আবার মারমুখী ছাত্রলীগ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আবার মারমুখী হয়ে উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।


বেলা সোয়া ১১টার দিকে পুলিশের সামনেই ছাত্রলীগ এ হামলা চালায়। এর প্রতিবাদে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর বাজার এলাকায় অন্তত ১০টি যানবাহনের কাচ ভাঙচুর করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরাফাত, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন, মোস্তফা কামাল, মাসুদ রানা, কাজল আহমেদ, রবিন আহমেদসহ অন্তত ১০ নেতা-কর্মী আহত হন। আরাফাতসহ পাঁচজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির চতুর্থ বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল ক্যাম্পাসে মিছিল করার জন্য বিনোদপুর বাজারে জড়ো হন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। মিছিলের খবর পেয়ে আগে থেকেই সিনেট ভবন ও প্রধান ফটকের পাশে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ঢুকলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি আখেরুজ্জামান, সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন, বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ নোমান, উপপ্রচার সম্পাদক সাহানুর সাকিলের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী বাধা দেন। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের একাংশ তখন প্রধান ফটকের বাইরে চলে যায়। এরপর ছাত্রদলের নেতা আরাফাত কয়েকজন নেতা-কর্মী নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে যান। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তখন রড, হকিস্টিক, ছুরি ও কিরিচ নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলা চালান। দৌড়ে পালাতে গিয়ে প্রধান ফটকের কাছে পড়ে যান ছাত্রদলের নেতা দেলোয়ার। এ সময় হকিস্টিক, লাঠি ও ছুরি দিয়ে তাঁকে উপর্যুপরি আঘাত করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পেটানো হয় মোস্তফা, মাসুদ ও কাজলকেও।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ ধাওয়া করে তাঁদের তাড়িয়ে দেয়। বিকেলে বিনোদপুর এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে যানবাহন ভাঙচুর শুরু করলে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য জাকারিয়া আহমেদকে আটক করা হয়।
অছাত্রদের প্রতিহত করেছে ছাত্রলীগ!: বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই ক্যাম্পাসের যাঁরা প্রকৃত ছাত্র, তাঁরাই রাজনীতি করুন। কিন্তু ছাত্রদলের নামে যাঁরা ক্যাম্পাসে ঢুকে আহত হয়েছেন, তাঁদের কারোরই ছাত্রত্ব নেই। ছাত্র হিসেবে এই অছাত্রদের প্রতিহত করা আমাদের দায়িত্ব।’
ছাত্রদলকে দায়ী করল পুলিশ: মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদলের ছেলেরাই ইচ্ছা করে গায়ে পড়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা চাচ্ছিল, তাদের ওপর হামলা হোক এবং তা গণমাধ্যমে আসুক। তাদের (ছাত্রদল) ক্যাম্পাসের বাইরে কর্মসূচি পালন করতে বললেও তারা ক্যাম্পাসে গিয়েছিল।’
ছাত্রদলের আহত নেতাদের অবস্থা ও বক্তব্য: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দেলোয়ারের ডান হাত ভেঙে গেছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কেটে গেছে বাঁ-হাতের একটি আঙুল। শরীরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। দেলোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আরাফাতকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। এ সময় ছাত্রলীগের ছেলেরা পাইপ, চায়নিজ কুড়াল, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে আমার ওপর হামলা চালায়।’
হামলায় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরাফাত রেজার কাঁধের বাম পাশ গুরুতর জখম হয়েছে। পিঠে রয়েছে ধারালো অস্ত্রের হালকা আঘাতের চিহ্ন। আরাফাত বলেন, কর্মসূচি পালন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য সোমবার তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে দুটি আবেদন করেন। কর্মসূচির কথা জানতে পেরে ছাত্রলীগ নৃশংস হামলা চালায়। তাদের সহযোগিতা করেছে পুলিশ। ২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছাত্রদলের অপর তিন নেতা দুই হাতে আঘাত পেয়েছেন।
বড় ঘটনা ঘটেনি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদল আবেদন করে তাদের কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা চেয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯ সাল থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমি তাদের ক্যাম্পাসের বাইরে কর্মসূচি পালন করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা শোনেনি।’
ছাত্রলীগের হামলার ব্যাপারে প্রক্টর বলেন, ‘এত বড় ক্যাম্পাসে একটু ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটতেই পারে। বড় ঘটনার আশঙ্কায় আমি তো পুলিশ মোতায়েন করেছি। আমার জানামতে, বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
এর আগে গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মীকে বেধড়ক পেটান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

No comments

Powered by Blogger.