যুবরাজের ফেরা... by মোঃ এনামুল হাসান
‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছেন ভারতীয় অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং’ কেবল এই বাক্যটি দিয়ে যদি সব বোঝানো যেত, তবে কয়েকদিন ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকর্মীদের বিস্তর সময় আর মেধা খরচ করতে হতো না। ৩০ বছর বয়সী চন্ডিগড় হিরো যে অলরাউন্ডার সেটিও নতুন কিছু নয় যুবি ক্রিকেটানুরাগীদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকার কারণ
‘অলরাউন্ডার’ কিংবা ‘বিশ্বজয়ের নায়ক’ হিসেবে নয়। ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ এক ক্রিকেট যোদ্ধার মাঠের সবুজ জমিনে প্রত্যাবর্তন দেখার অপেক্ষায় কয়েকদিন ধরে বুঁদ হয়ে ছিল তাবত দুনিয়ার অগণিত ক্রিকেটপ্রিয় মানুষ। প্রায় তিন দশক পর ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় করে আধুনিক ক্রিকেটের অন্য এক সম্মোহনী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় ভারত। দীর্ঘদিন অপেক্ষার অবসান ঘুচিয়ে ধোনির হাতে বিশ্বকাপ তুলে দেয়ার নেপথ্যের মূল কারিগর ছিলেন যুবি-ই। বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে বল হাতে যৌথভাবে নিয়েছিলেন তৃতীয় সর্বাধিক ১৫ উইকেট। ব্যাট হাতেও ঝলসে উঠেছিলেন দুর্বার যুবরাজ। করেছিলেন ষষ্ঠ সর্বাধিক ৩৭৮ রান! ব্যাটে-বলে দ্যুতি ছড়িয়ে আসরের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন ভারতের বিশ্বকাপের নায়ক। তার মাস কয়েকের মধ্যেই অন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অন্য এক যুদ্ধে নামতে হয় তাকে।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ টি২০, এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে ও নবেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন যুবরাজ। সে হিসাবে নয় মাস পর ক্রিকেটে ফেরা যুবি টি২০ খেলছেন প্রায় দেড় বছর পর। খেলছেন বলাতে কোন ভুল নেই। কারণ বৃষ্টিতে প- হওয়া প্রথম টি২০’র সেরা একাদশে থাকা যুবরাজ চেন্নাইয়ের দ্বিতীয় ও শেষ যে দলে থাকছেন তাতে সন্দেহ নেই এতটুকো। তবে বৃষ্টিতে অপেক্ষার পালা আরও খানিক দীর্ঘ হলো কি-না, তার আগেই ফিচারটি লেখা হয়। ভারতবাসীর মতো যুবিকে ক্রিকেটে বরণ করে নিতে তর না সওয়া অবস্থা হয় দেশটির বোর্ড কর্তাদেরও। বিশাখাপত্তমে বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়া প্রথম ম্যাচে যেমন তেমনি চেন্নাইয়ের স্থানীয় ক্রিকেট কর্তাব্যক্তিরাও যুবরাজের প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ সংবর্ধনার আয়োজনে প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। আর ঈশ্বর কৃপায় পুনরুজীবন পাওয়া যুবরাজ মাঠের লড়াইয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত সংবাদ মাধ্যমকে তা জানিয়ে দেন আলোচনার কেন্দ্রে থাকা ক্রিকেট হিরো। ‘জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচে অংশ নিয়েছি। সেখানে টানা কয়েক মাস কাটিয়ে এখন শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত আমি। বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি নিজেকে চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করে নেয়ার সুযোগ হিসেবেও দেখছি আমি।’ ভক্ত-সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বকাপ ফাইনালের পর এবারের ফেরার এই দিনটিই আমার জীবনের সেরা দিন। দেশজুড়ে অগণিত ভক্ত-অনুরাগীর অজস্র বার্তা পেয়ে আবেগাপ্লুত আমি। এত শত উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছি যার উত্তরটা মাঠের নৈপুণ্যেই দিতে চাই। এজন্য সর্বপ্রথম ঈশ্বরকে, এরপর মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন ও ভক্তদের ধন্যবাদ জানাই। সবার দোয়াতেই আবার ব্যাট হাতে মাটের সবুজ জমিনে ফিরতে পেরেছি। ধন্যবাদ দলের সতীর্থ আর বোর্ডের দায়িত্বশীলদের। খেলাটা উপভোগের পাশাপাশি দলের সাফল্যে ভূমিকা রাখাটাই আমার লক্ষ্য।’
২০১১ বিশ্বকাপে পাওয়া ‘ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট’ পুরস্কার লিজেন্ড শচীন টেন্ডুলকরকে উৎসর্গ করে যুবরাজ সিং বলেছিলেন, ‘এ জয় ক্রিকেট ঈশ্বরের জন্য। ভারতীয় ক্রিকেটের স্পন্দন শচীনের জন্য বিশ্বকাপটা জিততে চেয়েছিলাম আমার এ অর্জন তাকে উৎসর্গ করছি।’ বুঝুন বাবা-মা, ভাই-বোন অনেক প্রিয় ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যাদের আসরসেরার ট্রফি উৎসর্গ করতে পারতেন; কিন্তু উৎসর্গ করেছেন ক্রিকেটের মহান অধিশ্বরকে, ভারতবাসী যাকে আজীবন মনে রাখবে। মনে প্রশ্ন আসতে পারে, বিশ্বকাপের এতদিন পরে এখন সেই আলোচনা কেন? কোনও স্মারক নয়, ক্যান্সারজয়ী সেই যুবরাজকে এমন এক উপহারই দেন কিংবদন্তি শচীন যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না। কেবল অনুভব করা যায়! যুবরাজকে ভারতীয় ক্রিকেটের সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন বলে ঘোষণা করেছেন মাস্টার ব্ল্যাস্টার শচীন রমেশ টেন্ডুলকর। বলেছেন, মৃত্যুঞ্জয়ী যুবরাজ সবার জন্যই বড় এক উদাহরণ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ সিরিজ শুরুর প্রাক্কালে দিল্লীতে সংবাদ মাধ্যমের কাছে এ যুগের ডন বলেন, ‘আপনি ভাবতে পারেন, ক্যান্সারের বিষাক্ত ছোবলে যে মানুষটা মৃত্যুর দুয়ারে গিয়েছিল সে-ই আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে! এ-ও কি সবার পক্ষে সম্ভব? কেবল ক্রিকেটাঙ্গন কিংবা স্পোর্টস নয়, প্রত্যেক ভারতীয়র জন্যই যুবি আজ বড় উদাহরণ। সত্যিকারের জয়ী। যা দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হতে পরি। কোন ক্ষেত্রেই হতাশ না হয়ে চালিয়ে যেতে পারি জীবনযুদ্ধ।’ ৩০ বছর বয়সী যুবরাজ গত বিশ্বকাপের পর পরই অন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। আমেরিকার বিখ্যাত বোস্টন হাসপাতালে কেমোথেরাপির মতো দুঃসহ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। মাঠে ফেরার জন্য কঠোর অনুশীলন করেন ব্যাঙ্গালোরের জাতীয় একাডেমিতে। সুযোগ পান টি২০ বিশ্বকাপের দলে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন টি২০ ম্যাচের মধ্য দিয়েই ভারতীয় ক্রিকেটে পুনর্জন্ম হয় যুবরাজের। দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ে যুবরাজের অবদানের কথা স্মরণ করে টেন্ডুলকর আরও বলেন, ‘এককথায় বললে বহুল কাক্সিক্ষত বিশ্বকাপ জয়ে সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন যুবরাজ সিং। ক্যান্সারজয় করে যুবি প্রমাণ করেছে যে ও মাঠের বাইরেরও চ্যাম্পিয়ন।’ বিশ্বকাপ জয়ে অসামান্য অবদানের জন্য বুধবারই সম্মানীয় অর্জুন পুরস্কার পান যুবরাজ।
শচীন টেন্ডুলকর ও যুবরাজ সিংয়ের বন্ধুত্বের কথা সবারই জানা। অসাধারণ অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ভারতকে বিশ্বকাপ উপহার দেন অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং। বিশ্বকাপে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের কৃতীত্বটা গ্রেট শচীনকে উৎসর্গ করেছিলেন যুবরাজ। এরপর ক্যান্সারের সঙ্গে অন্য যুদ্ধে দীর্ঘ দুই মাস বিচ্ছিন্ন দু’জন। শচীন মাঠে আর যুবরাজ সদূর আমেরিকার বোস্টনের আইইউ সাইমন ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসাধীন এভাবে কেটেছে প্রায় তিন মাস। দূরে থাকলেও এসময়টাতে নাকি যুগসন্ধিকালের দুই ভারতীয় তারকা ক্রিকেটারের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আরও দৃঢ় হয়েছে। তেমনটাই জানিয়েছেন ক্যান্সার জয় করে স্বভূমে ফেরা যুবরাজ সিং। তিনি বলেন,‘ শত সমালোচনার মাঝে অস্ট্রেলিয়া সফরে শচীন কি করেছে তা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেছি। বাংলাদেশের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচে বহুল কাক্সিক্ষত এক শ’ নম্বর সেঞ্চুরি যেদিন পেল, মনে হচ্ছিল আমি মিরপুরের মাঠেই আছি! আসলে শচীন টেন্ডুলকর আমার আইডল উজ্জীবনী শক্তি। তার মাঠ ও মাঠের বাইরের সবকিছুই আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায়। মাত্র তিন দিনের জন্য ইংল্যান্ডে আসা সত্ত্বেও সে আমার সঙ্গে দেখা করেছে। সাহস যুগিয়েছে। শচীন আসলে কেবলই আমার অনুপ্রেরণা দাতা বা বন্ধুই নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু।’
উল্লেখ্য, ফুসফুসে ক্যান্সারের তৃতীয় পর্যায়ের কেমোথেরাপি শেষে যুবরাজ যখন প্রায় সুস্থ হওয়ার পথে তখন পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অল্প সময়ের জন্য ইংল্যান্ডে কাটাতে হয় তাকে। সে সময়ই পায়ের পাতার ইনজুরির চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ডে যান ব্যাটিং লিজেন্ড শচীন। নিজে থেকে দেখা করতে যান যুবরাজের সঙ্গে। খোঁজখবর নেন প্রিয় শিষ্য, প্রিয় বন্ধু যুবরাজ সিংয়ের। ভারতসহ গোটাবিশ্বেই সে খবরটি তখন বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়। দেশে ফিরেই আবার মুম্বাইয়ের হোটেলে ছুটে গেছেন যুবি মেকি নয়, সব মিলিয়ে শচীন-যুবির বন্ধুত্বটা আসলেই আরও দৃঢ় হয়েছে সেটিই প্রমাণ পায়।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ টি২০, এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে ও নবেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন যুবরাজ। সে হিসাবে নয় মাস পর ক্রিকেটে ফেরা যুবি টি২০ খেলছেন প্রায় দেড় বছর পর। খেলছেন বলাতে কোন ভুল নেই। কারণ বৃষ্টিতে প- হওয়া প্রথম টি২০’র সেরা একাদশে থাকা যুবরাজ চেন্নাইয়ের দ্বিতীয় ও শেষ যে দলে থাকছেন তাতে সন্দেহ নেই এতটুকো। তবে বৃষ্টিতে অপেক্ষার পালা আরও খানিক দীর্ঘ হলো কি-না, তার আগেই ফিচারটি লেখা হয়। ভারতবাসীর মতো যুবিকে ক্রিকেটে বরণ করে নিতে তর না সওয়া অবস্থা হয় দেশটির বোর্ড কর্তাদেরও। বিশাখাপত্তমে বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়া প্রথম ম্যাচে যেমন তেমনি চেন্নাইয়ের স্থানীয় ক্রিকেট কর্তাব্যক্তিরাও যুবরাজের প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ সংবর্ধনার আয়োজনে প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। আর ঈশ্বর কৃপায় পুনরুজীবন পাওয়া যুবরাজ মাঠের লড়াইয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত সংবাদ মাধ্যমকে তা জানিয়ে দেন আলোচনার কেন্দ্রে থাকা ক্রিকেট হিরো। ‘জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচে অংশ নিয়েছি। সেখানে টানা কয়েক মাস কাটিয়ে এখন শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত আমি। বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি নিজেকে চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করে নেয়ার সুযোগ হিসেবেও দেখছি আমি।’ ভক্ত-সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বকাপ ফাইনালের পর এবারের ফেরার এই দিনটিই আমার জীবনের সেরা দিন। দেশজুড়ে অগণিত ভক্ত-অনুরাগীর অজস্র বার্তা পেয়ে আবেগাপ্লুত আমি। এত শত উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছি যার উত্তরটা মাঠের নৈপুণ্যেই দিতে চাই। এজন্য সর্বপ্রথম ঈশ্বরকে, এরপর মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন ও ভক্তদের ধন্যবাদ জানাই। সবার দোয়াতেই আবার ব্যাট হাতে মাটের সবুজ জমিনে ফিরতে পেরেছি। ধন্যবাদ দলের সতীর্থ আর বোর্ডের দায়িত্বশীলদের। খেলাটা উপভোগের পাশাপাশি দলের সাফল্যে ভূমিকা রাখাটাই আমার লক্ষ্য।’
২০১১ বিশ্বকাপে পাওয়া ‘ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট’ পুরস্কার লিজেন্ড শচীন টেন্ডুলকরকে উৎসর্গ করে যুবরাজ সিং বলেছিলেন, ‘এ জয় ক্রিকেট ঈশ্বরের জন্য। ভারতীয় ক্রিকেটের স্পন্দন শচীনের জন্য বিশ্বকাপটা জিততে চেয়েছিলাম আমার এ অর্জন তাকে উৎসর্গ করছি।’ বুঝুন বাবা-মা, ভাই-বোন অনেক প্রিয় ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যাদের আসরসেরার ট্রফি উৎসর্গ করতে পারতেন; কিন্তু উৎসর্গ করেছেন ক্রিকেটের মহান অধিশ্বরকে, ভারতবাসী যাকে আজীবন মনে রাখবে। মনে প্রশ্ন আসতে পারে, বিশ্বকাপের এতদিন পরে এখন সেই আলোচনা কেন? কোনও স্মারক নয়, ক্যান্সারজয়ী সেই যুবরাজকে এমন এক উপহারই দেন কিংবদন্তি শচীন যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না। কেবল অনুভব করা যায়! যুবরাজকে ভারতীয় ক্রিকেটের সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন বলে ঘোষণা করেছেন মাস্টার ব্ল্যাস্টার শচীন রমেশ টেন্ডুলকর। বলেছেন, মৃত্যুঞ্জয়ী যুবরাজ সবার জন্যই বড় এক উদাহরণ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ সিরিজ শুরুর প্রাক্কালে দিল্লীতে সংবাদ মাধ্যমের কাছে এ যুগের ডন বলেন, ‘আপনি ভাবতে পারেন, ক্যান্সারের বিষাক্ত ছোবলে যে মানুষটা মৃত্যুর দুয়ারে গিয়েছিল সে-ই আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে! এ-ও কি সবার পক্ষে সম্ভব? কেবল ক্রিকেটাঙ্গন কিংবা স্পোর্টস নয়, প্রত্যেক ভারতীয়র জন্যই যুবি আজ বড় উদাহরণ। সত্যিকারের জয়ী। যা দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হতে পরি। কোন ক্ষেত্রেই হতাশ না হয়ে চালিয়ে যেতে পারি জীবনযুদ্ধ।’ ৩০ বছর বয়সী যুবরাজ গত বিশ্বকাপের পর পরই অন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। আমেরিকার বিখ্যাত বোস্টন হাসপাতালে কেমোথেরাপির মতো দুঃসহ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। মাঠে ফেরার জন্য কঠোর অনুশীলন করেন ব্যাঙ্গালোরের জাতীয় একাডেমিতে। সুযোগ পান টি২০ বিশ্বকাপের দলে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন টি২০ ম্যাচের মধ্য দিয়েই ভারতীয় ক্রিকেটে পুনর্জন্ম হয় যুবরাজের। দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ে যুবরাজের অবদানের কথা স্মরণ করে টেন্ডুলকর আরও বলেন, ‘এককথায় বললে বহুল কাক্সিক্ষত বিশ্বকাপ জয়ে সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন যুবরাজ সিং। ক্যান্সারজয় করে যুবি প্রমাণ করেছে যে ও মাঠের বাইরেরও চ্যাম্পিয়ন।’ বিশ্বকাপ জয়ে অসামান্য অবদানের জন্য বুধবারই সম্মানীয় অর্জুন পুরস্কার পান যুবরাজ।
শচীন টেন্ডুলকর ও যুবরাজ সিংয়ের বন্ধুত্বের কথা সবারই জানা। অসাধারণ অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ভারতকে বিশ্বকাপ উপহার দেন অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং। বিশ্বকাপে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের কৃতীত্বটা গ্রেট শচীনকে উৎসর্গ করেছিলেন যুবরাজ। এরপর ক্যান্সারের সঙ্গে অন্য যুদ্ধে দীর্ঘ দুই মাস বিচ্ছিন্ন দু’জন। শচীন মাঠে আর যুবরাজ সদূর আমেরিকার বোস্টনের আইইউ সাইমন ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসাধীন এভাবে কেটেছে প্রায় তিন মাস। দূরে থাকলেও এসময়টাতে নাকি যুগসন্ধিকালের দুই ভারতীয় তারকা ক্রিকেটারের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আরও দৃঢ় হয়েছে। তেমনটাই জানিয়েছেন ক্যান্সার জয় করে স্বভূমে ফেরা যুবরাজ সিং। তিনি বলেন,‘ শত সমালোচনার মাঝে অস্ট্রেলিয়া সফরে শচীন কি করেছে তা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেছি। বাংলাদেশের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচে বহুল কাক্সিক্ষত এক শ’ নম্বর সেঞ্চুরি যেদিন পেল, মনে হচ্ছিল আমি মিরপুরের মাঠেই আছি! আসলে শচীন টেন্ডুলকর আমার আইডল উজ্জীবনী শক্তি। তার মাঠ ও মাঠের বাইরের সবকিছুই আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায়। মাত্র তিন দিনের জন্য ইংল্যান্ডে আসা সত্ত্বেও সে আমার সঙ্গে দেখা করেছে। সাহস যুগিয়েছে। শচীন আসলে কেবলই আমার অনুপ্রেরণা দাতা বা বন্ধুই নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু।’
উল্লেখ্য, ফুসফুসে ক্যান্সারের তৃতীয় পর্যায়ের কেমোথেরাপি শেষে যুবরাজ যখন প্রায় সুস্থ হওয়ার পথে তখন পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অল্প সময়ের জন্য ইংল্যান্ডে কাটাতে হয় তাকে। সে সময়ই পায়ের পাতার ইনজুরির চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ডে যান ব্যাটিং লিজেন্ড শচীন। নিজে থেকে দেখা করতে যান যুবরাজের সঙ্গে। খোঁজখবর নেন প্রিয় শিষ্য, প্রিয় বন্ধু যুবরাজ সিংয়ের। ভারতসহ গোটাবিশ্বেই সে খবরটি তখন বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়। দেশে ফিরেই আবার মুম্বাইয়ের হোটেলে ছুটে গেছেন যুবি মেকি নয়, সব মিলিয়ে শচীন-যুবির বন্ধুত্বটা আসলেই আরও দৃঢ় হয়েছে সেটিই প্রমাণ পায়।
No comments