেরেনা শিরোপা জয়ের পথে একে একে পরাভূত করেন যুক্তরাষ্ট্রের কোকো ভ্যান্ডেওয়েগে, স্পেনের মার্টিনেজ সানচেজ, রাশিয়ার একাতেরিনা মাকারোভা, চেক প্রজাতন্ত্রের আন্দ্রেয়া লাভাককোভা, সার্বিয়ার আনা ইভানোভিচ, ইতালির সারা ইরানি এবং বেলারুশের ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাকে। এবারের ইউএস ওপেন টর্নেডোর কারণে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচগুলো মাঠে গড়াতে পারেনি। এছাড়া ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে হার্ডকোটের ময়দানটাও প্রতিযোগীদের খুব একটা অনুকূলে ছিল না। একদিকে বাজে আবহাওয়া, অন্যদিকে শিরোপা জয়ের হাতছানি। শেষ পর্যন্ত কার হাতে উঠবে শিরোপাÑ টেনিসমোদীদের এমন সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ হাসিটা হাসলেন সেরেনাই।
তিন মাসে আগে ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেন অনেকের মতে তাঁর সময়ের সেরা খেলোয়াড় সেরেনা। গ্র্যান্ডসø্যামের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়ের অভিজ্ঞতা হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে মোটেও সময় নেননি তিনি।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সেরেনা বলেন, ‘অতীতের হার থেকেই ম্যাচ জয়ের অনুপ্রেরণা পেয়েছি আমি। ফ্রেঞ্চ ওপেনে হারের পর শোচনীয় অবস্থায় ছিলাম। এর আগে আর কোন হারের পর এতটা বিপর্যস্ত হইনি (১১১তম বাছাই ফ্রান্সের ভার্জিনি রাজ্জানোর কাছে হারের প্রসঙ্গে এমন উক্তি করেন তিনি)।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি না প্যারিসের সেই হার আমাকে সহায়তা করেছে কি-না। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করতে চাই, কারণ আমি আরও বেশি চাই। আরও, আরও এবং আরও বেশি চাই। উইম্বলডন জেতা সব সময়ই বিশেষ কিছু। কিন্তু নিজেদের দেশে কিছু জেতা সত্যিই অসাধারণ ব্যাপার।’ যোগ করেন তিনি। আজারেঙ্কাকে হারানোর পথে নিজের মেজাজের সঙ্গেও লড়তে হয়েছে সেরেনাকে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অনেক বছর পর প্রথমবারের মতো আমি মেজাজ হারাইনি। আমার মনে হয় প্রত্যেকে আমার ২০০৯ সালের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছে। আমি জানতাম তেমন কিছু করা চলবে না।’ উল্লেখ্য, ২০০৯ ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের কিম ক্লিস্টার্সের বিরুদ্ধে খেলার সময় লাইন কল নিয়ে কোর্টে উপস্থিত এক লাইন জাজের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন সেরেনা। তৎক্ষণাৎ তাঁকে কোর্ট থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং পরে তাঁকে রেকর্ড অর্থ জরিমানা করা হয়। জন্মদিন পালনের আগে ভাল উপহারই পেলেন সেরেনা। কারণ প্রতিযোগিতায় জয় নয়; রানার্সআপ হওয়ার জন্য মানসিকভাবে তৈরি ছিলেন এ সাবেক বিশ্বসেরা! তাই আজারেঙ্কার বিপক্ষে জয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘সত্যি বলছি, আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। রানার্সআপের বক্তব্য তৈরি করে রেখেছিলাম। এক কথায় এটা অবিশ্বাস্য।’ শিরোপা জেতায় প্রাইজমানি হিসেবে ১.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পান সেরেনা। চার বছর পর আবারও ইউএস ওপেনে শিরোপা করায়ত্তের পর উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হন সেরেনা। গত বছর অসুস্থতার জন্য নিয়মিত কোর্টে নামতে পারেননি তিনি। তবে চলতি বছর দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেছেন। উইম্বলডনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সাফল্যের শোকেসে তুলেছেন লন্ডন অলিম্পিকের স্বর্ণপদক। ইউএস ওপেনেও পারফরমেন্সের ঘাটতি হয়নি তাঁর। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার এই ইউএস ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েই ক্যারিয়ারের গ্র্যান্ডসø্যাম করায়ত্তের খাতা খুলেছিলেন সেরেনা। দীর্ঘ ১৩ বছর পর রবিবার যে রকম দুর্দান্ত এবং নজরকাড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করে জয় ছিনিয়ে নেন, তাতে তাঁকে ইতোমধ্যে টেনিসের কিংবদন্তির তালিকায় জায়গা দিয়েছেন টেনিসপ্রেমীরা। সেরেনা অবশ্য এখনও নিজেকে সেরা বলে দাবি করতে নারাজ, ‘আমি নিজেকে মোটেও সেরা বলে বিবেচনা করতে চাই না। আমি শুধুই একজন টেনিস খেলোয়াড়, যে সব সময় নিজের সেরাটা খেলার চেষ্টা করে এবং কখনই হাল ছেড়ে দেয় না। হারার আগে হারে না। আমি এখন আনন্দে উড়ছি। তবে এখানেই থেমে যেতে চাই না। আরও অনেক শিরোপা জেতার বাকি আছে আমার।’ অভিজ্ঞতার একটা দাম আছেই। আর এজন্যই আবারও সফল হলেন মেয়েদের পাওয়ার টেনিসের অন্যতম প্রবক্তা সেরেনা উইলিয়ামস। প্রমাণ করলেন এখনও ফুরিয়ে যাননি তিনি। বিশ্ব টেনিসকে এখন তাঁর দেয়ার আছে আরও অনেক কিছুই। ২০১০ সালে উইম্বলডন জয়ের পরই জার্মানির একটি রেস্টুরেন্টে কাচে লেগে পা কেটে গিয়েছিল সেরেনার। যে কারণে কয়েক দফা অস্ত্রোপচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকাকে। যার মাসুলও তাঁকে দিতে হয়। কোর্টের বাইরে চলে যাওয়া সেরেনার ক্যারিয়ারই হয়ে পড়েছিল হুমকির মুখে। ওই ধাক্কা কাটিয়ে গত বছর থেকেই ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন তিনি। তবে চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছেন চলমান বছরে। বছরের প্রথম গ্র্যান্ডসø্যাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে হার, দ্বিতীয় গ্র্যান্ডসø্যাম ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিলেও জিতে নেন রোম মাস্টার্স ও তৃতীয় গ্র্যান্ডসø্যাম উইম্বলডন। এ জয়ের মধ্য দিয়ে সেরেনার পুনর্জন্ম হয়। এমনিতে বাস্তবে ‘ফিনিক্স’ বলে কোন পাখির অস্তিত্ব নেই। তবে আছে রূপকথায়। এটা এমনই এক পাখি, যে পখির আয়ু শেষ হয়ে গেলে আচমকা নিজের গায়ে নিজেই আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই ভস্মীভূত ছাই থেকেই আবার নতুন করে জন্ম নেয় ফিনিক্স। সেরেনা উইলিয়ামস যেন এমনই এক ফিনিক্স পাখি। নতুন করে যেন জন্ম হয়েছে তাঁর। ইনজুরি এবং অফফর্ম মিলিয়ে হারিয়েই যেতে বসেছিলেন। গত বছরটা ছিল রীতিমতো হতাশার চাদরে ঢাকা। অব্যাহত ইনজুরি ও বাজে ফর্মের দরুন অনেকেই আশা ছেড়ে দিয়ে ভেবেছিলেন, ‘হয়ত অতলেই চলে গেলেন সেরেনা।’ কিন্তু তা হয়নি। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে হতে দেননি। অদম্য দৃঢ় মানসিকতার সেরেনা হাল ছেড়ে দেননি। তাই তো নতুন বছরের শুরু থেকেই ইঙ্গিত দেন ফর্মে ফেরার। অস্তাচলে যাবার আগে কেউ ঝলসে ওঠে, কেউ ওঠে না। সেরেনার বেলায় সেটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, আর কতদিন বিশ্বটেনিসে ‘সেরেনা ম্যাজিক’ অব্যাহত থাকে।
No comments